• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর দুটি স্পটে গড়ে উঠেছে মা ইলিশ বেচাকেনার বাজার

নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মায় চলছে ইলিশ শিকার। নৌকায় চলে ইলিশ কেনাবেচা

ছবি: বাংলাদেশের খবর

জাতীয়

সমন্বয়হীনতা ও পুলিশের চাঁদাবাজির অভিযোগ

গোয়ালন্দে পদ্মা নদীর দুটি স্পটে গড়ে উঠেছে মা ইলিশ বেচাকেনার বাজার

  • গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত ২৪ অক্টোবর ২০১৯

গোয়ালন্দ উপজেলায় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়হীনতা ও জেলে নৌকা থেকে পুলিশের চাঁদাবাজির কারণে মা ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান ব্যহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে পদ্মা নদীর বিশাল এলাকায় নির্বিঘ্নে চলছে মা ইলিশ শিকারের মহোৎসব।

সরেজমিন জানা যায়, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়ার পদ্মা তীরের কলাবাগান ও দেবগ্রামের কাওয়ালজানি নামক স্থানে বিশেষ কায়দায় গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বিশাল ইলিশের বাজার। যেখানে শত শত জেলে নৌকা পদ্মায় ইলিশ শিকার করে নিয়ে আসছেন। কিছুটা কম দামে সেই মাছ কেনার জন্য অস্থায়ী ওই ইলিশ বাজারে ভিড় করছেন শত শত বেপারী ও সাধারণ ক্রেতা। এলাকা দুইটি দূর্গম হওয়ায় নির্বিঘ্নে ওই বাজারে চলছে হাজার হাজার কেজি ইলিশ বিক্রি। এখানে ছোট সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকা কেজি দরে, আর এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা কেজি দরে।

অবৈধ ওই বাজারে ইলিশ কিনতে আসা কয়েকজন জানান, পদ্মার টাটকা ইলিশ কম দামে পাওয়ার আশায় তারা এখানে এসেছেন। নদী থেকে এভাবে তাজা ইলিশ কেনার মধ্যে আনন্দই আলাদা। প্রশাসনের সহযোগিতায় এভাবে ইলিশ শিকার ও দেদারছে বেচাকেনা সম্ভব হচ্ছে বলে তারা মনে করেন।

এ সময় জেলে আলমাছ শেখ, মোতালেব প্রামাণিক, আব্দুল গফুরসহ কয়েকজন জানান, পেটের তাগিদেই তারা নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে মাছ শিকার করছেন। সরকারি সহায়তার কথা বললে তিনি জানান, শুনেছি অনেক জেলে চাল পেয়েছে। তবে আমরা কিছুই পাইনি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন জেলে জানান, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সব নৌকা নদী থেকে মাছ শিকার করতে পারে না। আমরা দৌলতদিয়া ঘাটের ভাটিতে অন্তত ৬০টি নৌকার জন্য ৫০০ টাকা করে দৈনিক ৩০ হাজার টাকা দেই। উজানের দেড় থেকে ২০০ নৌকা থেকে আদায় করা হয় ১ হাজার টাকা করে। তবে মাঝে মধ্যে ম্যাজিস্ট্রেট এসে অভিযান চালায়।

এদিকে গত রোববার সোহেল রানা নামের এক যুবক পদ্মায় ইলিশ শিকার করার ছবি গর্বের সঙ্গে ফেসবুকে পোস্ট করে। এ ধরনের পোস্টে এলাকায় ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। মৎস্য বিভাগ বলছে, জনবল ঘাটতি, আর্থিক সঙ্কট, জেলেদের অধিক গতি সম্পন্ন ইঞ্জিনের নৌকা ব্যবহার ও টাস্কফোর্স সদস্যদের মধ্যে আন্তরিকতার ঘাটতি রয়েছে। যে কারণে সব সময় অভিযান চালানো যাচ্ছে না।

উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ইলিশ মাছের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে মৎস্য বিভাগ গত ৯ অক্টোবর থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ৭৬ জন জেলেকে আটক করে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়ে জেলে পাঠিয়েছে ভ্রাম্যমান আদালত। এছাড়া প্রায় সাড়ে ৫ লাখ ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল ও ৬২২ কেজি মা ইলিশ জব্দ করা হয়েছে।

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা রেজাউল শরীফ বলেন, জনবল ঘাটতি ও আর্থিক সঙ্কট রয়েছে। এছাড়া জেলেদের নৌকার ইঞ্জিনের গতি এতই বেশি যে তাদের সাথে পেরে উঠতে পারি না। আন্তঃমন্ত্রণালয় সম্পর্কিত টাস্কফোর্স কমিটির মধ্যে নানা কারণে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। উপজেলার দৌলতদিয়া কলা বাগান ও দেবগ্রামের কাওয়ালজানি এলাকায় শত শত নৌকার অবস্তান ও অস্থায়ী বাজার বসিয়ে মাছ বেচাকেনার খবর আমিও শুনেছি। কিন্তু অভিযানে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায় না। সম্ভবত কোনোভাবে জেলেরা আগেই খবর পেয়ে যায়। কেউ জেলেদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করলেও করতে পারে। কিন্তু আমার জানা নেই। আমি ম্যাজিস্ট্রেট (এসিল্যান্ড) ছাড়া অভিযানে যাই না।

গোয়ালন্দ ঘাট থানার ওসি রবিউল ইসলাম বলেন, থানা পুলিশ নদীতে নিয়মিত অভিযান করে না। অভিযানের প্রয়োজনে তাদের কাছে পুলিশ চাইলে সেক্ষেত্রে পুলিশ দেওয়া হয়। নদীতে অভিযানের মূল দায়িত্ব নৌ-পুলিশের। তারাই অভিযানে মূখ্য দায়িত্ব পালন করে থাকে।

এ সব বিষয়ে দৌলতদিয়া নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ওসি মো. লাবু মিয়া বলেন, নৌকা প্রতি পুলিশকে ৫০০ টাকা দেয়ার বিনিময়ে ইলিশ ধারার সুযোগ দেয়ার বিষয়টি আমরাও শুনেছি। তবে এর সাথে আমাদের নৌ-পুলিশের কেউ জড়িত নয়। এ ধরনের খবরের ভিত্তিতে নৌ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তার নেতৃত্বে গত মঙ্গলবার নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। কিন্তু এ ধরনের তথ্যের কোনো ভিত্তি বা কাউকে আটক করা যায়নি বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads