• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
সংকটে ডেঙ্গু পরীক্ষা

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

সংকটে ডেঙ্গু পরীক্ষা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৬ আগস্ট ২০১৯

বাংলাদেশে সাধারণত একটি ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটের পাইকারি মূল্য ৮০ টাকা  থেকে ১০০ টাকার মধ্যে। কিন্তু দেশে এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মহামারীর পর্যায়ে ছড়িয়ে পড়ায় এক-শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী একেকটি কিটের মূল্য রাখছেন ১৫০ টাকা থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত।

রাজধানীর তোপখানা রোডের বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন মার্কেটে ঢাকার বাইরের এক বেসরকারি ক্লিনিকের মালিক ডেঙ্গু শনাক্তের কিট ও রি-এজেন্ট কিনতে গিয়ে পাচ্ছিলেন না। পরে একটি মাধ্যমে জানতে পারেন, এক দোকানে কিট আছে। তবে নিতে চাইলে প্রতি কিটের জন্য অতিরিক্ত ৫০ টাকা করে দিতে হবে। পরে বাধ্য হয়েই চড়া দামে ডেঙ্গু শনাক্তের এসব কিট নিতে হয়েছে ওই ক্লিনিক মালিককে। আশি বা একশ টাকার এসব কিটের পাইকারি মূল্য রাখা হয়েছে ১৫০ টাকা করে।

ওই মালিক নিজের পরিচয় ও কোন দোকান থেকে এসব কিট কিনেছে সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তার বক্তব্য, ‘দাম চড়া হলেও পেয়েছি, এটাই বড় কথা। গণমাধ্যমে নাম-পরিচয় প্রকাশ হলে, পরেরবার হয়তো আমাকে আর দেবে না।’

বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন মার্কেটে ‘মা এন্টারপ্রাইজ’ নামের এক দোকানের বিক্রেতা জানান, তার কাছে এসডি রেপিড টেস্ট নামের একটি কিট আছে। কিন্তু দাম অনেক বেশি। একশটি নিলে রাখতে পারবেন ৩৬০ টাকা। আর একশটির বেশি নিলে ৩৫০ করে রাখতে পারবেন।

আরেক বিক্রেতা জানান, এই কিটটি কোরিয়ান। যে কারণে এর দাম বাজারে থাকা অন্যগুলোর তুলনায় বেশি। সাধারণ কিটগুলো এখন কত করে বিক্রি হচ্ছে-জানতে চাইলে এই দোকানি বলেন, ‘যেগুলোর দাম একশ বা ১২০ টাকা, সেগুলো দুইশ বা ২২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।’

ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ধারণা করা হচ্ছে চলতি বছরে রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গুজ্বরের প্রকোপ বাড়ায় জ্বর হলেই হাসপাতালে গিয়ে ডেঙ্গু আক্রান্ত কি না সবাই নিশ্চিত হতে চেষ্টা করছেন। এ কারণে অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে পরীক্ষার সংখ্যা।

একটি পরিসংখ্যান দিলেই বোঝা যায় আতঙ্ক কী ধরনের। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যত মানুষের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে, তার ১০ থেকে ২০ গুণ মানুষ পরীক্ষা করিয়েছেন রক্ত। বেসরকারি হাসপাতালেও যত মানুষের ডেঙ্গু ধরা পড়েছে, তার চেয়েও তিন থেকে পাঁচ গুণ মানুষ পরীক্ষা করিয়েছেন রক্ত।

ডেঙ্গু পরীক্ষা করতে বেশ কিছু রি-এজেন্ট এবং কিট দরকার পড়ে। আর স্বাভাবিকের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি রক্ত পরীক্ষা করাতে হচ্ছে বলে বেড়ে গেছে এই কিট ও রি-এজেন্টের চাহিদা। পাইকারি দোকানগুলো কুলিয়ে উঠতে পারছে না। এরই মধ্যে দেশের মজুত প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। কিন্তু বেসরকারি পর্যায়ে নতুন করে আমদানির বড় চালান এখনো আসেনি। সরকারি উদ্যোগে কিট আমদানি হলেও সেগুলো কেবল সরকারি হাসপাতালে দেওয়া হচ্ছে। ফলে সংকটে পড়ে যাচ্ছে বেসরকারি চিকিৎসালয়।

এই পরিস্থিতিতে আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতারা সুযোগ দিচ্ছেন। যার কাছে মজুত আছে, তাদের কেউ দুই থেকে চার গুণ বেশি দাম হাঁকছেন। এর মধ্যে সরকার রক্ত পরীক্ষার সর্বোচ্চ ফি বেঁধে দেওয়ায় জরিমানার ভয়ে বেশি নিতে পারছে না। ফলে কিছু বেসরকারি হাসপাতাল ডেঙ্গু টেস্ট বন্ধ করে দিয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মণ্ডল বলেন, ‘কিটের মূল্য বেশি রাখার অনেক খবর আমাদের কাছে এসেছে। তবে সুনির্দিষ্ট প্রমাণ পেলে আমরা এসব বিষয়ে পদক্ষেপে নিতে পারি। দুঃখজনক হলো, যারা এসব কিট কিনে নিয়ে যান তারাও এই বিষয়ে কোনো অভিযোগ করতে চান না। এমনকি তাদের কাছে জানতে চাইলেও অভিযোগ করনে না। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে আমাদের কাজগুলো সহজ হতো। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারতাম।’

তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা নানা সোর্স থেকে এসব বিষয়ে খোঁজখবর রাখছি। অভিযানও অব্যাহত আছে।’ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশেনের সার্জিক্যাল মার্কেটের ব্যবসায়ী তানভীর বলেন, ‘এখন এসব কিট সবার স্টকে নেই। যাদের আছে তারা প্রতিটাতে কিছুটা বেশি দামে বিক্রি করছে। আগে যে কিটের দাম ছিল একশ টাকা এখন সেটা বিক্রি হচ্ছে একশ পঞ্চাশ টাকায়।’ অতিরিক্ত মূল্য রাখার কারণ জানতে চাইলে এই ব্যবসায়ী বলেন, ‘এখন অনেকেই নতুন করে এসব প্রোডাক্ট আনছেন সেক্ষেত্রে বাই এয়ারে আনতে খরচ বেশি হচ্ছে যে কারণে বেশি মূল্য নিচ্ছে।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads