• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
কূটনীতিতে নতুন আশাবাদ

ফাইল ছবি

জাতীয়

তিস্তার পানি বণ্টন

কূটনীতিতে নতুন আশাবাদ

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০৮ আগস্ট ২০১৯

তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে আবার নতুন আশাবাদ জন্মেছে। প্রস্তাবিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে নতুন উদ্যোগে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের কূটনীতি। দীর্ঘ ৯ বছর ধরে বন্ধ থাকার পর দুই দেশের পানিসম্পদ সচিবরা অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের সহযোগিতা নিয়ে আলোচনায় বসতে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগামী অক্টোবরে ভারত সফরের আগে তিস্তা চুক্তির বিষয়ে নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে ভারত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র বাংলাদেশকে বার্তা দিতে চায়। বাংলাদেশও দীর্ঘদিন ধরে চলমান পানি বণ্টনের বিষয়ে আলোচনায় অগ্রগতি দেখতে চায় বলে বাংলাদেশের খবরকে জানায় দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্র।

ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন সফরে ভারত ‘চমক’ দিতে চায় বাংলাদেশকে। তার সফরের আগে দুই দেশের মন্ত্রী ও সচিব পর্যায়ে একাধিক বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। চলতি মাসেই ঢাকায় আসছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ১৬ সদস্যের প্রতিনিধিদল নিয়ে এক সফরে গত মঙগলবার ভারত পৌঁছেছেন। দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে বাংলাদেশ ও ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ের সপ্তম বৈঠক। এ সফরে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহর সঙ্গে বৈঠক করবেন আসাদুজ্জামান খান। বৈঠকে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তিও আলোচনায় স্থান পাবে বলে জানায় কূটনৈতিক সূত্র।

সূত্র বলছে, আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের সহযোগিতা নিয়ে বৈঠক। দীর্ঘ ৯ বছর পর দুই দেশের পানিসম্পদ সচিবরা এ বৈঠকে বসতে যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফর সামনে রেখে পানি বণ্টন চুক্তিবিষয়ক কূটনৈতিক উদ্যোগ এগিয়ে নিতে এ বৈঠক হচ্ছে। বিশেষ করে ২০১৭ সালের এপ্রিলে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকে অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছিল, শেখ হাসিনার সফরের আগে সেগুলোর পর্যালোচনা করা হবে বৈঠকে। এর আগে ২০১১ সালের জুনে দিল্লিতে সর্বশেষ এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

অভিন্ন নদ-নদীর পানি ভাগাভাগিসহ দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্য আগামী অক্টোবরে ভারত সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রতিবেশী দুই দেশের ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর পানি ভাগাভাগির বিষয়টিকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় উঠে আসবে। গত রোববার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানান। এ সময় তিনি উল্লেখ করেন, চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের দিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বাংলাদেশে আসবেন। সে সময়ই শেখ হাসিনার সফরসূচি ঠিক করা হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) চলতি বছর টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করায় তিস্তাসহ অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে নতুন আশাবাদ জন্ম নেয় দুই দেশে। বিশেষ করে প্রস্তাবিত তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি মোদি সরকারের আমলেই হবে বলে বাংলাদেশের সরকারের কাছে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হওয়ায় এবং দুই দেশের সরকারের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় অবস্থান করায় নতুন আশাবাদের জন্ম হয় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। দ্বিতীয় মেয়াদে বিজেপি ক্ষমতায় আসায় ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের অমীমাংসিত বিভিন্ন বিষয়ের সুরাহার পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে যেসব দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে সহযোগিতা চলমান আছে, সেগুলোর ধারাবাহিকতাও চলতে থাকবে বলে আশাবাদী আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের সরকার।

কূটনৈতিক সূত্রের মতে, তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তি মোদি সরকারের আমলেই হবে বলে বাংলাদেশের সরকারকে একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দেয় মোদির সরকার। গত বছরের এপ্রিলে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদল ভারত সফরে গেলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে তাদের আশ্বাস দেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলের প্রধান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দেশে ফিরে গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান। মোদির গত সরকারের আমলে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিরোধিতার কারণে তিস্তা চুক্তি সই হয়নি। এবার মোদির সরকার প্রথম দফার চেয়ে বড় ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার গঠন করেছে। পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি অতীতের চেয়ে গত লোকসভা নির্বাচনে সাফল্যের দেখা পেয়েছে। এ পরিস্থিতিতে তিস্তা নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, গত এক দশকে বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এমন এক উচ্চতায় পৌঁছেছে, যেখানে সুসম্পর্ক রাখার ব্যাপারে দুই দেশেই বড় পরিসরে মতৈক্য সৃষ্টি হয়েছে। রাজনৈতিক দল হিসেবেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্ক আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সময় থেকেই। মুক্তিযুদ্ধের পর বিভিন্ন সময় অন্য সরকারের আমলে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে শিথিলতা এলেও ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে সম্পর্কে আমূল পরিবর্তন আসে। গত দশ বছরের বেশি সময় ধরে দুই দেশের মধ্যেকার কূটনৈতিক সম্পর্ক বিশেষ উষ্ণতায় অনন্য উচ্চতায় আসীন।

কূটনীতিকরা মনে করেন, সম্পর্কের ধারাবাহিকতা রক্ষায় দুই দেশের ক্ষমতাসীন দলই এখন সচেষ্ট। পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস দুই দেশের সম্পর্কের ভিত্তি। গত দশ বছরে দুই দেশের সমুদ্রসীমা নির্ধারণ, ছিটমহল বিনিময়, ভারতকে সড়কপথে ট্রানজিট দেওয়া, চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া, দুই দেশের প্রতিরক্ষা চুক্তি ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দমনে বাংলাদেশের আন্তরিক সহায়তা-এসব কিছুতে অগ্রগতি হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads