• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
ইচ্ছেমতো লিয়েন বন্ধ করা হচ্ছে

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ইচ্ছেমতো লিয়েন বন্ধ করা হচ্ছে

সরকারি চাকরিতে বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে লিয়েন ছুটির নীতিমালা

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৩ আগস্ট ২০১৯

সরকারি চাকরিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার। যার আওতায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিদেশি সংস্থায় চাকরির জন্য লিয়েন ছুটির শর্ত কঠোর করা হচ্ছে। এ জন্য একটি বিশদ নীতিমালা করা হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ-সংক্রান্ত খসড়া তৈরির কাজ করছে।

জানা গেছে, নীতিমালার আওতায় সব ধরনের সরকারি চাকরিজীবীকে লিয়েন ছুটি এক ছাতার নিচে আসবে। আলাদাভাবে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলোর জন্য কোনো লিয়েন ছুটির বিধান থাকবে না। একটি নির্ধারিত নীতিতে চলতে হবে সবাইকে।

জানা গেছে, বর্তমানে জনপ্রশাসনসহ সরকারের সব সংস্থার লিয়েন ছুটির আলাদা নীতি রয়েছে। তবে বিশদ নীতিমালা নেই। নীতিমালার ঘাটতি থাকায় ব্যাপক বিশৃঙ্খলা চলছে। যে যার মতো সুযোগ পেয়ে লিয়েন ছুটি নিচ্ছে। অনেকে বছরের পর বছর লিয়েন নিয়ে বিদেশে অবস্থান করছেন। এমনকি অনেকে দেশে ফিরে না আসারও নজির রয়েছে।

জানতে চাইলে জনপ্রশাসন সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন, আমরা একটি বিস্তারিত নীতিমালা তৈরির কাজ করছি। এটি একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে। খসড়া চূড়ান্ত করতে মন্ত্রিসভার বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। সেখানে অনুমোদন পেলে তারপর থেকে কার্যকর হবে।

কর্মকর্তারা বলছেন, লিয়েন ছুটি পৃথিবীর সব দেশেই কার্যকর। আমাদের দেশেও এর সুযোগ থাকতে হবে। আন্তর্জাতিক মানের কোনো সংস্থা বাংলাদেশের মেধাবী কর্মকর্তাদের নিয়োগ দিলে তাতে আমাদের দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে সব হতে হবে শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে। লিয়েন সংরক্ষণ বা লিয়েন ছুটি নিয়ে কোনো কর্মকর্তা বিদেশি সংস্থায় চাকরি করে পরে আবার আগের সরকারি চাকরিতে যোগ দিতে পারেন।

জানা গেছে, প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগ বাড়ছে। ২০১৮ সালে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন কারণে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। এসব অভিযোগ প্রমাণ হওয়ায় অনেকে সাজাপ্রাপ্তও হয়েছেন। প্রশাসন ক্যাডারে বর্তমানে চার হাজার ৯০০ জন কাজ করছেন। এমন পরিস্থিতিতে সুশাসন নিশ্চিত করতে মাঠ প্রশাসনে ১৩টি নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। 

রাজনৈতিক সরকারের হয়ে সাধারণ মানুষের কাছে সেবা পৌঁছে দেয় জনপ্রশাসনের কর্মকর্তারা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, সংস্থা থেকে শুরু করে মাঠ প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিবরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে, উপসচিবরা জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। আর অতিরিক্ত সচিবরা নিয়োগ পেয়ে থাকেন বিভাগীয় কমিশনার হিসেবে। সরকারের গৃহীত সিদ্ধান্ত ও সেবাগুলো তারা জনগণের দোড়গোড়ায় পৌঁছে দিচ্ছে।

সূত্র বলছে, জনসেবা দিতে গিয়ে কিছু কিছু কর্মকর্তা তার শপথ লঙ্ঘন করছেন। আচরণবিধি ভাঙছেন। শৃঙ্খলা ভেঙে অভিযুক্ত হয়ে পড়ছেন। এসব ঘটছে অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে, আবার অনেক সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে। তবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাড়ছে সচেতনতা। শিক্ষার হারসহ দেশের অগ্রগতির কারণে মানুষ সেবা নিতে গিয়ে হয়রানি হলে অনেক সময় অভিযোগ আনছেন। তবে এখনো ঝামেলা এড়াতে হয়রানি হলেও বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলতে চান না সাধারণ মানুষ।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট হিসাবমতে, ২০১৮ সালে শৃঙ্খলাজনিত কারণে প্রশাসনের ৪০৭ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ অভিযোগ করেছেন। এসব অভিযোগের বেশির ভাগ সেবা পেতে হয়রানি-সংক্রান্ত। তবে এর বাইরে ঘুষ দাবি ও যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে। তবে সবগুলো অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। এসব অভিযোগে কারো কারো বিরুদ্ধে সাধারণ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ কর্মকর্তা পেয়েছেন সতর্কতামূলক চিঠি। অনেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। ২০১৭ সালে অভিযোগের সংখ্যা ছিল ৩৮৯টি।

সাবেক জনপ্রশাসন সচিব আলী ইমাম মজুমদার বাংলাদেশের খবরকে বলেন, মানুষ এখন আগের চেয়ে সচেতন। তার কাছে এখন অনেক পথ খোলা। তাছাড়া সরকারের মধ্যেও এক ধরনের সুশাসন প্রবণতা তৈরি হচ্ছে। প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে জবাবদিহিতা আনা গেলে মানুষ হয়রানিবিহীন সেবা পাবে।

টানা তৃতীয় মেয়াদে রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার চায়, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নে কোনো ধরনের দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা থাকবে না। বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণের নানা স্তর কঠোরভাবে সংকুচিত করা হবে। প্রশাসনের মনোভাব হবে নির্ধারিত নীতিমালা ও নির্বাহী নির্দেশাবলি বাস্তবায়ন। এর মাধ্যমে সরকার জনগণের আরো কাছাকাছি আসতে চায়।

রূপকল্প-২০২১ এবং ২০৪১-এর উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য অর্জনে একটি দক্ষ ও জবাবদিহিমূলক সেবামুখী প্রশাসন গড়ে তোলার লক্ষ্যে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। সরকারের প্রচেষ্টা, তথ্য প্রযুক্তির উৎকর্ষতা এবং আধুনিক প্রশিক্ষণের ফলে সরকারি দপ্তরে কাজের দক্ষতা ও পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে অহেতুক কালক্ষেপণ এবং কাজের জটিলতা কমিয়ে বাস্তবমুখী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য এই ধারাকে অগ্রসর করে নিতে হবে।

প্রস্তাবিত নীতিমালা মোতাবেক, একটানা বা বিচ্ছিন্নভাবে তারা সর্বোচ্চ পাঁচ বছর লিয়েনে ছুটি নিতে পারবেন। এর বেশি লিয়েনে থাকলে পাঁচ বছর পূর্তির দিন থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত হয়ে যাবেন। লিয়েন ছুটি শেষে কোনো কর্মকর্তা এক বছর সরকারি চাকরি না করে দ্বিতীয়বার এ ছুটিতে যেতে পারবেন না।

সূত্রগুলো বলছে, জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠনসহ যেকোনো আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সংস্থায় চাকরির জন্য সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এক দফায় পাঁচ বছর পর্যন্ত লিয়েন নিতে পারেন। লিয়েনের মেয়াদ শেষে দেশে এসে কিছুকাল সরকারি চাকরি করার পর আবারো লিয়েনে যেতে পারেন। তাছাড়া সরকার বিশেষ বিবেচনায় লিয়েনের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বাড়াতে পারে। এই সুযোগে অনেক কর্মকর্তা বারবার লিয়েনে ছুটি নিচ্ছেন। আবার অনেকে ছুটি মঞ্জুর হওয়ার আগেই বিদেশি সংস্থায় যোগ দিয়ে পরে ছুটির আবেদন করছেন। অনেকে লিয়েন শেষ হওয়ার পরও সরকারি চাকরিতে ফিরে আসতে দেরি করেন। এসব কারণে প্রশাসনিক কার্যক্রমে নানা বিশৃঙ্খলা দেখা দিচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads