• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
স্বাভাবিক হয়নি সড়কপথ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

স্বাভাবিক হয়নি সড়কপথ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ নভেম্বর ২০১৯

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনরত ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিকরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিলেও বাস চলাচল পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে গাবতলী ও সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে দূরপাল্লার বাস ছাড়লেও সংখ্যায় এখনো কম। এদিন মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে অর্ধেক বাসও ছাড়েনি।

সায়েদাবাদ আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম বলেন, বুধবার রাত থেকেই বাস চলাচল শুরু হয়েছে। শতভাগ না হলেও পূর্বাঞ্চলের নব্বই শতাংশের বেশি গাড়ি ছেড়ে গেছে।

এর আগে, গত বুধবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল পরিবহন নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে দাবিগুলো বিবেচনার আশ্বাস দিলে ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।

গতকাল সরেজমিনে সায়েদাবাদে গিয়ে দেখা যায়, অধিকাংশ বাস টার্মিনালে সারি সারি অবস্থায় রাখা হয়েছিল। আর কাউন্টারগুলোতেও যাত্রীর সংখ্যা বেশ কম ছিল। জানতে চাইলে হিমাচল পরিবহনের কাউন্টার কর্মী সোবহান বলেন, গতকাল কোনো গাড়ি চলাচল করেনি। আজ কিছু গাড়ি চলছে, তাও খুব কম।

এ প্রসঙ্গে মহাখালী আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল মালেক বলেন, বাস শ্রমিকরা কোনো আন্দোলনে নেই। কিন্তু তারা বাড়ি চলে গিয়েছিল। ফলে সব গাড়ি চলছে না। চলছে পঞ্চাশ শতাংশের কম। উত্তরবঙ্গের কিছু বাস ছেড়ে গেলেও দক্ষিণবঙ্গের বাস একেবারেই চলছে না। ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে যাওয়া এবং রপ্তানি পণ্যবাহী গাড়ি বন্দরে আসতে শুরু করেছে বলে জানান চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক। তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনকারী ট্রাক-কভার্ডভ্যান ও প্রাইম মুভার বন্দরের আশপাশেই ছিল। ধর্মঘট প্রত্যাহারের পর থেকে তারা পণ্য পরিবহন শুরু করেছে। বন্দরের জেটিগুলোতে কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনার নিয়ে যানবাহন বন্দর ছেড়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যবাহী যানবাহনও বন্দরে আসছে।

এদিকে খুলনা রুটে বাস চলাচল গতদিনের মতোই বন্ধ ছিল। ঢাকা-খুলনা রুটের ঠিকানা পরিবহনের মালিক বাবুল মিয়া বাবলু বলেন, গতকাল রাতেই তো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত এসেছে। তারপরও কেন শ্রমিকরা গাড়ি ছাড়তে দেবে না? প্রশাসন কী করছে? কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না? তবে বিকেলের মধ্যেই পরিস্থিতি ‘স্বাভাবিক’ হবে বলে জানিয়েছিলেন বাস-ট্রাক মালিক সমিতির এই নেতা।

খুলনা বিভাগীয় শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক ও বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোর্তজা হোসেন বলেন, যশোর, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, মাগুরা, নড়াইল, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গার পরিবহন শ্রমিকরা এখনো ‘স্বেচ্ছায়’ কর্মবিরতি চালিয়ে যাচ্ছেন।

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে বুধবার ঢাকা থেকে কম পরিসরে বাস ছেড়ে গেলেও গতকাল বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। গতকাল ঢাকা থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, দুদিন বন্ধ থাকার পর আজ ময়মনসিংহ থেকে ঢাকা রুটে বাস চলাচল শুরু করেছে। গতকাল সকাল থেকেই মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও পাটগ্রাম ব্রিজ সংলগ্ন আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশের উদ্দেশে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যতে দেখা গেছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হওয়ায় স্বস্তি ফিরে এসেছে সাধারণ যাত্রীদের মধ্যে।

মাদারীপুর প্রতিনিধি জানান, তিন দিন বন্ধ থাকার পর মাদারীপুরে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। গতকাল সকাল থেকে মাদারীপুর থেকে দূরপাল্লার বাস ছেড়ে গেছে। অভ্যন্তরীণ রুটেও বাস চলাচল ছিল স্বাভাবিক। এতে সাধারণ যাত্রীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছেন।

হিলি প্রতিনিধি জানান, দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে পণ্য পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ফলে ট্রাক চলাচল শুরু হওয়ায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা স্বাভাবিক হয়েছে। এদিকে টানা পাঁচ দিন পর হিলি-বগুড়া পথে বাস চলাচল শুরু হয়েছে।

শরীয়তপুর প্রতিনিধি জানান, শরীয়তপুরের অভ্যন্তরীণ রুটগুলোতে ঢিলেঢালাভাবে বাস চললেও দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। এর ফলে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের। তবে শুক্রবার থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে বলে জানিয়েছেন শ্রমিক নেতারা।

খুলনা প্রতিনিধি জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে খুলনায় চতুর্থ দিনের মতো ধর্মঘট পালন করেন বাসচালক ও শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে খুলনা থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এছাড়া অভ্যন্তরীণ বেশিরভাগ রুটে বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এতে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় যাত্রীদের।

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি জানান, নতুন পরিবহন আইনের কিছু বিধান সংস্কারের দাবিতে টাঙ্গাইলে ধর্মঘট করেছে বাসচালক ও শ্রমিকরা। বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল থেকে কোনো দূরপাল্লার বাস ছেড়ে যায়নি। এতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয় সাধারণ যাত্রীদের।

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি জানান, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে কালও কুড়িগ্রাম থেকে সব রুটে বাস, মিনিবাস চলাচল বন্ধ রাখেন পরিবহন শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ যাত্রীরা।

জামালপুর প্রতিনিধি জানান, নতুন সড়ক আইন সংশোধনের প্রতিবাদে জামালপুরে বাসচালক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট গতকালও অব্যাহত ছিল। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে জামালপুর-ময়মনসিংহ সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হলেও জামালপুর-টাঙ্গাইল সড়কের ধনবাড়ী এলাকায় শ্রমিকরা তাদের অবরোধ কর্মসূচি অব্যাহত রাখেন। তারা জামালপুর-টাঙ্গাইল রুটে চলাচলকারী সব ধরনের যান চলাচলে বাধা দেন বলে জানা গেছে।

এসব জেলা ছাড়াও চুয়াডাঙ্গা, নওগাঁ, ঝিনাইদহে চতুর্থ দিনের মতো বাসচালক ও শ্রমিকদের ধর্মঘট অব্যাহত ছিল বলে আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো রিপোর্ট রয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads