• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

সংসদীয় কমিটির দাবি

সৌদিতে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধ হোক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০২ ডিসেম্বর ২০১৯

সৌদি আরবে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধে সংসদ অধিবেশনে দাবি জানিয়েছে দুটি সংসদীয় কমিটি। এছাড়া প্রবাসী নারীদের নির্যাতন বন্ধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে বলা হয়েছে। গত ২৫ নভেম্বর প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি এবং ২৭ নভেম্বর পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এসব দাবি জানানো হয়।

বৈঠক সূত্র জানায়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে বাংলাদেশি নারীশ্রমিকদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের একের পর এক ঘটনা সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে। সৌদি আরবে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধে সংসদ অধিবেশনে এমপিরা দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন মহল থেকেও একই দাবি উঠেছে।

এ পরিপেক্ষিতে দ্রুত প্রবাসে কর্মরত নারী নির্যাতন বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এমনকি কোনো নারী নির্যাতনের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে পররাষ্ট্র বা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষে থেকে বাদী হয়ে মামলা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি নারীদের নিশ্চিন্তে কাজ করতে বলা হয়েছে। কোনো নারীশ্রমিক নির্যাতনের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দূতাবাস কিংবা পররাষ্ট্র ও প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে জানানোর জন্য বলা হয়েছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশি নারীকর্মীদের মধ্যে নির্যাতনের শিকার এক শতাংশেরও কম। প্রবাসে কর্মরত নারীদের মধ্যে গৃহকর্মীরাই বেশি নির্যাতনের শিকার হন। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে কর্মরত বাংলাদেশি নারীশ্রমিক অত্যাচার-নির্যাতনের শিকার না হন সেজন্য এ দুই মন্ত্রণালয়কে একসঙ্গে কাজ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৪ সালের জুন থেকে এ পর্যন্ত (চলতি মাসের ২০ নভেম্বর পর্যন্ত) ৭৪টি দেশে কাজ নিয়ে আট লাখ ৬৮ হাজার ৩৬৩ জন নারীকর্মী বিদেশ গেছেন। এর মধ্যে সৌদি আরবে গেছেন তিন লাখ ৩০ হাজার ৫৯০ জন। এদের মধ্যে আট হাজার কর্মী ফিরে এসেছেন এবং ৫৩ জন নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন।

বৈঠকের বিষয়ে সংসদ সচিবালয় থেকে জানানো হয়, তুলনামূলকভাবে পুরুষ কর্মীদের থেকে নারীকর্মীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠান। পুরুষরা তাদের আয়ের ৬০ শতাংশ রেমিট্যন্সি পাঠান, সেখানে নারীরা পাঠান ৯০ শতাংশ।

জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, অধিকতর সুরক্ষা নিশ্চিত করে সৌদি আরবসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশে নারীশ্রমিক পাঠানো অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিদেশে নারীশ্রমিক পাঠানো বন্ধের পক্ষে আমরা নই। আমরা মনে করি, তাদেরকে বিদেশে পাঠানো অব্যাহত রাখতে হবে। তবে যেসব অভিযোগ আছে, সেগুলো গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে। দরকার হলে সৌদি সরকারের সঙ্গে নতুন করে চুক্তি করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

সৌদি আরবে কর্মরত গৃহকর্মীদের অভিযোগ শুনতে অনলাইন ব্যবস্থা মুসানেদ (সহায়তা) ২০১৫ সাল থেকেই কার্যকর রয়েছে। এ ব্যবস্থায় নির্যাতিত গৃহকর্মীরা অনলাইনে আবেদন করতে পারেন। পাশাপাশি ফোনেও অভিযোগ করতে পারেন। কিন্তু সৌদি আরব থেকে নির্যাতিত নারীরা দূতাবাসের শেল্টারহোমে অভিযোগ না করে দেশের আত্মীয়দের কাছে অত্যাচারের কথা বলেন। তবে অভিযোগ যেখান থেকে করা হোক, সব অভিযোগ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

একই সঙ্গে নারীশ্রমিকদের বিদেশে পাঠানোর ক্ষেত্রে অনিয়মের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলোকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়েছে।

বৈঠকের কার্যপত্র থেকে জানা গেছে, গত ১০ বছরে ৪০ হাজার মরদেহ বিদেশ থেকে আনা হয়েছে। মরদেহ পরিবহন ও দাফনে ৯৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে এবং তাদের পরিবারকে ৭২০ কোটি ২৮ লাখ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমেদ বলেন, বিদেশে নারীশ্রমিকরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, সেজন্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে। সৌদি আরব দূতাবাসের চার্জ দ্য অ‌্যাফেয়ার্সকে ডেকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সৌদি আরবে বাংলাদেশের যিনি রাষ্ট্রদূত রয়েছেন, তাকেও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ওই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিষয়টি তোলার জন্য।

উল্লেখ্য, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৮৫০ জন নারী দেশে ফিরে আসেন। তাদের মুখে সেখানে যৌন নিপীড়নসহ নানা ধরনের নির্যাতনের খবর গণমাধ্যমে আসার পর বিভিন্ন নারী সংগঠন সরব হয়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads