• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

ফের আন্দোলনে শিক্ষকরা

প্রাথমিকের বেতনবৈষম্য নিরসনের প্রস্তাব নাকচ

  • রেজাউল করিম হীরা
  • প্রকাশিত ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯

প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচে বেতন গ্রেড নির্ধারণের দাবিতে গত ১০ বছর ধরে আন্দোলন করে আসছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা। একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ইশতেহারেও শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসন করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সম্প্রতি শিক্ষকদরে এ বৈষম্য নিরসনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের একটি প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। কিন্তু সেই প্রস্তাবে অসম্মতি জানানো হয়েছে। ফলে দাবি আদায়ে আবারো কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শিক্ষক নেতারা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচের গ্রেডে বেতনের দাবি জানিয়ে আসছি। সরকারও বিভিন্ন সময় আমাদের এ দাবি মেনে নেওয়ার বিষয়ে আশ্বস্ত করেছে। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আমরা যখন শহীদ মিনারে লাগাতার আন্দোলন শুরু করি, তখনো আমাদেরকে দাবি মেনে নেওয়ার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আশ্বস্ত করা হয়। সরকারের আশ্বাসেই সে সময় আমরা আন্দোলন স্থগিত করি। নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারেও শিক্ষকদের গ্রেডবৈষম্য নিরসনের অঙ্গীকার করে। এখন আওয়ামী লীগ সরকার যদি নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী দাবি মেনে না নেয়, তাহলে আমরা আবারো কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব। প্রাথমিক শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে সারা দেশে ৬৫ হাজার ৯০২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে ৪২ হাজার প্রধান শিক্ষক ও তিন লাখ ২৫ হাজার সহকারী শিক্ষক পাঠদান করছেন। তাদের মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা দ্বিতীয় শ্রেণির হলেও তারা একাদশ গ্রেডে বেতন পান। আর প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা বেতন পাচ্ছেন ১২তম গ্রেডে। তারা দীর্ঘদিন ধরেই দশম গ্রেডে বেতনের দাবি করছেন। অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা এখন তিন ধাপ নিচে ১৪তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। আর প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১৫তম গ্রেডে। মন্ত্রণালয় তাদের জন্য একটি মাত্র গ্রেড ১২তম দেওয়ার প্রস্তাব করেছে। তারাও প্রধান শিক্ষকদের এক ধাপ নিচের গ্রেডে বেতনের দাবি জানিয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগ তাদের এবারের নির্বাচনী ইশতেহারেও শিক্ষকদের বেতনবৈষম্য নিরসন করা হবে বলে অঙ্গীকার করেছিল। কিন্তু প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের প্রস্তাব অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তাতে অসম্মতি জানানো হয়েছে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পৌনে চার লাখ শিক্ষক। তবে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আবারও নানা ধরনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকদের গ্রেড ও বেতন বৈষম্য দূর করতে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রাথমিকের শিক্ষকদের এ বৈষম্য নিরসনে অর্থ মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সেটি নাকচ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা আবারো প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ বিষয়ে আগামী ২০ সেপ্টেম্বর আমরা আবারো অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকে বসব। শিক্ষকদের এ ব্যাপারে ধৈর্য ধরার অনুরোধ জানাচ্ছি।

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে গ্রেড ও বেতন বৈষম্য নিরসনের প্রস্তাব নাকচ হওয়ায় কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি। সংগঠনটি সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছে। গতকাল শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ দাবি বাস্তবায়ন না হলে স্কুলে তালাসহ লাগাতার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে। এ কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর সারা দেশে উপজেলা পর্যায়ে বিকাল ৩টা থেকে এক ঘণ্টা মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রী বরাবর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। ২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে সকাল ১০টায় মানববন্ধন করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর স্মারকলিপি নিয়ে পদযাত্রা করা হবে।

সমিতির সভাপতি আতিকুর রহমান আতিক বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিক্ষকদের মানসম্মত বেতন স্কেল দেওয়া হবে বলে উল্লেখ ছিল। আমাদের এ দাবি যতদিন মেনে নেওয়া না হচ্ছে, ততদিন আন্দোলন চলবে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের কর্মসূচির পর আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেব। আগামী ১ অক্টোবর থেকে চলবে লাগাতার কর্মসূচি।

সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম লিখিত বক্তব্যে জানান, বর্তমানে একজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জাতীয় বেতন স্কেলের ১১তম গ্রেডে (১২৫০০) টাকা ও সহকারী শিক্ষক ১৪তম গ্রেডে (১০২০০) টাকা পান। ২০০৬ সালে বেতন স্কেল আপগ্রেড এবং ২০১৪ সালে বেতন ও পদমর্যাদা বাড়ানোর ঘোষণায় স্কেলের পার্থক্য দাঁড়ায় তিন ধাপ। ২০১৫ সালের অষ্টম জাতীয় বেতন স্কেলে এ ব্যবধান দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৩০০ টাকা। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে যে প্রস্তাব দিয়েছিল, আমরা সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেড ও প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১০ম গ্রেডের নতুন প্রস্তাব পাঠানোর দাবি জানাই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads