• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ভারী হচ্ছে উদ্বৃত্ত খাদ্যের বোঝা

ফাইল ছবি

জাতীয়

বিশ্ব খাদ্য দিবস আজ

ভারী হচ্ছে উদ্বৃত্ত খাদ্যের বোঝা

  • নাজমুল হুসাইন
  • প্রকাশিত ১৬ অক্টোবর ২০১৯

দেশের প্রধান খাদ্য চাল নিয়ে আর দুশ্চিন্তা নেই। এখন চালের উৎপাদন উদ্বৃত্ত রয়েছে। এ ছাড়া স্বয়ংসম্পূর্ণতার পরপরই এখন উদ্বৃত্ত খাদ্যের তালিকায় যোগ হচ্ছে কয়েক প্রকারের সবজি, ফল, মাছ ও মাংস। তবে এসব খাদ্য ব্যবস্থাপনা এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রক্রিয়াকরণ সক্ষমতার তৈরি না হওয়া এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে নানা জটিলতায় এসব খাদ্যপণ্য উদ্বৃত্ত থেকে উচ্ছিষ্টে পরিণত হচ্ছে। সংশ্লিষ্টরা বলেন, এখনই যথাযথভাবে প্রক্রিয়াকরণ অথবা রপ্তানির সুযোগ তৈরি না হলে উদ্বৃত্ত খাদ্যশস্য নিয়ে বিপদ আরো বাড়বে। তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে ওইসব খাদ্যপণ্যের উৎপাদক, আর দেশ বঞ্চিত হবে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা থেকে।

তারা আরো বলেন, দেশেও এসব পণ্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যগুলো যথাযথ ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া গ্রহণ করতে পারলে একদিকে নিশ্চিত হবে উৎপাদকের মুনাফা ও অন্যদিকে আসবে বৈদেশিক মুদ্রা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক এম আসাদুজ্জামান বলেন, দেশে মৌসুমে কিছু শস্য এতটাই উৎপাদন হচ্ছে যে কৃষক দাম পাচ্ছে না। ফলে নষ্ট হচ্ছে। কারণ এসবের ব্যবস্থাপনায় কেউ কখনো নজর দেয়নি। শুধু ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর দিকে ঝুঁকে রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ভোক্তারাও সুফল পায় না। বাজারে গিয়ে বেশি দামে কিনতে হয়। দুর্বল বিপণন ব্যবস্থা এর জন্য দায়ী। আসলে সবকিছু পরিবর্তন সম্ভব, কিন্তু সেটা কখনো হবে না। তাতে করে ব্যবসায়ী শ্রেণির অনেকে বাড়তি মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে।  

এদিকে দেশে এখন উদ্বৃত্ত রয়েছে এমন প্রধান খাদ্য চাল। সরকারি ও বেসরকারি হিসাব অনুসারে, দেশে ২৫ থেকে ৩০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত রয়েছে। কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এই বাড়তি চাল রপ্তানির বিষয়টিও বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের চালের দাম বেশি হওয়াতে সেটা ফলপ্রসূ হচ্ছে না। অনেক চেষ্টার পরও কাঙ্ক্ষিত পরিমাণে চাল রপ্তানি সম্ভব হয়নি।

সে কারণে বারবার চালের ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষক। শেষ বোরো মৌসুমে চালের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে গিয়ে বাধ্য হয়ে প্রচুর ধান-চাল কিনতে হয়েছে সরকারকে। তাতেও দেখা দিয়েছে অরেক বিপত্তি। সরকারের গুদামগুলোতে এখন নতুন চাল রাখার জায়গা নেই। বেসরকারি মিলগুলোও চালে বোঝাই। এতে আসন্ন মৌসুমে আবারো চালের দাম পড়ে যাওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিবিষয়ক সংস্থা ইউএসডিএ সর্বশেষ ‘বিশ্বের দানাদার খাদ্যের বৈশ্বিক উৎপাদন পরিস্থিতি’ প্রতিবেদন অনুয়ায়ী, গত এক বছরে বাংলাদেশে চালের উৎপাদন বেড়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ, যা বিশ্বের প্রধান ধান উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। আর দেশের একটি গবেষণা বলছে, ২০৫০ সালে দেশের বর্ধিত জনসংখ্যার খাদ্যের চাহিদা পূরণের জন্য চালের প্রয়োজন হবে ৪ কোটি ৪৬ লাখ টন। আর চাল উৎপাদন বৃদ্ধির হার অব্যাহত থাকলে তখন দেশে ২ কোটি ৬০ লাখ টন চাল উদ্বৃত্ত থাকবে। ওই পরিস্থিতিতে উদ্বৃত্ত চাল রপ্তানি সম্ভব না হলে সে বোঝা আরো ভারী হবে।

চালের পরই ভরা মৌসুমে উদ্বৃত্ত রয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন শাক-সবজি। গত এক যুগে সবজি চাষে বাংলাদেশে নীরব বিপ্লবের ফলে সবজি উৎপাদন বৃদ্ধির হারের দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে তৃতীয়। এমন পরিস্থিতিতে দেশে প্রয়োজনের অতিরিক্ত ৩৫ লাখ টন আলু রয়ে গেছে। যদিও ওইসব রপ্তানির উদ্যোগের কথা শোনানো হচ্ছে কয়েক বছর ধরেই। তবে ব্যস্তবতা হলো দেশে যে আলুর জাত রয়েছে তাতে আর্দ্রতার পরিমাণ বেশি থাকায় বিশ্বের কোনো দেশে এর চাহিদা নেই। এতে ক্রমাগত আলুর বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।

আলুর থেকেও খারাপ পরিস্থিতিতে টমেটো। প্রায় প্রতি বছর শস্যটির বাম্পার ফলনও বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মৌসুমের একপর্যায়ে বাজারে এর সরবরাহ এত বেড়ে যায় যে, দাম নেমে যায় ২ টাকা কেজিতে! তথ্য বলছে, দেশে প্রতি বছর ৭৫ হাজার একর জমিতে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন টমেটো উৎপাদন হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। আর তার মধ্যে ৪০০ কোটি টাকার টমেটো প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে বলে জানা যায় এফএও’র আরেক গবেষণায়।

এ ছাড়া দেশে প্রায় ১৫৬ প্রজাতির শাকসবজি উৎপন্ন হয়ে থাকে, যার মধ্যে ২৯টি প্রধান শাকসবজির অধিকাংশ চাহিদা না থাকায় মৌসুমে পচে নষ্ট হয়।

অন্যদিকে রপ্তানিতে এসব পণ্যের সাড়া নেই। নেই প্রক্রিয়াকণ ব্যবস্থাও। তথ্য বলছে, মানের বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করায় ইউরোপে সবজি রপ্তানি এক-চতুর্থাংশ কমে গেছে। সেজন্য গত চার অর্থবছর ধরে বাংলাদেশের সবজি রপ্তানি ধারাবাহিকভাবে কমছে। যেখানে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সবজি রপ্তানির পরিমাণ ছিল প্রায় ২১  কোটি ডলার। সেটা গত অর্থবছরে সাড়ে ৮ কোটি ডলারে নেমেছে।

অন্যদিকে পণ্যের গুণগত মান এবং বিশ্ব মানের উৎপাদন কারখানা গড়ে না ওঠায় প্রক্রিয়াকরণও বাড়ছে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ অ্যাগ্রো ফুড প্রসেস অ্যাসোসিয়েশনের (বাপা) সভাপতি এ এফ এম ফখরুল ইসলাম মুন্সী বলেন, প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যে রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য কারখানার মান উন্নয়ন করতে হবে। একই সঙ্গে খাদ্য উৎপাদন হয় ওইসব কারখানাকে হতে হবে বিশ্ব মানের এবং কমপ্লায়েন্স। এমনটা এখনো আমাদের দেশে সেভাবে হয়নি।

অন্যদিকে মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ। কিছু ক্ষেত্রে এসব উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একজন মানুষের দৈনিক ১২০ গ্রাম মাংসের প্রয়োজন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ১২৫ গ্রাম। অন্যদিকে গত অর্থবছরে ৪১ দশমিক ৩৪ লাখ টন মাছ উৎপাদন হয়েছে, যা চাহিদার বেশি।

এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্ব খাদ্য দিবস পালিত হচ্ছে দেশে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও বিভিন্ন আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি উদযাপিত হচ্ছে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য- ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, পুষ্টিকর খাদ্যেই হবে আকাঙ্ক্ষিত ক্ষুধামুক্ত পৃথিবী’।

দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সংগঠন আজ নানা কর্মসূচির আয়োজন করেছে। দিবসটি উপলক্ষে খাদ্য মন্ত্রণালয় রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সকাল ১০টায় নির্ধারিত প্রতিপাদ্যের ওপর আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। এ ছাড়া ঢাকায় সকাল ৯টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজা থেকে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা/প্রতিষ্ঠান, স্কুলের ছাত্রছাত্রীসহ সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য র্যালি অনুষ্ঠিত হবে। বিশ্ব খাদ্য দিবস ২০১৯ উপলক্ষে বেতার ও টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার, মাসিক কৃষিকথার বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ, জাতীয়  দৈনিকে বিশেষ ক্রোড়পত্র, পোস্টার প্রকাশনা ও বিতরণ,  মোবাইল ফোনে এসএমএস-এর মাধ্যমে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads