• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

প্রতিরোধে নাস্তানাবুদ দখলদাররা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০১৯

বিজয়ের মাস ডিসেম্বরের দ্বিতীয় দিন আজ সোমবার। ৪৮ বছর আগে ১৯৭১ সালের এদিনে বাংলার দামাল ছেলেরা মাতৃভূমি বাংলাকে পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর হাত থেকে উদ্ধার করতে প্রচণ্ড গতিতে এগিয়ে যেতে থাকেন। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষিপ্রতায় প্রতিদিন কোণঠাসা হতে থাকে পাকিস্তানি বাহিনী। নভেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাদের সংঘাত তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে।

বাঙালি জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধের অবিস্মরণীয় গৌরবদীপ্ত চূড়ান্ত বিজয় এ মাসের ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয়। স্বাধীন জাতি হিসেবে সমগ্র বিশ্বে আত্মপরিচয় লাভ করে বাঙালিরা। অর্জন করে নিজস্ব ভূখণ্ড। আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা। ভাষার ভিত্তিতে যে জাতীয়তাবাদ গড়ে উঠেছিল, এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর বিজয়ের মাধ্যমে ঘোষিত স্বাধীনতা পূর্ণতা পায় এদিনে।

১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সীমান্ত এলাকাগুলোতে সংঘাত তীব্র আকার ধারণ করলে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয় ভারতীয় মিত্রবাহিনী। এভাবেই দেশব্যাপী যৌথবাহিনীর প্রতিরোধে নাস্তানাবুদ হতে থাকে পাকিস্তানি দখলদার সেনারা। ২ ডিসেম্বরের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা নিয়ে ওই সময় প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যানের একটি প্রতিবেদনে উঠে আসে পাকিস্তান বাহিনীর বিরুদ্ধে যৌথবাহিনীর অগ্রযাত্রার কথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ দলিলপত্রের চতুর্দশ খণ্ডে অন্তর্ভুক্ত হয় এ প্রতিবেদন।

মুক্তিযোদ্ধাদের একের পর এক বীরত্বসূচক বিজয়ের কারণে সারা দেশ তখন বিজয়ের স্বপ্নে বিভোর। ডিসেম্বরের শুরুর দুই দিনে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে মুক্তিকামী বীর মুক্তিযোদ্ধারা বোমা বিস্ফোরণ ঘটান। রামপুরা আর মালিবাগে বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনের ক্ষতিসাধন করতে সক্ষম হন। ১৯৭১ সালের ২ ডিসেম্বর আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে। দেশজুড়ে গেরিলা আক্রমণে মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুদের নাস্তানাবুদ করে পিছু হটতে বাধ্য করেছিলেন। এদিনে সীমান্ত-সংঘাত আরো তীব্র আকার ধারণ করে।

দিনাজপুরে পরাজিত হয়ে পিছু হটেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। আর মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে ভারতীয় সেনাদল পঞ্চগড় মুক্ত করে। তারপর এগিয়ে যায় ঠাকুরগাঁওয়ের দিকে। সীমান্তবর্তী অঞ্চলে হানাদারদের অবস্থানের ওপর গোলাবর্ষণ করা হয়েছিল। মুহুর্মুহু আক্রমণে প্রাণভয়ে থর থর করে কেঁপে উঠেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। জীবনবাজি রেখে মুক্তিযোদ্ধারা এগিয়ে চলে চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে।

অন্যদিকে বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা ও বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে গতকাল রোববার এবারের বিজয়ের মাসের প্রথম দিন উদযাপিত হলো। কর্মসূচির মধ্যে ছিল- শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিজয়ের মাসের প্রথম দিন বিজয় দিবস উপলক্ষে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বর্ণাঢ্য ‘বিজয় র্যালি’ বের করা হয়। বিজয় র্যালি শেষে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরে এক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ শিক্ষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ব্যবসা, বাণিজ্য, অর্থনীতিসহ সব ক্ষেত্রে অসাধারণ অগ্রগতি অর্জন করেছে। প্রধানমন্ত্রীর হাতকে আরো শক্তিশালী করে উন্নয়নের এই ধারা অব্যাহত রাখার জন্য তরুণ প্রজন্মকে শপথ নিতে হবে।’

এর আগে তিনি বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ থেকে বিজয় র্যালির উদ্বোধন করেন। র্যালিটি টিএসসি হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।

ঢাবি কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল, প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী, ডাকসুর ভিপি মো. নুরুল হক, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভিন্ন হলের প্রভোস্টসহ বিপুলসংখ্যক শিক্ষক, ছাত্রছাত্রী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী র্যালিতে অংশ নেন। রেজিস্ট্রার এনামউজ্জামান আলোচনা সভা পরিচালনা করেন। আলোচনা পর্বের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংগীত বিভাগের উদ্যোগে জাতীয় সংগীত ও দেশাত্মবোধক গান পরিবেশিত হয়।

মহান বিজয় দিবস ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু পরিষদের উদ্যোগে মাসব্যাপী কর্মসূচির উদ্বোধন ও আলোচনা সভা গতকাল সকালে পরিষদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। পদক্ষেপ বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে জাতীয় সংগঠন ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে ‘বিজয় মাসের প্রথম প্রভাত’ শীর্ষক আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সকাল ৭টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাকিম চত্বরে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাদল চৌধুরী।

এফ এফ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে গতকাল সকালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সামনে থেকে একটি বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। র্যালিটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শিখা চিরন্তনে গিয়ে শেষ হয়। এফএফ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এস এম জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে র্যালিপূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। বিশেষ অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। র্যালিতে আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কমান্ডসহ বিভিন্ন প্রজন্ম সংগঠন অংশ নেয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads