• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

এখন শুধুই বাড়ে, কমে না

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯

‘বাজারে যে যার মতো বাড়িয়ে যাচ্ছে দাম। পেঁয়াজের ঝাঁজ যেন লন্ডভন্ড করে দিচ্ছে অন্যান্য পণ্যের স্থিতিশীল প্রবণতাকেও। এর আগে কখনো একই সঙ্গে এত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি দেখিনি। আগে দু’একটা পণ্যের দাম বাড়লেও অন্যকিছুর দাম কমত। এখন সবই শুধু বাড়ে, কমে না কিছুই।’ খিলগাঁও রেলগেট এলাকায় বাজার নিয়ে ফেরার সময় এমন মন্তব্য করেছেন ষাটোর্ধ্ব বয়সের আবদুল মাজেদ।

তার কথার প্রমাণ মেলে সরকারি সংস্থার হিসেবেও। সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়মিত বাজার দরের হিসাব রাখে। সংস্থাটির হিসাবে ঢাকার বাজারে এক মাসে নিত্যপ্রয়োজনীয় ১৮টি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়েছে। যা মধ্যে রয়েছে- চাল, আটা, ময়দা, ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, আদা, রসুন, পেঁয়াজ, আলু ও চিনির মতো পণ্য। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। বছর ব্যবধানে এই নিত্যপণ্যটির মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে ৬২৩ শতাংশ পর্যন্ত।

একটি পরিবারকে এসব পণ্য প্রায় প্রতিদিনই কিনতে হচ্ছে। এতে পরিবারের মাসিক ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার টাকা বেড়েছে বলে দাবি করেন রামপুরার বাসিন্দা মাহফুজা পারভীন। তিনি বলেন, স্বল্প আয়, কড়ায় গণ্ডায় হিসাব করে খরচ করতে হয়। এখন বাজার খরচ অনেক বাড়তি। চারজনের সংসারে আগে প্রতি মাসে ব্যয় হতো সাড়ে ৫ হাজার টাকা। তবে গত মাসে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৮ হাজার। এর মধ্যে পেঁয়াজ, রসুন ও আদায় ব্যয় হয়েছে অস্বাভাবিক।

এ গৃহিণী আক্ষেপ করে জানান, পেঁয়াজের দামের কারণে গরুর মাংস খাননি তিনি। তার ভাষায়, ‘এক কেজি মাংস খেতে প্রায় দেড়শ টাকার মসলা লাগবে। এই ভয়ে মাংস কিনিনি।’ এখনো বাজারে দেশি পেঁয়াজ ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে চীনা পেঁয়াজ মিললেও তার স্বাদ ও রং ভালো না হওয়ার কারণে কিনছে না অনেকে। অন্যদিকে দেশি রসুন ২০০ টাকা কেজি চাইছেন বিক্রেতারা। চীনা আদাও ১৮০ টাকা কেজি।

গতকাল অনেকেই পুরো মাসের সদাই কিনতে বাজারে এসেছিলেন। এমন এক ক্রেতা জাহিদ আনোয়ার বলেন, আড়াই কেজি পেঁয়াজ, এক কেজি আদা ও এক কেজি রসুন কিনে হাজার টাকা শেষ। বোঝেন অবস্থা।

এদিকে টিসিবির হিসাবে, এক বছর আগের তুলনায় এখন পেঁয়াজের দাম মানভেদে ৫২৮ থেকে ৬২৩ শতাংশ, রসুন ২৪৪ শতাংশ ও আদা ১১৪ শতাংশ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া গরম মসলার মধ্যে এলাচসহ অধিকাংশ মসলার দাম বেশি। অন্যদিকে বাজারে শীতের সবজির দামও বেশি। যদিও এসবের সরবরাহও প্রচুর। তারপরেও দাম কমছে না। আলুসহ বাজারে শীতকালীন সবজির প্রচুর সরবরাহ থাকলেও দাম বেশ চড়া। এক মাসের এসব ক্রেতার নাগালে আসেনি। অন্য বছরেও শুরুতে এসব সবজির দাম বেশি থাকলেও সরবরাহ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কমে আসে।

এমন পরিস্থিতিতে রামপুরা বাজারে বিল্লাল হোসেন নামে এক ক্রেতা বলেন, ‘বাজার যেন মগের মুল্লুক। যে দাম বলছে, সে দামেই কিনতে হচ্ছে। দামাদামির সুযোগ নেই, কথাই বলা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে বিক্রেতারা সব এক হয়ে আগে থেকে দাম ঠিক করেছে। তাদের ভাবটা ‘গলাকাটা’।

তবে ওই বাজারে বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারি বাজারেরও ভাব ঠিক নেই। কোনো কিছু কম দামে কেনা যাচ্ছে না। তাই কমে বিক্রিরও সুযোগ নেই। আমরা যে দামে কিনে আনি, তার থেকে কিছু লাভ রেখে বিক্রি করি।

এদিকে পেঁয়াজের দামও এখনো কমেনি। পাশাপাশি বাজারে বেড়েছে অধিকাংশ পণ্যের দামই। এর মধ্যে সরু চালের দামও কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা, সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৩ থেকে ৫ টাকা, আটার দাম কেজিতে ২ টাকা, ময়দার দাম ৮ টাকা, ডালের দাম ১০ থেকে ১৫ টাকা ও ডিমের ডজন এখন ১০ টাকা বেশি।

টিসিবির তালিকায় থাকা ৩৬ ধরনের পণ্যের মূল্যতালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এর মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ৩২টি পণ্যের দামই। কমেছে শুধু ৪ ধরনের পণ্যের দাম।

এমন পরিস্থিতিতে স্বল্প আয়ের মানুষ চরম বিপদে রয়েছে। সংসার চালাতে তার বেহালদশা নিত্যপণ্যের অস্বাভাবিক দরবৃদ্ধিতে। আর তার থেকেও বেশি বিপদে রয়েছে দরিদ্র মানুষ। তারা বাজারে পুরোদমে নাকানি-চুবানি খাচ্ছে। এর মধ্যে চাল ও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি, এরপর লবণকাণ্ডে রীতিমতো তাদের পকেট কেটেছে।

টিসিবির তালিকায় থাকা নিত্যপণ্যগুলোর মধ্যে এক মাসের ব্যবধানে চালের দাম ১১ শতাংশ, খোলা আটা ৭ শতাংশ, খোলা ময়দা ৭ শতাংশ, সয়াবিন ৩ শতাংশ, পাম তেল ৮ শতাংশ, ডাল ৪ শতাংশ, পেঁয়াজের দাম ৯০ শতাংশ বেড়েছে। অর্থাৎ অপরিবর্তিত রয়েছে শুধু চিনির দাম। যদিও বাজার দরের থেকেও এ সংস্থার হিসেবে পণ্যের দাম বেশ কম থাকে সবসময়ই।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads