• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
বৈষম্য দূর করতে অভিযান

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ভয়েস অব আমেরিকাকে প্রধানমন্ত্রী

বৈষম্য দূর করতে অভিযান

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৩ অক্টোবর ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সমাজ থেকে বৈষম্য দূর করতেই দুর্নীতি-অনিয়মের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানো হচ্ছে। এর আগে আমরা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ এবং মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান করেছি। এরপর দুর্নীতি-অনিয়ম দূর করতে শুদ্ধি অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে নিউইয়র্কে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এভাবেই নিজের সিদ্ধান্তের ব্যাখ্যা দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, দলের কে কী সেটা আমি দেখতে চাই না। আমার আত্মীয়-পরিজন আমি দেখতে চাই না। কে কত বেশি উচ্চবিত্ত সেটা এখানে কোনো বিষয় নয়। যেখানে অনিয়ম, দুর্নীতি আছে বা দেশকে ফাঁকি দিয়ে যারা কিছু করতে চাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। দুর্নীতিবিরোধী এই অভিযানের সিদ্ধান্ত তিনি কীভাবে নিলেন এবং কেনইবা এই শুদ্ধি অভিযান শুরু করতে হলো, এ প্রশ্নের উত্তরে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি আমলে দেশে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিস্তার ঘটার পাশাপাশি অস্ত্র চোরাচালান ও মুদ্রা পাচারের প্রসঙ্গ টানেন। বলেন, এই যে ঘটনাগুলো হচ্ছিল, আমরা কিন্তু সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা দিয়ে অভিযান শুরু করেছি এবং তা দমন করতে সক্ষম হয়েছি।

এটা শুধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে করেছি তা নয়, আমার সব কাজে আমি জনগণকে সম্পৃক্ত করি। দেশবাসীকে আহ্বান করলাম  অর্থাৎ সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ বিশেষ করে বাবা-মা, শিক্ষক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, পুলিশ, গোয়েন্দা সবাইকে এক করে বললাম, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। কারণ দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন করা আমাদের লক্ষ্য।

জঙ্গি দমন অভিযানের পরপরই মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু করি আমরা। একটা পর্যায়ে এসে মাদক অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছি। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান এখনো চলছে। কিন্তু এরই সঙ্গে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান না চালাই তাহলে সমাজে একটা বিরাট বৈষম্য সৃষ্টি হবে। সমাজে একজন যখন সৎভাবে জীবনযাপন করছে, আরেকজন একই কাজ করেও দুর্নীতির মাধ্যমে বিশাল অর্থের মালিক হচ্ছে। জীবনযাপনে সেই বিত্তের প্রকাশ ঘটানো হচ্ছে অসুস্থভাবে। এর প্রভাব পড়ছে ছেলেমেয়েদের ওপর।

এছাড়া সরকার যখন অক্লান্ত পরিশ্রম করে উন্নয়ন প্রকল্প নিচ্ছে, তার যতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে, তাতে দেশের উন্নতি হচ্ছে ঠিক। কিন্তু অসৎ ব্যক্তিদের কারণে সেখানে দুর্নীতি হলে বরাদ্দ পুরোপুরি কাজে লাগছে না। আমরা যতটুকু উন্নয়নের কাজ করছি বা বরাদ্দ দিচ্ছি, তা যদি যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারি, দেশ আরো উন্নতি করবে, সমাজের বৈষম্য দূর হবে। ফলে বাচ্চাদের লোভ-লালসার দিকে মন যাবে না। তারা একটা আদর্শ ও নীতি নিয়ে বড় হবে।

আদর্শ আর নীতি নিয়ে চলতে পারলেই সমাজ এগিয়ে যাবে। এসব ভাবনা-চিন্তা থেকেই বুঝতে পারলাম কোথায় একটা কিন্তু রয়ে গেছে। সেটা খুঁজে বের করতে হবে এবং তার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে, ব্যবস্থা নিতে হবে। সম্পদ দেখানোর অসুস্থ প্রতিযোগিতা, মানসিকতা থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে এবার জাতিসংঘ সফরে কেমন সাড়া পেলেন তা জানতে চেয়েছিল ভয়েস অব আমেরিকা। উত্তরে শেখ হাসিনা বলেন, সমস্যাটা প্রায় তৃতীয় বর্ষে পদার্পণ করেছে। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে একটু আলোচনা শুরু করেছিলাম, চুক্তিও হয়েছে। কিন্তু যতবারই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে, তালিকা হচ্ছে, তখনই কোনো না কোনো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কেউ আর ফেরত যাচ্ছে না। নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা করেছি। যাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে, তারা সকলেই সহানুভূতিশীল। মিয়ানমার তাদেরকে ফিরিয়ে নেবে এটাই সবাই আশা করে। কিন্তু মিয়ানমারের কাছ থেকে যতটা সাড়া পাওয়ার কথা, ততটা আমরা পাচ্ছি না।

এ সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং সমাধান তাদেরই করতে হবে। মিয়ানমারের ওপর প্রচণ্ড আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি হচ্ছে, কিন্তু তারপরও দেশটি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিচ্ছে না। মিয়ানমার সরকারের এই ভূমিকার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আমার কাছে খুব অবাক লাগে। সে দেশের সরকারের কি কোনো আত্মসম্মানবোধ নেই? তাদের নাগরিকদের অন্য দেশে আশ্রয় নিতে হচ্ছে। এতে যে কোনো সময় আরো খারাপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। সুতরাং তাদের উচিত ব্যবস্থা করা।

গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ যখন ৫০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে, তখনো কেন একটি শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে উঠল না, সেই প্রশ্নের উত্তরে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, সামরিক শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াই করে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর আবারো সামরিক শাসকরাই ক্ষমতায় আসে। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকতে পারেনি বলেই শক্তিশালী বিরোধী দল গড়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। সমস্যাটা হচ্ছে, একটা মিলিটারি ডিক্টেটর সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতা দখল করে তার আগে তারা রাজনীতিবিদদের যথেষ্ট গালিগালাজ ও দোষারোপ করেই আসে। এরপর নিজেরাই রাজনীতিবিদ হয়ে যায় এবং একটা দল গঠন করে। ক্ষমতায় বসে থেকে ক্ষমতার সুযোগ-সুবিধা নিয়ে তারপর যখন একটা দল গঠন করে এবং সেই দল নিয়ে নির্বাচনী প্রহসন দিয়ে তারা ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার চেষ্টা করে। আমাদের দেশের অন্য দলগুলো মানুষের আস্থা-বিশ্বাস হারিয়েছে। আওয়ামী লীগ মানুষের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলেই আমরা বারবার ক্ষমতায় আসতে পারছি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads