• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
‘রক্তের ঋণ জানবে দেশ’

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

মুজিব বর্ষ

‘রক্তের ঋণ জানবে দেশ’

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৫ আগস্ট ২০১৯

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০ ও ২০২১ সালকে ‘মুজিব বর্ষ’ হিসেবে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ উপলক্ষে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত বছরব্যাপী নানা অনুষ্ঠান ও কর্মসূচি পালন করা হবে দেশব্যাপী। এমনিতে প্রতি বছর জাতির জনকের জন্মদিন উপলক্ষে ১৭ মার্চ জাতীয় শিশু দিবস এবং ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নৃশংসভাবে হত্যার দিনটিকে স্মরণ করে জাতীয় শোক দিবস পালন করা হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বছরটি এমনভাবে উদযাপন করা হবে যাতে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ আরেকবার বঙ্গবন্ধুর অবদানকে গভীরভাবে স্মরণ করে। এজন্য শহর থেকে প্রান্তিক পর্যায়ের সব মানুষকে বিবেচনা করে সাজানো হবে অনুষ্ঠান। তুলে ধরা হবে বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণের কথা। বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম ও নতুন প্রজন্ম যারা তাদের কাছে বঙ্গবন্ধুর অবদান বিশেষভাবে তুলে ধরা হবে। মহীরুহসম ব্যক্তির জন্মশতবর্ষ মানে আরও বিশেষ কিছু অবশ্যই, যা ইতিহাসে চিরস্থায়ী দাগ রেখে যেতে সক্ষম হতে পারে।

জানা গেছে, সরকার এরই মধ্যে মুজিব বর্ষ উদযাপনে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করেছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে জাতীয় অধ্যাপক মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামকে। আর প্রধান সমন্বয়ক করা হয়েছে সাবেক মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরীকে। প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরাও রয়েছেন এ সংক্রান্ত কমিটিতে। গত ১৪ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তবে প্রয়োজনের তাগিদে কমিটিতে সদস্য অন্তর্ভুক্তকরণ করা হচ্ছে। বর্তমানে কমিটিতে সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্যরা, সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রী, শিক্ষাবিদ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, ইতিহাসবিদ, সাবেক ও বর্তমান আমলা, আইনজীবীসহ বিভিন্ন পেশার মানুষকে রাখা হয়েছে। আর পুরো কার্যক্রম সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে একটি অস্থায়ী কার্যলয় করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিউট কার্যালয়ে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিচ্ছে। 

জানতে চাইলে প্রধান সমন্বয়ক ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। এ কথা বলা মোটেও অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশকে বাদ দিয়ে যেমন বঙ্গবন্ধুকে চিন্তা করা যায় না, তেমনি বঙ্গবন্ধুকে বাদ দিলে অর্থহীন হয়ে পড়ে বাংলাদেশও। এ কথা তো ইতিহাসের অবিসংবাদী সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ বোধ করি অপূর্ণ ও অধরাই থেকে যেত। তাই মুজিব বর্ষের বছরব্যাপী কর্মসূচি ও অনুষ্ঠানমালা তেমনই জাঁকজমকপূর্ণ, আকর্ষণীয় ও আড়ম্বরপূর্ণ হবে। এর জন্য এখন যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়া শুরু হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের সব প্রোগ্রামে তরুণদের সম্পৃক্ত করা হবে। কারণ তারাই আগামীর বাংলাদেশ। সে বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। যার মাধ্যমে স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে জানবে। এক কথায়, আমাদের সব পরিকল্পনা তরুণদের নিয়ে।

প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের কাছে কীভাবে বঙ্গবন্ধুকে তুলে ধরা হবে জানতে চাইলে সাবেক এই মুখ্য সচিব বলেন, আমাদের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান ও মাঠ প্রশাসনকে সম্পৃক্ত করা হবে এই কাজে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনকে আমরা সঙ্গে নিয়ে কাজ করব। আমরা বঙ্গবন্ধুর রক্তের ঋণ জানাতে চাই দেশের তরুণদের তথা নতুন প্রজন্মকে।

জানা গেছে, মুজিব বর্ষ উপলক্ষে একটি থিম সং করা হবে। এরই মধ্যে গানের খসড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এর থেকে বাছাই করে চলতি মাসেই এটি চূড়ান্ত করা হতে পারে।

কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী বলেন, আমরা পুরো আয়োজন চালিয়ে নিতে কয়েকটি উপকমিটি গঠন করেছি। তারাও আলাদাভাবে বিভিন্ন সময় বৈঠক করছে। তা ছাড়া জাতীয় কমিটি বৈঠক করে চলছে।

সূত্রে জানা গেছে, শুধু শহর নয়, পুরো আয়োজনের লক্ষ্য থাকবে দেশের প্রান্তিক মানুষ। তাদের কাছে জাতির পিতার অবদান সঠিকভাবে তুলে ধরাই হবে প্রধান লক্ষ্য। এজন্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা থাকবে। সব ধরনের গণমাধ্যমে থাকবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এছাড়া বিশেষ কিছু প্রকাশনাও করার কাজ চলছে। তবে সব আয়োজনের চূড়ান্ত খসড়া উপস্থাপন করা হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। তিনি সব দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আর কেন্দ্রীয়ভাবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হতে পারে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। আর একটি বিশেষ ওয়েবসাইট তৈরির কাজ করছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের এটুআই প্রকল্প। যেখানে সব অনুষ্ঠান ও তথ্য আপডেট করা হবে। সামজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সব ব্যবস্থায়ও আয়োজন তুলে ধরা হবে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তান সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের একটি সংকলন প্রকাশ করার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। ৪৭টি ফাইলের ৩০ হাজার পাতাকে নয় হাজার পাতায় নিয়ে আসা হচ্ছে। এটা ১৪টি খণ্ডের একটি সংকলন হবে। এই রিপোর্ট পড়লে দেশের ইতিহাস জানার কিছু বাকি থাকে না। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা নিয়েও কয়েকটি খণ্ডের একটি সংকলন হচ্ছে। বাংলা ও ইংরেজিতে প্রকাশিত হবে ‘বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিকথা’।

বিশ্লেষকরা বলছেন, আজীবন সংগ্রামী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে শিক্ষা আন্দোলন, ঐতিহাসিক ছয় দফা আন্দোলন, সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, সর্বোপরি সত্তরের নির্বাচনে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। ৭ মার্চ ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে দাঁড়িয়ে তিনি যে ভাষণ দেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তা হয়ে আছে এক চির অম্লান মাইলফলক। বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ যা বিশ্বে অন্যতম ভাষণ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। ইউনেস্কো কর্তৃক কেবল একটি ভাষণ ‘ওয়ার্ল্ডস ডুকমেন্টারি হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায়।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম নেন শেখ মুজিবুর রহমান। কালক্রমে তার হাত ধরেই ১৯৭১ সালে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নেয় বাংলাদেশ। আসছে ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মের শত বছর পূর্ণ হবে। আর ঠিক পরের বছর ২৬ মার্চ বাংলাদেশ উদযাপন করবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী।

জানা গেছে, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগগুলো মুজিব বর্ষ উদযাপনে আলাদাভাবে কমিটি গঠন করে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিতে শুরু করেছে। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুজিব বর্ষে ১৫ হাজার মুক্তিযোদ্ধা নতুন বাড়ি পাবেন। আর বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মীরা মুজিব বর্ষে প্রতিদিন এক ঘণ্টা বেশি অফিস করতে যাচ্ছে। সড়ক বিভাগ এই বছরটি ঘিরে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কার্যক্রম হাতে নিচ্ছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

অপরদিকে এই বছরের প্রতি মাসের ১৭ তারিখে বিমান চলাচলে থাকতে পারে বিশেষ ছাড়। মুজিব বর্ষ উদযাপনে ফুটবল জগতের বড় তারকা ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে ঢাকায় আনা হতে পারে। বাংলাদেশ ফুডবল ফেডারেশন এ ব্যাপারে কাজ করবে। 

বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালের জুলাই মাসে এ ব্যাপারে বলেন, আমার ইচ্ছা, আমরা একদম বছরব্যাপী, ২০২০ থেকে ২০২১ সাল- এই এক বছর বর্ষটাকে মুজিব বর্ষ হিসেবে পালন করব। এই কর্মসূচি সম্পন্ন হবে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ২০২১ সালের ২৬ মার্চ। আয়োজনের বিস্তৃতি থাকবে দেশের সব ওয়ার্ড পর্যন্ত।

জানা গেছে, দলীয়ভাবে বছরব্যাপী এই কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগের সব সংগঠনকে সম্পৃক্ত করা হবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads