• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
ইতিহাসে মোড় ঘোরানোর দিন

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

ইতিহাসে মোড় ঘোরানোর দিন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯

৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১। স্বাধীনতার জন্য বাঙালিদের লড়াই যখন সর্বাত্মক যুদ্ধের রূপ পেতে চলেছে, ঠিক সেই সময় জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে সোচ্চার ভারতের ১১টি এয়ারবেজে আচমকা আক্রমণ চালায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী। ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, অবন্তীপুর, যোধপুর, আম্বালা, আগ্রাসহ কয়েকটি শহরে একযোগে হামলা চালায় তারা। এ পরিস্থিতিতে পরদিন ভোরে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে লিপ্ত হয় বাংলাদেশ-ভারতের নেতৃত্বাধীন যৌথ বাহিনী। ২১ নভেম্বর এই যৌথ বাহিনী গঠন করা হয়েছিল।

যৌথ বাহিনীর পাল্টা আক্রমণ এতই তীব্র ছিল যে, পূর্ববাংলার বিভিন্ন এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে পাকিস্তান।

ভারত-পাকিস্তান সীমান্তের বিভিন্ন স্থানেও তাদের অবস্থা শোচনীয় হয়ে ওঠে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঠেকাতে ওই দিনই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি সিনিয়র জর্জ বুশ। মিত্র শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরোধিতায় সে প্রস্তাবে হেরে যায় যুক্তরাষ্ট্র। এতে পাকিস্তান সরকারের কানেও পরাজয়ের পদধ্বনি স্পষ্ট হয়ে ওঠে।

আজ ৩ ডিসেম্বর, মঙ্গলবার। ১৯৭১ সালে প্রায় নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসে এক মোড় ঘোরানো দিন। পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ লড়াই শুরুর নির্ধারক এক দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী ভারতীয় বিমান ঘাঁটিগুলোতে বোমাবর্ষণ ও পশ্চিম সীমান্তের বিভিন্ন স্থানে আর্টিলারি গোলা নিক্ষেপ শুরু করলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে আনুষ্ঠানিক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। সেইসঙ্গে সূচিত হয় পূর্ব রণাঙ্গনে বাংলাদেশ-ভারত মিলিত মিত্র বাহিনীর যুদ্ধ-তৎপরতার চূড়ান্ত অধ্যায়।

বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামকে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে যুদ্ধ হিসেবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে দেখানোর জন্য ৩ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী ভারতে হামলা শুরু করে। এদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী কলকাতায় ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভায় ভাষণ দিচ্ছিলেন। পাকিস্তানের হামলার খবরে তিনি দিল্লি ফিরে যান। গভীর রাতে জাতির উদ্দেশে বেতার ভাষণে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের যুদ্ধ এখন ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হয়ে উঠেছে। পাকিস্তানের আক্রমণ ঐক্যবদ্ধভাবেই প্রতিহত করতে হবে।’

পাকিস্তানের ভারত আক্রমণের জের ধরেই গঠন করা হয় বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ড। এর আগে ভারত মুক্তিবাহিনীর সমর্থনে সীমান্ত অতিক্রম করলেও তা ছিল সীমিত আকারে। কিন্তু পাকিস্তান ভারতকে আক্রমণ করায় তা আর সীমিত থাকেনি। ভারত ও বাংলাদেশ বাহিনী সম্মিলিতভাবে পূর্ব সীমান্তে অভিযান শুরু করে। বাংলাদেশে পাকিস্তানি বাহিনীর অবস্থানকে ঘিরে ফেলার জন্য সাতটি এলাকা দিয়ে আক্রমণ পরিচালিত হয়। সেই রাতেই ঢাকা এবং আশপাশে পাকিস্তানি হানাদারদের ঘাঁটি লক্ষ্য করে শুরু হয় বিমান হামলা।

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর সফল হামলায় নারায়ণগঞ্জের গোদনাইল ও চট্টগ্রামের ফুয়েল পাম্প মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একের পর এক যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন ও ক্ষতিগ্রস্ত করে বাংলার মুক্তিযোদ্ধারা পাক সেনাদের কোণঠাসা করে ফেলে।

এদিনের আরো একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন হলো- এদিন বরগুনায় মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমণের মুখে পাক সেনারা পরাজয় বরণ করে। মুক্ত হয় বরগুনা জেলা। ৩ ডিসেম্বর ভারতে পাক বাহিনীর হামলার পরই বাংলাদেশ-ভারত যৌথ কমান্ডের সম্মিলিত সর্বাত্মক লড়াই শুরু হয়। পশ্চিম ও পূর্ব রণাঙ্গনে গর্জে ওঠে কামান। ভারতীয় বিমানবাহিনী হামলা চালাতে শুরু করে। এতদিন পাক বাহিনীর বোমার আওয়াজে মানুষ আতঙ্কে থাকলেও মুক্তিযোদ্ধারা বিমান নিয়ে পাল্টা আক্রমণ শুরু করায় আনন্দিত-উদ্বেলিত হন তারা। তাদের সামনে দেখা দেয় মুক্তির আলোকচ্ছটা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads