• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

থামছেই না বেপরোয়া গাড়ি চালানো

গণপরিবহনে নৈরাজ্য বন্ধ হচ্ছে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯

নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আশাজাগানিয়া আন্দোলনের পরও গণপরিবহনে ফেরেনি শৃঙ্খলা, নিরাপদ হয়নি সড়ক। গত ২৭ আগস্টেই রাজধানীর বাংলামোটরে বেপরোয়া একটি বাসের চাপায় পা হারিয়েছেন কৃষ্ণা রানী চৌধুরী নামে বিআইডব্লিউটিসির এক কর্মকর্তা।

রাজধানীর সড়কগুলোতে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছামতোই চলাচল করছে গণপরিবহন। নির্দিষ্ট বাস স্টপেজে থামছে না গাড়ি। রাস্তা ফাঁকা পেলেই বেপরোয়া হচ্ছে বাসগুলো। ফলে হরহামেশাই ঘটছে দুর্ঘটনা। গণপরিবহনের সংকটের সুরাহা তো হচ্ছেই না বরং দিন দিন সড়কে নৈরাজ্য বেড়েই চলেছে।

রাজধানীর সড়ক ও গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষ বাস স্টপেজ নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছাড়াও সড়কে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা বন্ধে নির্দিষ্ট লাইন করে দিয়েছে। এরপরও ঠেকানো যাচ্ছে না বেপরোয়া ড্রাইভিং। আইন অমান্যকারী বাস কোম্পানি, মালিক ও বাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি বিশেষজ্ঞদের। আর ট্রাফিক পুলিশ বলছেন, সচেতনতার বিকল্প নেই।

সরেজমিনে দেখা যায়, গোটা শহরটাই যেন বাস স্টপেজ। গাড়ি যেখানে-সেখানে থামছে ইচ্ছামতো, যাত্রীরাও উঠছেন খেয়ালখুশিমতো। আবার যাত্রীছাউনি থাকলেও তা উপেক্ষা করেই দাঁড়িয়ে আছেন যাত্রীরা।

এখানেও অসুস্থ প্রতিযোগিতায় মেতে উঠছে গণপরিবহন। যার সর্বশেষ বলি হলেন বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা কৃষ্ণা রায়।

এ বিষয়ে হেলপাররা বলেন, যাত্রীরা রাস্তাতেই দাঁড়িয়ে থাকেন। এখান থেকেই তাদের গাড়িতে তুলতে হয়।

অথচ গত ৩ এপ্রিল ২০১৮ দুই বাসের প্রতিযোগিতায় চাপা পড়ে হাত হারিয়ে পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাজিব। এরপর ২৮ জুলাই ২০১৮ রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া আক্তার মিম ও আবদুল করিম সজীব বাসচাপায় নিহত হন।

সম্প্রতি শৃঙ্খলা ফেরাতে বে পদ্ধতি চালু করেছে ট্রাফিক বিভাগ। তবে দেড় শতাধিক সিটি বাস স্টপেজ হলেও বে করা হয়েছে অল্প কয়েকটি ট্রানজেকশনে।

সমন্বিত উদ্যোগ বাস্তবায়নে সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজট অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করে ট্রাফিক বিভাগ।

ডিএমপি’র ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মফিজ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, বাসগুলো ফুটপাত ঘেঁষে দাঁড়াবে। সিএনজি ও অটোরিকশা এর মধ্যে থাকবে না।

ট্রাফিক পুলিশের কর্মকর্তা সালাহ উদ্দিন বলেন, যাতে যাত্রীরা সুবিধা পান সেজন্য প্লাস্টিক কন দিয়ে লেন করে দেওয়া হয়েছে।

তবে সুফল পেতে বাস মালিকদের জবাবদিহিতার আওতায় আনার তাগিদ দিলেন বিশেষজ্ঞরা। বুয়েটের সড়ক দুর্ঘটনা গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক কাজী মো. সাইফুন নেওয়াজ বলেন, আড়িফেরি গান দিয়ে দূর থেকে বাসের সকল তথ্য নিয়েই মামলা দিয়ে দেওয়া সম্ভব। যে বাস নিয়ম মানবে না সেটা মালিককে জানাতে হবে এবং এরপর মালিক কী পদক্ষেপ নিলেন সেটা ট্রাফিক পুলিশকে জানাতে হবে।

রাজধানীর প্রতিটি সিটি স্টপেজে এমন বে তৈরি করে বাস দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা গেলে সেখান থেকেই বাসে চড়তে বাধ্য হবেন যাত্রীরা। প্রয়োজনে সিসি ক্যামেরা অথবা পুলিশ চেকপোস্ট বসাতে হবে। তাহলে অন্তত বিশৃঙ্খলভাবে যাত্রী ওঠানামার কারণে সড়কে আর কোনো তাজাপ্রাণ ঝরবে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

 

যাত্রীছাউনি/বাসস্টপ থেকে যাত্রী তোলে না!

সুমি ও নীলা দুই বান্ধবী মতিঝিল যাওয়ার জন্য বাংলামোটরে অবস্থিত যাত্রীছাউনির নিচে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকার পরও কোনো পরিবহন ওই বাসস্টপ থেকে যাত্রী তোলেনি।

দেখা যায় ওই রুট দিয়ে চলাচলকারী গণপরিবহনের বেশিরভাগই নির্ধারিত বাসস্টপেজে না থেমে চলন্ত অবস্থায় যাত্রী তুলছে ও নামাচ্ছে, যা যাত্রীদের জন্য বিপজ্জনক, যেকোনো সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ট্রাফিক বিভাগের পক্ষ থেকে নতুন করে রাস্তার পাশে দাগ দিয়ে বাসস্টপেজ করা হয়েছিল, সেগুলোর চিত্রও একই রকম। এর ব্যতিক্রম চিত্র দেখা যায়নি নগরীর অন্যান্য রুটেও।

রাজধানীতে যে যাত্রীর তুলনায় পর্যাপ্ত গণপরিবহন নেই তা অফিসগামী যাত্রীদের বাসের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষায় থাকার চিত্র দেখলেই বোঝা যায়।

সায়েন্সল্যাব মোড়ে দেখা যায়, মতিঝিল থেকে আসা মিরপুর রুটের বেশির ভাগই বাস চলছে সিটিং সার্ভিস নামে। তবে সেইসব বাস আসন সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি যাত্রী পরিবহন করছে। পাশাপাশি বাসের গেট বন্ধ রেখে চালানোর কথা থাকলেও, হরহামেশাই গেট খুলে রাস্তার যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামা করাচ্ছেন পরিবহন শ্রমিকরা। গণপরিবহনের স্বেচ্ছাচারিতা, অব্যবস্থাপনা ও অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর সড়কগুলোতে।

দেওয়ান পরিবহনের যাত্রী আহসান হাবিব বলেন, সড়কে প্রতিনিয়ত যানজটের ভোগান্তি তো পোহাতেই হয়, সঙ্গে আছে বাড়তি ভাড়া আদায়, স্বেচ্ছাচারিতা ও পর্যাপ্ত পরিবহনের অভাব। সব মিলিয়ে গণপরিবহন এখন জনদুর্ভোগের নাম।

গণপরিবহনের স্বেচ্ছাচারিতার বিষয়ে চালকরা বলছেন, চালক হিসেবে আমরা যথেষ্ট সচেতনভাবেই গাড়ি চালাই। কিন্তু চলন্ত বাসের সামনে দিয়ে হঠাৎ করে যখন পথচারী রাস্তা পারাপার করে তখন অনেক সময় আমাদের নিয়ন্ত্রণ থাকে না।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads