• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ইলিশ ধরা শুরু

ফাইল ছবি

জাতীয়

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ইলিশ ধরা শুরু

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ৩১ অক্টোবর ২০১৯

ইলিশের জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হয়েছে আজ বৃহস্পতিবার। টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার মধ্যরাতে শেষ হয় ইলিশ মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা। মধ্যরাতেই বঙ্গোপসাগরসহ পদ্মা ও মেঘনা নদীতে ইলিশ আহরণে নেমে পড়েছেন জেলেরা। এই ২২ দিনে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মাছ শিকারে নামায় ১৮০০ জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও জরিমানা করা হয়েছে। বাংলাদেশের খবরের ব্যুরো অফিস ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সংবাদে এসব তথ্য জানা গেছে।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, টানা ২২ দিন বন্ধ থাকার পর বুধবার মধ্যরাত (১২টার পর) থেকে উঠে যাচ্ছে ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। ইতোমধ্যে সাগর ও নদীতে ইলিশ আহরণে নামতে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন জেলেরা। ফলে আবারো বাজারে দেখা মিলবে মাছের রাজা ইলিশের। বরগুনার তালতলী ও আমতলী, পটুয়াখালীর গলাচিপা, রাঙ্গাবালী, কলাপাড়ার মহিপুর, কুয়াকাটার সাগরপাড়ের জেলেরা মাছ শিকারে অপেক্ষায় প্রহর গুনছেন।

আলাপকালে জেলেরা জানান, ২২ দিন তারা মাছ শিকারে নামতে পারেননি। সংসারে অভাব-অনটন প্রকট আকার ধারণ করেছে। জেলেরা বিভিন্ন ব্যক্তির কাছ থেকে চড়া সুদে টাকা ধার, কেউবা এনজিও, সমিতি, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন। ট্রলার, নৌকা, জাল মেরামত কাজ সম্পন্ন করে রাত থেকেই সাগরে নামতে তারা সব আয়োজন সমাপ্ত করেছেন।

এদিকে মঙ্গলবার বরিশালের মেঘনা, কালাবদর, তেঁতুলিয়া, মাসকাটা, কীর্তনখোলা নদীতে মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে আটক জাল এবং জেলেদের পাশাপাশি যেসব মাছ পাওয়া গেছে সেসব মাছের ৪০-৫০ শতাংশ ইলিশেরই পেটভর্তি ডিম পাওয়া যায়।

জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তা (হিলসা) ড. বিমল চন্দ্র দাস জানান,  ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে প্রজনন মৌসুমের সঙ্গে সমন্বয় করে এবার ৯ অক্টোবর থেকে ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ইলিশ ধরা, বেচাকেনা, পরিবহন, বিপণন ও বাজারজাতকরণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ থাকাকালীন বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় ধারাবাহিকভাবে ২ হাজার ৪৩০টি অভিযান পরিচালিত হয়েছে। ১ হাজার ৫৪১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ ছাড়া অভিযানে আটকদের কাছ থেকে ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ৭০০ টাকা জরিমানা এবং ১ হাজার ২২৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৮৫ লাখ ৭৮ হাজার মিটার অবৈধ কারেন্ট জাল ও ১৭ দশমিক ৬৯ টন ইলিশ উদ্ধার করা হয়েছে। 

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, নিষেধাজ্ঞা শেষে বুধবার রাত ১২টা ১ মিনিট (৩১ অক্টোবর) থেকে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় মাছ ধরতে নদীতে নেমেছে জেলেরা। দীর্ঘ ২২ দিন অলস সময় কাটানোর পর আজ (বৃহস্পতিবার) থেকে পুরোদমে নদীতে মাছ ধরতে নামছে প্রায় ৫১ হাজার ১৯০ জন জেলে। এ কারণে স্বস্তি ফিরে এসেছে জেলে পরিবারগুলোতে। কর্তৃপক্ষের দাবি মা ইলিশ রক্ষা কর্মসূচি সফল হওয়ায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।

মা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য সরকার গত ২২ দিন চাঁদপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ দেশের ৫টি ইলিশের অভয়াশ্রম কেন্দ্র এলাকায় যে কোনো ধরনের মাছ আহরণ, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ ছিল। ইলিশসহ অন্যান্য মাছ ধরতেও জেলেরা এখন প্রস্তুত।

জাতীয় মাছ ইলিশ রক্ষায় সরকার প্রতি বছরের অক্টোবর মাসে মা ইলিশ রক্ষায় ২২ দিন ও জাটকা ইলিশ রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস নদীতে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আসছে।

মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল এলাকায় জেলেপাড়া ঘুরে দেখা গেছে, প্রায় জেলেরা এখন তাদের নৌকা ও জাল প্রস্তুত করেছে। ইলিশ ধরার জন্য নৌকা ও চান্দি জাল নিয়ে প্রস্তুত ওই জেলেপাড়ার হীরামন বর্মণ।

তিনি জানান, ১০ দিন আগে পদ্মা-মেঘনার পানি ছিল পরিষ্কার। কিন্তু এখন গোলা। এ কারণে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় ইলিশ না পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে আমরা ভোলা জেলার দৌলতখাঁ এলাকায় বেশিরভাগ সময়ে ইলিশ ধরতে যাই।

২২ দিন নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জাটকা নিধন করার অপরাধে ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, কোস্টগার্ড, টাস্কফোর্স এবং মৎস্য বিভাগ ইলিশ সংরক্ষণে এবং মা ইলিশ রক্ষায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে। এ সময় আটক জেলেদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়েছে। কারেন্ট জাল জব্দ করে ধ্বংস করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে মা ইলিশ আটক করে গরিব-দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকী জানান, জেলায় গত ২২ দিনে মোট ২১১টি মামলায় ১৯৩ জেলেকে ১ বছর করে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ৬ দশমিক ৫০ টন ইলিশ জব্দ ও বিপুল পরিমাণে কারেন্ট জাল ও নৌকা নষ্ট করা হয়েছে।

লৌহজং (মুন্সীগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, শেষ হলো ইলিশ ধরার নিষেধাজ্ঞা। এর মধ্যে নিষেধাজ্ঞা উপক্ষো করে মা ইলিশ শিকার করায় ৩৮টি অভিযান ও ৩২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়েছে লৌহজংয়ে। এ সময় পদ্মা থেকে জেলে ও ইলিশ ক্রয়ের অপরাধে ৪ শতাধিক জেলে ও ক্রেতাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেন আদালত। সেইসাথে আরো বেশ কতক জেলে ও ক্রেতাকে ২ লাখ ৯২ হাজার টাকা জরিমানা করেন ম্যাজিস্ট্রেট। পদ্মা নদীর বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে ১৪ টন মা ইলিশ জব্দ করে উপজেলার বিভিন্ন এতিমখানা, মাদ্রাসা ও অসহায়দের মধ্যে বণ্টন করে দেওয়া হয়েছে।

অসাধু জেলের কাছ থেকে প্রায় ৬২ লাখ মিটার কারেন্ট জাল জব্দ করে আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করা হয়। পদ্মায় অভিযান করার সময় অবৈধভাবে মা ইলিশ ধরায় প্রায় ৩ শতাধিক ট্রলারের তলা ফুটো করে পদ্মায় ডুবিয়ে দেওয়া হয়।

উপজেলার ভারপ্রাপ্ত সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ইদ্রিস তালুকদার জানান, বুধবার রাত ও সকালে অভিযান চালিয়ে আরো ৫০ জেলেকে আটক করা হয়েছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে এই ৫০ জেলেকে জরিমানার কার্যক্রম চলছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads