• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯
পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গ্রামীণ রূপান্তরে দৃষ্টি

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গ্রামীণ রূপান্তরে দৃষ্টি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ আগস্ট ২০১৯

অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে গ্রামীণ রূপান্তর। অর্থাৎ শহরের সুবিধা পৌঁছানোর মাধ্যমে গ্রামীণ অর্থনীতির বৈচিত্রায়ণ করা হবে। ২০২১ সাল থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নের জন্য এই পরিকল্পনার যে ধারণাপত্রটি তৈরি করা হয়েছে, সেখানে এই বিষয়গুলো উঠে এসেছে। সম্প্রতি ধারণাপত্রটি তৈরি করেছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এটি শিগগির প্রধানমনন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখিয়ে চূড়ান্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান অঙ্গীকার ছিল, ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’। অর্থাৎ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ। চলমান গ্রামীণ রূপান্তরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, গ্রামীণ আয়ের বৈচিত্র্যময় উৎস। রেমিট্যান্স এবং অকৃষি খাত থেকে প্রাপ্ত আয় এই রূপান্তরের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। তবু জাতীয় শ্রমশক্তির ৪০ শতাংশ এখনো কৃষি খাতের সঙ্গে জড়িত; যা গ্রামীণ আয় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর প্রধান উৎস হিসেবে রয়ে গেছে। ফলে জাতীয় উৎপাদন কাঠামোয় প্রয়োজনীয় কাঠামোগত রূপান্তরের অংশ হিসেবে কৃষির আপেক্ষিক অবদান কমবে।

এদিকে জিইডির ধারণা পত্রে বলা হয়েছে, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় বৈচিত্র্যের মাধ্যমে কৃষির উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নগরায়ণের কারণে জমির পরিমাণ ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। তাই গবেষণা, সম্প্রসারণ ও কৃষি খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে ভূমির উৎপাদনশীলতার ওপর আরো গুরুত্ব দেওয়া দরকার। এ ছাড়া খামারভিত্তিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য বেশি দামের পণ্য উৎপাদনের ওপরও জোর দেওয়া প্রয়োজন।

এতে আরো বলা হয়, ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ খুব ভালো করেছে এবং আরো ভালো করার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু দেশীয় চাহিদা ও কৃষি জমির অপ্রতুলতার কারণে রপ্তানি বাজার প্রসারিত না হওয়া পর্যন্ত এটি কৃষি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একক হাতিয়ার হতে পারবে না। শস্য খাতের বাইরে মৎস্য খাতে সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে। যা এখন কর্মসংস্থান, আয় ও রপ্তানির একটি অন্যতম বড় উৎস। এটি একটি কৌশলগত পরিবর্তন; যা পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় অধিকতর গুরুত্ব দেওয়া হবে এবং বিশেষ করে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের ওপর বেশি জোর দেওয়া হবে।

ধারণাপত্রে বলা হয়েছে, গৃহপালিত পশু, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্যের দেশীয় চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই প্রক্রিয়াজাত খাবারের দাম বাড়ছে। এ ক্ষেত্রে সরবরাহের সীমাবদ্ধতা চিহ্নিত করে আরো কার্যকর নীতিমালা গ্রহণের উদ্যোগ নিতে হবে। পরিকল্পনায় বৈচিত্র্যময় চ্যালেঞ্জের ওপর অধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। অধিক উৎপাদনশীল খামার, কৃষি থেকে উচ্চ আয় কৃষককের প্রকৃত মজুরি বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে। এ ছাড়া তা দারিদ্র্য দূরীকরণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এবং আয় বৈষম্য কমাতে সাহায্যে করবে।

বৈদেশিক মুদ্রা আয়, আন্তজেলা পরিবহন সংযোগ, মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ও তথ্যপ্রযুক্তি সেবার মান বৃদ্ধির ফলে গ্রামীণ অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছে। অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গ্রামীণ উন্নয়নের এই মাধ্যমগুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হবে বলেও ধারণাপত্রে উল্লেখ করা হয়।

জিইডির সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি তৈরি করা হবে দুটি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে। এগুলো হচ্ছে, ত্বরান্বিত সমৃদ্ধি এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি। ইতোমধ্যেই উভয় ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। দ্রুত প্রবৃদ্ধি মাথাপিছু আয়ের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধিতে সহায়তা করেছে। নগর ও গ্রামাঞ্চল উভয় ক্ষেত্রেই আয় বেড়েছে। রেমিট্যান্সের ব্যাপক প্রবাহের পাশাপাশি বাণিজ্য, পরিবহন, স্বাস্থ্য ও শিক্ষাসহ বিভিন্ন সেবা খাতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অনেক গ্রামেই অকৃষি খাতে কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে কৃষি কর্মসংস্থান দিন দিন কমে যাচ্ছে। কৃষি শ্রমিকদের মজুরি আগের তুলনায় বেড়েছে। এ ছাড়া ক্রমবর্ধমান আয় বাড়ার কারণে গ্রামীণ রূপান্তর চলমান রয়েছে।

ড. আলম আরো বলেন, আধুনিক পরিবহন ও তথ্য প্রযুক্তিসেবা গ্রাম এবং নগরের মধ্যে ব্যবধান কমাতে সাহায্য করছে। রূপান্তরের এই গতিকে আরো ত্বরান্বিত করার পাশাপাশি টেকসই করা হবে অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।

বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, গ্রামাঞ্চল, দুর্গম এলাকায় নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও হাইজিনের (ওয়াশ) চাহিদা মেটানোর লক্ষ্যে জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি এবং এসডিজি অভীষ্ট লক্ষ পূরণের জন্য অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads