• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮
প্রান্তিক পর্যায়ে যাচ্ছে আইসিইউ সেবা

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

প্রান্তিক পর্যায়ে যাচ্ছে আইসিইউ সেবা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২১ আগস্ট ২০১৯

প্রান্তিক পর্যায়ে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বাড়াতে যাচ্ছে সরকার। মূূলত দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের সাধারণ মানুষকে আরো সহজে ও কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা দিতে এই প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। প্রকল্পের অংশ হিসেবে সারা দেশের জেলা ও গুরুত্বপূর্ণ উপজেলা পর্যায়ে ৫০০ আইসিইউ স্থাপন করা হবে। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন করতে চাইলেও জনবল সংকটের কারণে কিছুটা ধীরে চলো নীতিতে পথ চলতে হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।  

জানতে চাইলে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে সারা দেশে ৫০০ আইসিইউ গড়ে তুলতে এরই মধ্যে কাজ শুরু করেছি। আমাদের পরিকল্পনা ছিল চলতি বছরই এটি বাস্তবায়ন করা যাবে, তবে স্বাস্থ্য খাতে জনবল সংকট রয়েছে। এর থেকে বড় সমস্যা দক্ষ জনবল ঘাটতি। আমরা জনবল সমস্যা সমাধানে কাজ করছি। ফলে দ্রুত প্রান্তিক পর্যায়ে ৫০০ আইসিইউ স্থাপন করার বিশেষ উদ্যোগ থাকলেও কিছুটা আস্তে চলো নীতিতে যেতে হচ্ছে আমাদের।  

তিনি আরো বলেন, আমরা চেয়েছিলাম চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সবগুলো আইসিইউ স্থাপনের কাজ শেষ করতে। কিন্তু তা করা যাচ্ছে না। দেশব্যাপী আইসিইউ সেবা নিয়ে যেতে পারলে উন্নত চিকিৎসাসেবা আরো সহজ হবে। সাধারণ মানুষ আরো কম খরচে ও হয়রানি ছাড়াই সেবা পাবেন। ঢাকা ও বড় শহরে আসতে হবে না। 

সূত্র বলছে, অপেক্ষাকৃত জটিল রোগীদের আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়ে থাকে। বেসরকারি পর্যায়ে আইসিইউ ব্যয় অনেক বেশি। কিন্তু সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই সেবার পরিধি এখনো বাড়ানো যায়নি। ফলে বাধ্য হয়ে সাধারণ মানুষকে বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে যেতে হচ্ছে। এতে অনেক পরিবার নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় এই সেবা বাড়লে সেখান থেকে রক্ষা পাবে অনেক পরিবার। জানা যায়, বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ কেন্দ্রে প্রতিদিন গড়ে ৪০-৫০ হাজার টাকার মতো ব্যয় করতে হয়। এই পরিমাণ অর্থ জোগান দেওয়া দেশের সাধারণ মানুষের পক্ষে ভীষণ কষ্টকর। 

স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সূত্র জানিয়েছে, দেশের প্রতিটি মানুষের জন্য স্বাস্থ্য ও পুষ্টিসেবা প্রাপ্তি উন্নত করা হবে। এক বছরের নিচে ও ৬৫ বছরের ওপরে সবাইকে বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হবে। সব বিভাগীয় শহরে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। চালু করা হবে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে হার্ট, ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা। এছাড়া প্রতিটি বিভাগীয় শহরে অন্তত ১০০ শয্যার স্বয়ংসম্পূর্ণ ক্যানসার ও কিডনি চিকিৎসা-ব্যবস্থা চালু করা হবে।  

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার চায়, সরকার সব ধরনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র এবং হাসপাতালগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি প্রচলন করে স্বাস্থ্যসেবা-ব্যবস্থাকে আরো নির্ভুল ও জনবান্ধব করা। অনলাইনে দেশ-বিদেশ থেকে বিশেষায়িত চিকিৎসকের সেবা পাওয়া যাবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর ভবনসহ সব সুবিধা পর্যায়ক্রমে আধুনিকীকরণ করা হবে। 

আসাদুল ইসলাম বলেন, সবার জন্য স্বাস্থ্য, পুষ্টিসেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত করা সরকারের ঘোষিত নীতি। রূপকল্প-২০২১ ও রূপকল্প-২০৪১-এর মাধ্যমে সরকার দেশকে এমন এক জায়গায় নিতে চায়, যেখানে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা এবং পর্যাপ্ত পুষ্টি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সব নাগরিক উন্নত জীবন উপভোগ করতে পারে। 

জানা গেছে, দেশব্যাপী জরুরি ও প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে ১৯৯৬-২০০১ পর্বে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রতি ছয় হাজার জনসংখ্যার জন্য একটি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে চার হাজার স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে গ্রামীণ জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা এবং ৪৫ প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হয়। মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি হাজার জীবিত জন্মে ৩.৪৮ থেকে ১.৭২ এবং শিশুমৃত্যুর হার ৪১ থেকে ২৪ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে। আস্তে আস্তে মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ুষ্কাল বাড়ছে। ৫৩টি উপজেলায় মাতৃ-ভাউচার কর্মসূচি চালু করা হয়েছে এবং পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি উপজেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা কর্মসূচি বীমা চালু করা হয়েছে।  

প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রসবকালীন সেবা প্রবর্তন করা হয়েছে। প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মিডওয়াইফ পদায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সারা দেশে আধুনিক কল সেন্টার ‘স্বাস্থ্য বাতায়ন’ চালু করা হয়েছে। মোবাইল ফোনে ও অনলাইনে চিকিৎসাসেবা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে আরো উন্নত করার প্রচেষ্টা নেওয়া হচ্ছে। ৬০টি হাসপাতালে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করা হয়েছে। অটিস্টিক শিশুদের সুরক্ষায় ২২টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান নিশ্চিত করার জন্য ২০৩টি অ্যাডলেসেন্ট ফ্রেন্ডলি হেলথ কর্নার স্থাপন এবং ১৪টি জেলায় ১৮৯টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্যসেবা চালু করা হয়েছে। তিন হাজার ১৩১টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের মধ্যে দুই হাজার ২০০টিতে প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা নিরাপদ প্রসবসেবা চালু করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানের ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট শেখ হাসিনা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি অ্যান্ড হসপিটাল নির্মাণ করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads