• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

ঝুঁকিতে পড়ছে পোল্ট্রি শিল্প

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৯ নভেম্বর ২০১৯

অবিশ্বাস্যভাবে দাম বেড়েছে পোল্ট্রি ফিড তৈরির কাঁচামালের। এতে পোল্ট্রি খামারিদের কাছে এই খাতটি দিন দিন ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প হয়ে উঠছে। গত এক যুগে (২০০৭-১৮) কাঁচামালভেদে ২৭ থেকে ৩১৬ শতাংশেরও বেশি দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে ফিডের দাম বাড়লেও ডিম ও মুরগির দাম সেভাবে বাড়েনি। ফলে খামারিরা এই শিল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এই অবস্থা চলতে থাকলে দেশীয় পোল্ট্রিশিল্প ধ্বংসের মুখে পড়তে পারে এবং সেই সুযোগে বিদেশিদের হাতে চলে যেতে পারে এর বাজার।

জানা গেছে, পোল্ট্রি ফিড তৈরির জন্য মোট নয় ধরনের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল-প্রোটিন কনসেনট্রেট, ভুট্টা, লাইম স্টোন, হুইট পলিশ, সয়াবিন মিল, রাইস ব্রান, ফিশ মিল, ব্রয়লার ফিড ও লেয়ার ফিড অন্যতম।

এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০০৭ সালে এ নয় ধরনের কাঁচামালের প্রতি কেজির দাম ছিল যথাক্রমে ৩৯ টাকা ২৭ পয়সা, ১৪ টাকা ৭৭ পয়সা, ৫ টাকা ৫০ পয়সা, ১৪ টাকা ৯১ পয়সা, ২০ টাকা ৬৮ পয়সা, ১০ টাকা ৯ পয়সা, ৩৬ টাকা, ২১ টাকা ৮ পয়সা ও ১৮ টাকা ৭৮ পয়সা। তবে ১২ বছরের ব্যবধানে একই পণ্যের প্রতি কেজির দাম বৃদ্ধি পেয়ে যথাক্রমে ৫০ টাকা, ২২ টাকা ৪৩ পয়সা, ১০ টাকা, ২৮ টাকা ২৯ পয়সা, ৪১ টাকা ৯৩ পয়সা, ২১ টাকা ৭১ পয়সা, ১৫০ টাকা, ৪৩ টাকা ৫৭ পয়সা ও ৩৭ টাকা ৭৮ পয়সা দাঁড়িয়েছে। শতকরা হিসাবে এ নয়টি কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ২৭ দশমিক ৩২, ৫১ দশমিক ৮৬, ৮১ দশমিক ৮২, ৮৯ দশমিক ৭৪, ১০২ দশমিক ৭৬, ১১৫ দশমিক ১৬, ৩১৬ দশমিক ৬৭, ১০৬ দশমিক ৬৯ ও ৯৭ দশমিক ৯৮ শতাংশ।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর প্রতি কেজি ভুট্টা ১৬ টাকা ৩০ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৭০ পয়সা, সয়াবিন মিল ৩১ টাকা ৮৬ পয়সা থেকে ৩৮ টাকা, ডিওআরবি ১১ টাকা ৬৩ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৫০ পয়সা, রাইস পলিশ ১৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে ২০ টাকা ৪৮ পয়সা, কর্ন গ্রটেন মিল ৬১ টাকা ৭৫ পয়সা থেকে ৬৫ টাকা, মাস্টার্ড অয়েল কেক ২১ টাকা ৮৮ পয়সা ২৪ টাকা, হুইট ফ্লাওয়ার (৩২% গ্রটেন) ২৩ টাকা থেকে ২৭ টাকা।

এছাড়া লাইমস্টোন (পাউডার) ৮ টাকা ২৫ পয়সাা থেকে ৯ টাকা, লবণ ১৪ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ১৭ টাকা, পাম অয়েল ৫৩ টাকা ৭০ পয়সা থেকে ৬৩ টাকা পয়সা, সয়াবিন অয়েল ৭৪ টাকা থেকে বেড়ে ৭৮ টাকা ৭৫ পয়সা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফিআব-এর সভাপতি এহতেশাম বি শাহজাহান বলেন, গত ১২ বছরে পোল্ট্রি সামগ্রীর দাম সামান্য বেড়েছে। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর থেকে চলতি বছরের বেশ কয়েক মাস পর্যন্ত ডিমের দামও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছিল। তখন বাধ্য হয়ে ডিমপাড়া মুরগিও বিক্রি করে দিতে হয়েছিল খামারিদের। মূল কথা হচ্ছে, উৎপাদন খরচ অনেক বেড়েছে এবং বাড়ছে, কিন্তু খামারিরা ডিম ও মুরগির দাম পাচ্ছেন না। এ অবস্থা চলতে থাকলে দেশের পোল্ট্রিশিল্প পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যাবে। আর দেশীয় পোল্ট্রিশিল্পের বাজার চলে যাবে বিদেশিদের হাতে। তখন আফসোস ছাড়া আর কিছুই করার থাকবে না।

একই প্রসঙ্গে ফিআব মহাসচিব এমডি আহসানুজ্জামান বলেন, পণ্য হ্যান্ডেলিংয়ে বন্দরের অদক্ষতা ও দুর্বল ব্যবস্থাপনার কারণে এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের তুলনায় প্রতি টন ভুট্টা আমদানি করতে ২০ থেকে ২৫ ডলার, অর্থাৎ ৫২ হাজার টনের একটি কনসাইমেন্টের ক্ষেত্রে ১০ থেকে ১৩ লাখ ডলার বা প্রায় ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত খরচ গুনতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমদানিকৃত কাঁচামাল পরীক্ষার জন্য চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মাত্র একটি টেস্টিং ল্যাব আছে। যে পণ্য ছাড় করাতে সাত কর্মদিবসের অধিক সময় লাগা উচিত নয়, তা ছাড় করাতে ২০ থেকে ৪২ দিন পর্যন্ত সময় লাগছে। ভিন্ন ভিন্ন পরীক্ষার জন্য একাধিকবার নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে এবং একাধিক ল্যাবে পাঠানো হচ্ছে। ফলে বিশাল অঙ্কের বিলম্ব মাশুল গুনতে হচ্ছে আমদানিকারকদের, যার বেশির ভাগ অর্থই শিপিং এজেন্সির মাধ্যমে বিদেশে চলে যাচ্ছে। এ সবকিছুই ফিডের উৎপাদন খরচ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads