• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

‘শান্ত’ অ্যালবোপিকটাস মশা এখন ‘প্রাণঘাতী’

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯

ফের বেড়েছে ডেঙ্গু রোগী ভর্তির সংখ্যা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ৭৫০ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছেন। বুধবার সকাল ৮টা পর্যন্ত সংখ্যাটি ছিল ৬৩৪। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার কর্মকর্তারা আগেই বলেছিলেন, সেপ্টেম্বরে বৃষ্টিপাতের কারণে মশার উপদ্রব বাড়তে পারে। ফলে এ মাসে ওঠানামা করবে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা।

এদিকে রাজধানী ঢাকার বাইরে গ্রাম এলাকায় এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ছে। ঢাকায় এডিস মশার ইজিপ্টি প্রজাতির প্রকোপ থাকলেও, বাইরে শুধু এডিস ইজিপ্টি নয়, অধিকাংশই আক্রান্ত হচ্ছে অ্যালবোপিকটাস প্রজাতির মশার কামড়ে। শুধু আক্রান্ত নয়, শান্তশিষ্ট হিসেবে পরিচিত এ মশা এখন প্রাণঘাতী হয়ে উঠেছে।

ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ তত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) একাধিক টিম বরিশাল, মেহেরপুর ও যশোরে জরিপ চালায়। জরিপ বিশ্লেষণ করে এডিস ইজিপ্টির পাশাপাশি অ্যালবোপিকটাস মশার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ডেঙ্গুর প্রাথমিক বাহক এডিস ইজিপ্টা আর দ্বিতীয় পর্যায়ের বাহক এডিস অ্যালবোপিকটাস।

আইইডিসিআর-এর পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা বলেছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে গ্রামকেও শহরের মতো গুরুত্ব দিতে হবে।

তিনি জানান, এডিস ইজিপ্টি প্রজাতির মশা হিংস্র প্রকৃতির। এটি একসঙ্গে বেশ কয়েকজনকে কামড়ায়। তবে সে তুলনায় এডিস অ্যালবোপিকটাস শান্ত প্রকৃতির। এটি মাত্র একজনকে কামড়ে নিজের রক্তের চাহিদা পূরণ করে। এডিস ইজিপ্টির তুলনায় অ্যালবোপিকটাসের সংক্রমণ ক্ষমতাও পাঁচগুণ কম।

অধ্যাপক সেব্রিনা আরো জানান, এডিস ইজিপ্টি বাসাবাড়িতে থাকলেও অ্যালবোপিকটস বাঁশের চোঙা, গর্ত, কলাগাছ, কচুগাছ, নারকেল গাছের পরিত্যক্ত ডগায় থাকে। এসব ক্ষেত্রে মশার ওষুধ ছিটানোর ক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

তিনি বলেন, শহরে এডিস মশার প্রজননস্থলে ওষুধ ছিটালে সেখানে শিশুদের আসার সম্ভাবনা কম থাকে। কিন্তু গ্রামে অ্যালবোপিকটস মশা নিধনের উৎপত্তিস্থলে শিশুদের আনাগোনা বেশি। তাই সাবধানতা অবলম্বন করে ওষুধ দিতে হবে।

জানা গেছে, আগস্ট মাসের তৃতীয় সপ্তাহে আইইডিসিআরের বিজ্ঞানী ও গবেষণা দল বরিশালের ১২০টি পরিবারের মধ্যে ৬টি পরিবারের পানির পাত্রে লার্ভা পায়। ৫৬টি স্থাপনার ১৯টি পানির পাত্রে লার্ভা পাওয়া যায়। এসব লার্ভা থেকে ৭৫৫টি পূর্ণাঙ্গ মশা হয়। তার মধ্যে ১৪টি এডিস প্রজাতির, যেখানে সাতটি অ্যালবোপিকটস।

কুষ্টিয়াতে ৭১টি পরিবার থেকে সংগৃহীত লার্ভায় প্রাপ্ত পূর্ণাঙ্গ মশার মধ্যে ১৪টি অ্যালবোপিকটস প্রজাতির।

এছাড়া মেহেরপুরের গাংনীতে সংগৃহীত লার্ভা থেকে ২৩৭টি মশার মধ্যে ১১৬টি বিভিন্ন প্রজাতির এডিস মশা পাওয়া যায়। ১১৬টির মধ্যে ৭৮টি এডিস অ্যালবোপিকটস ছিল।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২৩৭ জন ডেঙ্গু রোগী। আর এ সময়ে ঢাকার বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ৫১৩।

অধিদপ্তর বলছে, হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫০০-এর নিচে নামলেই কেবল ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলা যাবে।

হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম জানিয়েছে, এ বছর সারা দেশে ৭৯ হাজার ৩৬৭ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। এখন সারা দেশে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে তিন হাজার ২৯ জন রোগী ভর্তি আছেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, এ পর্যন্ত ৭৬ হাজার ১৪১ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়েছেন। শতকরা হিসেবে ৯৬ শতাংশ সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

অধিদপ্তরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ, গবেষণা ইনস্টিটিউটে ডেঙ্গু সন্দেহে ১৯৭টি মৃত্যুর তথ্য এসেছে। এর মধ্যে ১০১টি পর্যালোচনা করে ৬০ জনের ডেঙ্গুতে মৃত্যু নিশ্চিত করেছে আইইডিসিআর।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads