• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বেকারমুক্ত হবে ৪৯২ গ্রাম

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ নভেম্বর ২০১৯

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলার ৪৯২টি গ্রামকে বেকারমুক্ত করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এ কার্যক্রমে গ্রাম বাছাই করা হবে দারিদ্র্যের হার বিবেচনায়। এজন্য স্থানীয়দের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠিত হবে। যে কমিটিকে উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ (ইউএনও) স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরাও অন্তর্ভুক্ত হবেন। ওই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত হবে কোন উপজেলার কোন গ্রাম বেকারমুক্ত করতে সরকারের নেওয়া পাইলট প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশে ৪৯২টি উপজেলায় মোট গ্রামের সংখ্যা ৮৭ হাজার ৩১৯টি। এর মধ্যে মাত্র ৪৯২টি গ্রামকে বেকারমুক্ত করার লক্ষ্যে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ‘বেকারমুক্ত গ্রাম সৃজন প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছে।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশের বেকারদের আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়ার লক্ষ্যে ‘টেকনোলজি এমপাওয়ারমেন্ট সেন্টার অন হুইলস ফর আন্ডার প্রিভিলেজড রুরাল ইয়ং পিপল অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় অত্যাধুনিক কম্পিউটার সিস্টেম, ইন্টারনেট সুবিধা, মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর, অডিও সিস্টেম, ইত্যাদির মাধ্যমে সাতটি সুসজ্জিত ভ্রাম্যমাণ আইসিটি ট্রেনিং ভ্যান (শীততাপ নিয়ন্ত্রিত মিনিবাস) দ্বারা দেশের ৬৪ জেলায় বিভিন্ন উপজেলায় ঘুরে ঘুরে বেকার যুবকদের আইটি প্রশিক্ষণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে গ্রামের বেকারদের প্রশিক্ষণ নিতে শহরে যেতে হবে না। বাড়িতে থেকেই সে শহরের প্রশিক্ষণ পাবে। একই সঙ্গে প্রতিটি জেলায় একটি করে অত্যাধুনিক কম্পিউটার ল্যাবরেটরি স্থাপন করা হয়েছে। এসব ল্যাবে প্রশিক্ষিত যুবকদের কর্মকসংস্থানে সরকার সুযোগ তৈরি করে দেবে। প্রশিক্ষণ ও ঋণের জন্য অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে।

জানা যায়, বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ৮৩টি প্রশিক্ষণ ট্রেডের পাশাপাশি প্রতিনিয়ত নতুন ট্রেডের মাধ্যমে যুবকদের দক্ষ করে তোলা হচ্ছে। এর মাধ্যমে বেকার যুবকরা দেশে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাচ্ছেন। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত যুবকরা তাদের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে স্থানীয়ভাবে উৎপাদন বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরাসরি অবদান রাখছে।

পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি (নেছারাবাদ) উপজেলার ২নং সোহাগদল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রশিদ বলেন, ‘এ ধরনের প্রকল্প দেশের তরুণ সমাজকে অনুপ্রাণিত করবে। যা দেশের বেকারত্ব দূরীকরণে ভূমিকা রাখবে।’

যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফারুক আহমেদ বলেন, ‘প্রথমেই নির্ধারণ করা হবে পুরো গ্রামে মোট বেকারের সংখ্যা কত? এর মধ্যে শিক্ষিত, অশিক্ষিত, দক্ষ, অদক্ষ যুবক চিহ্নিত করা হবে। খোঁজ নেওয়া হবে এসব বেকারদের মধ্যে পারিবারিক আর্থিক সচ্ছলতা কেমন। এসব ধরন চিহ্নিত করে বাছাই করা বেকারদের দেওয়া হবে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের পাশাপাশি দেওয়া হবে ব্যাংক ঋণও। শেখানো হবে কর্মসংস্থানের উপায়ও। উপযোগী হলে বেকার যুবকদের বিদেশে কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা করা হবে ওই প্রকল্পর আওতায়। 

ফারুক আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে একটি নির্ধারিত পলিসি থাকবে। যে পলিসি অনুযায়ী উপজেলা পর্যায়ে একটি কমিটি থাকবে। সেই কমিটি সুপারিশ করবে। মহাপরিচালক আরো বলেন, ইতোমধ্যে প্রত্যেক জেলায় একটি করে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করব। বেকারমুক্ত গ্রাম সৃজন ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্র একত্রে করে একটি হলিস্টিক অ্যাপ্রোচ নেওয়া হবে।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, আমাদের কিছু প্রক্রিয়াধীন প্রকল্প রয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্ল্যানিংয়ে পাঠিয়েছি, কিছু ডিপিপির (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা) কাজ চলছে। তিনি বলেন, ৬৪টি জেলায় ৪৯২টি গ্রামে অর্থাৎ প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে গ্রামকে বেকারমুক্ত করব। এই প্রকল্পের ডিপিপি হয়ে গেছে। আমরা কিছুদিনের মধ্যে এটা ডিপিপিতে পাঠাব।

তিনি আরো বলেন, আমরা নতুন একটি কনসেপ্ট নিয়েছি। এই গ্রামে আমরা কোনো বেকার রাখব না। আত্মকর্মসংস্থান করব, না হয় কোথাও চাকরির সুযোগ করে দেব। যেভাবে হোক তাদের একটা ব্যবস্থা করার জন্য এই প্রকল্প আমরা হাতে নিয়েছি। বেকারদের তালিকা কীভাবে করা হবে-জানতে চাইলে জাহিদ আহসান বলেন, এক্ষেত্রে কারো সুপারিশ নয়, আমরা নিজেরাই গ্রামকে বেছে নেব। যেভাবে দারিদ্র্যের হার বেশি সেই এলাকাকে আমরা আগে বেছে নেব। এরপর ধাপে ধাপে অন্য গ্রামগুলোকে নেব।’

তিনি বলেন, একটি উপজেলায় অনেক গ্রাম থাকে। শতভাগ গ্রামকে তো আর বেকার মুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে উপজেলার মোট গ্রাম থেকে একটি মাত্র গ্রামকে এই কর্মসূচির আওতায় বেছে নেওয়ার উদ্দেশ্যই হলো পাশের গ্রামগুলোও যেন বেকার মুক্ত হয়। বেকারমুক্ত গ্রামের বৈশিষ্ট্য দেখে নিজের গ্রামকে সেভাবে দেখতে চাইবে বাংলাদেশের যুবকরা। কারণ তারা অবশ্যই ভালো কিছুকে অনুকরণ করবে। আর তা করতে গিয়েই নিজের গ্রামকে বেকার মুক্ত করার নানা পরিকল্পনা করবে। একসময় আসবে যখন সত্যিকার অর্থেই পুরো বাংলাদেশের বেকারের চিত্র বদলে যাবে। এজন্য সরকারের পক্ষ থেকে যখন যেমন সহযোগিতা প্রয়োজন হবে, তাই দেওয়া হবে। জাহিদ আহসান রাসেল বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বেকারের হার ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে হবে। এজন্য এ ধরনের কর্মসূচি বাস্তবে কল্যাণ বয়ে আনবে। তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে বেকারের হার ২৮ শতাংশ।

প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ২৭ লাখ ১৮ হাজার ৬৪৪ জনকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। একই সময়ে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৪০ জনকে আত্মকর্মসংস্থানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হয়েছে। একই সময়ে মোট ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২১ জন প্রশিক্ষিত যুবককে ১ হাজার ২৯ কোটি ২৫ লাখ ৯৬ হাজার টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads