• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ক্যাসিনোর মালামাল আমদানি বন্ধের প্রস্তাব এনবিআরের

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ১৩ অক্টোবর ২০১৯

দেশের অবৈধ ক্যাসিনোগুলোতে ব্যবহূত বিশেষ করে জুয়ার কাজে ব্যবহূত মালামাল আমদানি বন্ধ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। পাশাপাশি এনবিআরের পক্ষ থেকে ক্যাসিনোতে ব্যবহূত মালমালের আমদানি ছাড় বন্ধ করতে কাস্টমস হাউসগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্যনীতি সংশোধন করা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। 

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্যাসিনোসামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ করতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এনবিআরের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসংবলিত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। বাণিজ্য সচিবের কাছে লিখিত চিঠিতে এনবিআর চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, জুয়া খেলা সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৮(২)-এ বর্ণিত ও ‘দ্য পাবলিক গ্যাম্বলিং অ্যাক্ট ১৮৬৭’-এর বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এ ছাড়া এটি সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে নিষিদ্ধ। এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে  দেশের মানুষের নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে এবং সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে। আইনের প্রতি মানুষ শ্রদ্ধা হারাচ্ছে। তাই এসব কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য ক্যাসিনোসহ বিভিন্ন জুয়া খেলার সামগ্রী বন্ধ করা জরুরি। আমদানিনীতিতে বিষয়টি যুক্ত না থাকায় এসব পণ্য খালাসে আইনি জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি। বিষয়গুলো বিবেচনা করে এসব সামগ্রী আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় যুক্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান।

এদিকে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দারা প্রাথমিক তদন্তে জানতে পেরেছে বিদ্যমান বাণিজ্যনীতি-আদেশে নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় না থাকার সুযোগ নিয়ে খেলার সামগ্রীর আড়ালে এসেছে বিভিন্ন ধরনের ক্যাসিনো যন্ত্রপাতি। এগুলোর অধিকাংশ চালানেই বড় অঙ্কের শুল্কও ফাঁকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক অনুসন্ধানে চারজন নেপালি এ যন্ত্রপাতি আমদানির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল বলে জানতে পেরেছে শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ। এরপর কয়েক হাত ঘুরে এসব যন্ত্রপাতি বিভিন্ন ক্লাবে ও ক্যাসিনোতে সরবরাহ করা হয়েছে।

জানা গেছে, আমদানিকৃত ক্যাসিনোগুলোর মালামালের মধ্যে কমলাপুর আইসিডি দিয়ে আমদানি হয়েছে ৪০টি ক্যাসিনোর জন্য লে-আউটসহ বড় চালান। এ ছাড়া শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে এসেছে ক্যাসিনোতে ব্যবহূত সাড়ে তিন হাজার পিস কয়েন। এমনকি জুতার সরঞ্জাম আমদানির মিথ্যা ঘোষণা দিয়েও আনা হয়েছে এসব মালামাল।

এদিকে, বিদ্যমান বাণিজ্যনীতি আদেশ সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত ক্যাসিনোগুলোতে ব্যবহূত মালামাল খালাস বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দেশের সব কাস্টমস হাউজকে চিঠি পাঠিয়েছে এনবিআর।

এ ব্যাপারে ঢাকা কাস্টমস হাউজের অতিরিক্ত কমিশনার তাসমিনুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ক্যাসিনোতে ব্যবহার করা হয় এমন যন্ত্রপাতির ছাড় বন্ধ করতে ইতোমধ্যে কাস্টমস হাউজগুলো এনবিআরের নির্দেশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে। ক্যাসিনোর সরঞ্জাম আমদানি নিষিদ্ধ তালিকায় না থাকায় এখন থেকে এসব আমদানি মালামাল পরীক্ষা-নিরীক্ষার দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের বিষয়টি যাচাই-বাছাই করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। 

শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, অনুসন্ধান করে পাওয়া গেছে বিদেশি নাগরিক বিশেষ করে নেপালের নাগরিকরা বাংলাদেশের কিছুসংখ্যক লোকের মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে এসব যন্ত্রপাতি আমদানি করেছে। শুল্ক গোয়েন্দা বিভাগ দেশে এখন পর্যন্ত সন্ধান পাওয়া প্রায় ৩০টি ক্যাসিনোর মালামাল আমদানিকারক ২০টি প্রতিষ্ঠানকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে জানান তিনি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, এনবিআর চেয়ারম্যানের এ প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি নিষিদ্ধ পণ্যের তালিকায় ক্যাসিনোতে ব্যবহূত মালামাল যুক্ত করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এনবিআরের প্রস্তাব পর্যালোচনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ জন্য বিদ্যমান বাণিজ্যনীতি সংশোধন করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০১৫-১৮ তিন বছর মেয়াদের খসড়া বাণিজ্যনীতি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads