চাঞ্চল্যকর বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলার ৫ নম্বর আসামি ইফতি মোশাররফ সকাল (২১)। সে রাজবাড়ী জেলার পৌরসভা ১নং ওয়ার্ডের ধুঞ্চি ২৮ কলোনি গ্রামের ৩৯৫নং বাড়ির ফকির মোশাররফ হোসেন ও রাবেয়া মোশাররফের ছেলে। অভিযুক্ত ইফতি মোশাররফ সকাল রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় এ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর ভর্তি হয় ঢাকার নটরডেম কলেজে। সেখান থেকে ভর্তি হয় বুয়েটে।
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ইফতি মোশাররফ সকাল দুই ভাইয়ের মধ্যে বড়। ছোট ভাই রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার জেএসসি পরীক্ষার্থী। সকাল বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। শের-ই-বাংলা হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে থাকত। রাজবাড়ী জেলায় থাকতে কোনো ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিল না সকাল। বুয়েটে ভর্তির পর ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়ে। কমিটিতে ছাত্রলীগ বুয়েট শাখায় উপসমাজসেবা সম্পাদকের দায়িত্ব পায়।
সকালের প্রতিবেশীরা জানান, সকাল বাড়িতে থাকাকালে সব সময় পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত থাকত। বিতর্ক, গণিত অলিম্পিয়াডসহ বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রতিযোগিতার মতো কার্যক্রমে সক্রিয় ছিল। এসবে অংশ নিয়ে বিজয়ী হয়ে বেশকিছু পুরস্কারও পেয়েছে। কিন্তু আবরার হত্যার সঙ্গে সকালের জড়িত থাকার কথা শুনে সবাই হতবাক। অভিযুক্ত সকালের বাবা ফকির মোশাররফ হোসেন জানান, টেলিভিশনে সংবাদ দেখে জানতে পারি-ছেলে আবরার হত্যায় জড়িত। কিন্তু কোনোভাবেই এটি বিশ্বাস করতে পারি না। গত কোরবানির ঈদের পর সকাল ক্যাম্পাসে ফিরে যায়। এরপর আর বাড়িতে আসেনি। রাজবাড়ীতে থাকাকালে তার মধ্যে উচ্ছৃঙ্খল কিছু দেখেনি। কোনো রাজনৈতিক সংগঠন তো দূরের কথা সে কোনো আড্ডাতেও যেত না। সব সময় পড়াশোনা নিয়ে থাকত। ৩ মাস আগে সকাল জানায় ক্যাম্পাসে সে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে। তবে আমি নিজেও আবরার হত্যার সঠিক বিচার চাই। রাজবাড়ী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম এরশাদ জানান, ইফতি মোশাররফ সকাল ছাত্রশিবির করত বলে জানা গেছে। তার বাবাও বিএনপির রাজনীতি করেন। রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক প্রদ্যুত কুমার দাস জানান, সকাল যখন রাজবাড়ী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ত তার মধ্যে কখনো খারাপ কিছু দৃশ্যমান হয়নি। রাজবাড়ী পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. আবদুর রব বিশ্বাস জানান, বুয়েটে আবরার হত্যাকাণ্ডে সবার জড়িত থাকার খবর জানার পর বিশ্বাস হচ্ছিল না। কারণ এলাকায় যখন সে ছিল তখন ভদ্র ছেলে হিসেবে জানতাম।
রাজবাড়ী সদর থানার ওসি স্বপন কুমার মজুমদার জানান, ইফতি মোশাররফ সকালের নামে রাজবাড়ী সদর থানায় কোনো মামলা বা অভিযোগ নেই। তবে এখন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে রাজবাড়ীর এই সকালের জড়িত থাকার সংবাদ প্রকাশের পর জেলাবাসী তাকে ধিক্কার দিচ্ছে।