• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ শীর্ষে

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ০৮ অক্টোবর ২০১৯

আগামী বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী ২২ দিন অর্থাৎ ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের নদ-নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকায় ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ সময়ে ইলিশ মাছ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয় ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে মাছের বর্ধিত চাহিদা ও প্রোটিনের ঘাটতি পূরণ এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আগামী বাইশ দিন ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মূলত দেশে ইলিশ মাছের প্রজনন, উৎপাদন ও আহরণ বৃদ্ধির জন্যই এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এ নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, মৎস্য অধিদপ্তর, কোস্টগার্ড ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দেশের বিভিন্ন নদ-নদীতে অভিযান পরিচালনাসহ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে। জানা গেছে, বাংলাদেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশ। গত কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে বছরে পাঁচ লাখ টনের বেশি ইলিশ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে। উৎপাদন আরো বৃদ্ধিকল্পে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।

সাধারণত বছরের এই সময় সাগর থেকে ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য নদীগুলোতে বিচরণ করে। যদিও ইলিশ সারা বছরই কম-বেশি ডিম ছেড়ে থাকে। তবে অক্টোবর মাসের এ সময়ে ৮০ শতাংশ মা ইলিশ দেশের নদ-নদীগুলোতে এসে ডিম ছেড়ে থাকে। এজন্য উৎপাদন বৃদ্ধি এবং পরিপূর্ণ সাইজের মাছের নিশ্চয়তা বৃদ্ধিকল্পে আশ্বিন মাসের পূর্ণিমার আগে-পরের ২২ দিন দেশের উপকূলীয় এলাকার নদী এবং নদীর মোহনা এলাকায় ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ইলিশের অভয়ারণ্য হিসেবে পরিচিত বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর, শরীয়তপুর, বরগুনা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার এলাকার সাগর উপকূল ও উপকূলবর্তী এলাকার নদ-নদীগুলোতে এই নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়িভাবে বহাল থাকবে।

সূত্র জানায়, নিষেধাজ্ঞার সময় মৎস্যজীবীরা মাছ ধরতে না পারায় সরকারের পক্ষ থেকে তাদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হবে। এ সময় তিন লাখ ৯৫ হাজার ৭০৯ জন কার্ডধারী জেলেকে ২০ কেজি করে চাল সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া এ বছরই প্রথমবারের মতো সামুদ্রিক জলসীমায় ৬৫ দিনের মৎস্য-আহরণ নিষিদ্ধকালে উপকূলীয় ৪ লাখ ১৪ হাজার ৭৮৪টি জেলে পরিবারকে মোট ৩৫ হাজার ৯৪৮ টন খাদ্য সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

এ ব্যাপারে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রইছউল আলম মণ্ডল বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ আহরণ, বিপণন, গুদামজাতকরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মূলত ইলিশের প্রজনন বৃদ্ধি ও দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়নে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কাজ করার জন্য ছয়টি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করতে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করবে বলেও জানান তিনি।

মৎস্য বিশেষজ্ঞরা জানান, মূলত বাংলা মাস আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে ও পরের সময়ে অর্থাৎ পূর্ণিমার সময়েই ইলিশ মাছ ডিম ছাড়ার জন্য সাগর ও সাগর উপকূলবর্তী এলাকা থেকে থেকে নদ-নদীতে উঠে আসে। স্বাচ্ছন্দ্যে ও বাধাহীনভাবে ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমকে গুরুত্ব দিয়ে সরকার প্রতি বছর এই সময়ে দেশের নদ-নদী, বিশেষ  করে উপকূলবর্তী এলাকার নদী ও সাগর উপকূলে মাছ আহরণের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। 

কয়েক বছর আগ পর্যন্ত আশ্বিনের পূর্ণিমার আগে-পরে সাতদিন ইলিশ মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হলেও পরে তা বৃদ্ধি করে প্রথমে ১৪ দিন এবং সর্বশেষ ২২ দিন করেছে সরকার। নিষেধাজ্ঞাকালে ইলিশ আহরণ, পরিবহন, প্রদর্শন, গুদামজাতকরণ ও  ক্রয়-বিক্রয় করা নিষিদ্ধ। এছাড়া নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থাও গ্রহণ করবে সরকার। 

সূত্র জানায়, সরকার দেশে ইলিশের প্রজনন ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জন্য ছয়টি অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে। এগুলো হচ্ছে- ভোলা জেলার ভেদুরিয়া থেকে চররুস্তম পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ১০০ কিলোমিটার, চাঁদপুরের ষাটনল থেকে লক্ষ্মীপুরের চর আলেকজান্ডার পর্যন্ত মেঘনা নদীর ১০০ কিলোমিটার, ভোলার চর ইলিশার মদনপুর থেকে চরপিয়াল পর্যন্ত মেঘনা নদীর ৯০ কিলোমিটার, পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিলোমিটার, বরিশালের হিজলা উপজেলায় মেঘনার মৌলভীরহাট পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার দক্ষিণ-পশ্চিম জাঙ্গালিয়া পয়েন্ট পর্যন্ত ২৬ কিলোমিটার, শরীয়তপুরের নড়িয়া থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পদ্মার ২০ কিলোমিটার, বরিশাল সদরের কালাবদর নদীর হবিনগর পয়েন্ট থেকে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার বামনীরচর পয়েন্ট পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার, মেহেন্দীগঞ্জের গজারিয়া নদীর হাটপয়েন্ট থেকে হিজলা লঞ্চঘাট পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার এলাকা। এছাড়া আড়িয়াল খাঁ, নয়নভাঙ্গুলী ও কীর্তনখোলা নদীর আংশিক অভয়াশ্রমের অন্তর্ভুক্ত। জানা গেছে, ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বরিশালের আশপাশের ৮২ কিলোমিটার নদী এলাকাকে নতুন অভায়শ্রম ঘোষণা করেছে। জানা গেছে, এই অভয়াশ্রগুলো ছাড়াও ইলিশের বিচরণ ও ডিম পাড়া নির্বিঘ্ন করতে দেশের উপকূলবর্তী অন্যান্য নদীতে এ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে। উল্লেখ্য, সরকারের সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়নের ফলে দেশে ইলিশের উৎপাদন ও পরিপূর্ণ সাইজের ইলিশ মাছের সরবরাহ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেকাংশে বেড়েছে।

বিশ্বে  ইলিশ আহরণে বাংলাদেশ শীর্ষে : প্রতিমন্ত্রী

গতকাল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু বলেছেন, ইলিশ-আহরণে বাংলাদেশ বিশ্বে শীর্ষে। সারা বিশ্বের উৎপাদিত মোট ইলিশের প্রায় ৮০ শতাংশ আহরিত হয় বাংলাদেশে। আগামী ৯ থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিগত দশ বছরে ইলিশ উৎপাদনের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে প্রায় ৫ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৬ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি নিয়োজিত এবং ২০ থেকে ২৫ লাখ লোক ইলিশ পরিবহন, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ-উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানির কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে, যা একক প্রজাতি হিসেবে সর্বোচ্চ। জিডিপিতে ইলিশের অবদান শতকরা ১ ভাগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমপ্রতি পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেড মার্কস অধিদপ্তর দেশের জাতীয় মাছ ইলিশের ভৌগোলিক নির্দেশক নিবন্ধন প্রদান করেছে। ‘ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০১৯’-এর আওতায় উপকূলীয় ইলিশ প্রজনন ক্ষেত্রের অন্তর্গত ৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকাসহ দেশব্যাপী ইলিশ-আহরণ, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, ক্রয়-বিক্রয়, মজুদ ও বিনিময় নিষিদ্ধ করা হয়েছে বলে জানান তিনি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads