• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
খাদ্য সংকটে ঘরবাড়িতে হানা দিচ্ছে বানর

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

খাদ্য সংকটে ঘরবাড়িতে হানা দিচ্ছে বানর

  • মো. জাকির হোসেন,  মাদারীপুর
  • প্রকাশিত ০৮ আগস্ট ২০১৯

বানরদের খাবার বন্ধ করে দেওয়ায় ক্ষুধার তাড়নায় তারা দলবেঁধে ঘরবাড়িতে হানা দিচ্ছে। ঘরের ভেতর প্রবেশ করে খাদ্যসামগ্রী নিয়ে যাচ্ছে। গাছের ফলফলাদি ধ্বংস করছে, স্কুলগামী শিশুরাও তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তাদের টিফিনবক্স কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। হাটবাজার করে ফেরার পথে মানুষের হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে। বাধা দিলেই দলবেঁধে হামলা করছে।

মাদারীপুর জেলা পরিষদ ও বন বিভাগ থেকে বানরদের জন্য দেওয়া সব খাদ্য কর্মসূচি বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম খাদ্য সংকটে দুই সহস্রাধিক বানর এখন বেপরোয়া হয়ে মূল পৌর শহরে ঢুকে পড়েছে।

জেলা বন বিভাগে সূত্রে জানা গেছে, একসময় মাদারীপুরে ১০ সহস্রাধিক বানরের বসবাস ছিল। পঞ্চাশের দশকেও জেলা সদরের সর্বত্র দলবেঁধে বানরগুলো বিচরণ করত। তখন কুলপদ্মী হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বানরকে দেবতা মনে করে কলা, মোয়া, মুড়ি, চিড়া, খই, মুড়কি, বিস্কুট ও বিভিন্ন ফলমূল খেতে দিত। ধীরে ধীরে হিন্দু বসতি হ্রাস পাওয়ায় এবং বন উজাড় হতে থাকায় বানরগুলো পৌর এলাকায় প্রবেশ করতে শুরু করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বন্দরে বানর ছিল প্রায় সাড়ে সাত হাজার। তখন চরমুগরিয়া জেটিসির মাঠে বানরদের জন্য একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ওই সব এলাকা ক্রমাগতভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন বানররা খাদ্য সংকটে পড়ে। আশ্রয়হীন ও রোগাক্রান্ত বানরগুলো ক্ষীণকায় হয়ে মারা যেতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে ’৮০- ’৯০ দশকে বানরের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এরা তখন মারোয়াড়িদের জেটিসি, আদমজী, ইস্পাহানী, লতিফ বাওয়ানীসহ বিভিন্ন পাট কোম্পানির পরিত্যক্ত গুদাম, স্কুল-কলেজ, মানুষের বাড়িঘরে সানশেড, টিনের চালার নিচে অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে কোনো রকম থাকতে শুরু করে। ক্ষুধার তাড়নায় বানরগুলো এখন ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে মূল শহরে তাণ্ডব চালাচ্ছে। সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুরের তত্ত্বাবধানে একসময় এসব বানরের জন্য খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচি চালু ছিল। কিন্তু এ কর্মসূচি বেশি দিন চালু রাখা হয়নি।

মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা বলেন, ‘২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১২ লাখ ১৯ হাজার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৭৮ হাজার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬১ হাজার, এরপর দুই বছর বন বিভাগের বরাদ্দ বন্ধ থাকে। আবার ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দুই সহস্রাধিক বানরের জন্য খাদ্য বরাদ্দ ছিল। বর্তমানে বন বিভাগের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম খাদ্যাভাবে এসব বানর বেপরোয়া হয়ে মানুষের বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে।

বানরের অত্যাচারে শহরবাসী অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। রান্নাঘরে রান্না করার সময় লাঠি নিয়ে পাহারা দিতে হচ্ছে। ছোট ছোট মেলেমেয়েরা ঘর থেকে বের হয়ে একা চলাফেরা করতে পারছে না। সুযোগ পেলেই কামড় দিচ্ছে। ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। শহরের পাঠককান্দি, হরিকুমারিয়া, চরমুগরিয়া, খাগদি, পাকদি, থানতলী, পুরান বাজার, মাস্টার কলোনি, উকিলপাড়া, সরদার কলোনি ও নতুন শহর এলাকা এখন বানরের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। মাদারীপুর জেলা পরিষদের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেন, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটানা ৭ বছর বানরের খাদ্য কর্মসূচি চালু ছিল। প্রথমে ২০১০-১১ অর্থবছরে বরাদ্দ দেওয়া হয় ১ লাখ ৪ হাজার ৪০৬ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫১ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯৩ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬০ টাকা, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮০ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩০ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা। এরপর আর কোনো প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি। বর্তমানে বানরদের জন্য সর্বপ্রকার খাদ্য কর্মসূচি বন্ধ রয়েছে। খাদ্যের সন্ধানে এরা চরমুগরিয়া বন্দর থেকে দলে দলে মূল পৌর শহরে ঢুকে পড়ে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads