রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪৮ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৪৮ হাজার ২২০ জন। এর মধ্যে চলতি মাসে ২৯ হাজার ৮১৯ জন আক্রান্ত হন।
সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ৪০ জন বলা হলেও বেসরকারি হিসাবে সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই জুন থেকে গতকাল পর্যন্ত ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. নাসির উদ্দিন জানান, গত বুধবার সকাল থেকে গতকাল সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এই হাসপাতালে সর্বমোট ৬০১ জন রোগী ভর্তি আছেন। প্রতিদিনই রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। প্রতিদিনই কমবেশি কেউ না কেউ এ রোগে আক্রান্ত ভর্তি হচ্ছেন। তবে আগের তুলনায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা কিছুটা হলেও কমছে।
তিনি আরো জানান, জুন মাস থেকে গতকাল পর্যন্ত ঢামেকে ২৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী মারা গেছেন। তবে তাদের নমুনা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। রিপোর্ট পেলে জানা যাবে তারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে না অন্য কোনো রোগ ছিল তাদের।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম সূত্রে জানা গেছে, ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৪০ হাজার ৬৭০ জন। বর্তমানে সারা দেশে ভর্তি রয়েছেন ৭ হাজার ৫৭০ জন।
গত বুধবার সকাল ৮টা থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সময়ে মশাবাহিত এ রোগে আক্রান্ত হয়ে ১ হাজার ৯২৯ জন দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮১১ জন নতুন রোগী, ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ১ হাজার ১১৮ জন। গতকাল ঢাকায় নতুন রোগী ভর্তির সংখ্যা ছিল ৭৫৫ জন, আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছিলেন ১ হাজার ১২৫ জন।
রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের মধ্যে ঢাকা মেডিকেলে ১৩১ জন, মিটফোর্ডে ৬৭, ঢাকা শিশু হাসপাতালে ২৫, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ৬৬, বিএসএমএমইউতে ২১, পুলিশ হাসপাতাল রাজারবাগে ১৩, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০৯, বিজিবি হাসপাতাল পিলখানা ঢাকায় ৫, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ২৩, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৬৫ ও বেসরকারি অন্যান্য হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ২৮৬ জন ভর্তি হয়েছেন।
এছাড়া বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে মোট আক্রান্ত ১ হাজার ১১৮ জনের মধ্যে ঢাকা শহর ব্যতীত ঢাকা বিভাগে ২৯৫ জন, চট্টগ্রামে ২০৯, খুলনায় ১৫১, রংপুরে ৮১, রাজশাহীতে ১৩০, বরিশালে ১৭১, সিলেটে ২৫ ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে ৫৬ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হন।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টারের সহকারী পরিচালক আয়শা আক্তার বলেন, ঈদের দ্বিতীয় দিনের তুলনায় তৃতীয় দিনে নতুন রোগী ৪৯ জন বেড়েছে। তবে ঢাকার বাইরে আজ নতুন রোগী কিছুটা কমেছে। অগাস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়বে, এমনটি আগে বলেছি আমরা। আরো ৭ থেকে ৯ দিন দেখার পর আমরা বলতে পারব, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বাড়বে না কমবে। তবে আয়শা আক্তারের ধারণা, জনসাধারণ আগের চেয়ে সতর্ক হওয়ায় ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ক্রমেই কমে আসবে।
