• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
গঠনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে গতকাল জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭-২০১৮ বিতরণ অনুষ্ঠানে অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামানকে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার প্রদান করেন

ছবি -পিআইডি

জাতীয়

গঠনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণের আহ্বান

  • ডেস্ক রিপোর্ট
  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সবচেয়ে দ্রুত মানুষের মাঝে মেসেজ পৌঁছানো যায়। সেজন্য জীবনধর্মী, সুন্দর সমাজ ও দেশ গঠনমূলক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। যেন নতুন প্রজন্ম সন্ত্রাস, মাদক ও জঙ্গিবাদের প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করে।

গতকাল রোববার বিকেলে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭ ও ২০১৮ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশি চলচ্চিত্র ও নাটকের ভূয়সী প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি নিজে খুব বেশি সিনেমা দেখার সুযোগ না পেলেও যখন আমি বিদেশে যাই, আমাদের বিমানে উঠলে আমি বিমানে বসে সিনেমা দেখি। আমাদের বাংলা বইগুলো খুঁজে খুঁজে আমি দেখি। আমার এত ভালো লাগে এবং এত চমৎকার চমৎকার সিনেমা করা হয়! সত্যি প্রত্যেকটা বই যখনই যেটা দেখি আমার চমৎকার লাগে, খুব ভালো লাগে। সেজন্য সবাইকে আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আমাদের যে মেধা আছে সেটা দিয়ে যেন আরো সুন্দর সুন্দর চলচ্চিত্র নির্মাণ হোক। সেটাই আমি চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, আসলে এমনি তো সময় পাই না। ফাইল দেখতে দেখতে আর ওই নথি পড়তে পড়তেই দিন কেটে যায়। সেটাই হচ্ছে সমস্যা। তবে মাঝে মাঝে টেলিভিশনে একটু একটু করে নাটক, হয়তো সব দেখতে পাই না। কিছু কিছু দেখি। তবে অন্য জায়গায় যেমন শুধু ওই শাড়ি আর গহনার কম্পিটিশন আর খুনসুটিপনা দেখি, আমাদের প্রত্যেকটা নাটকের ভেতরে এত বেশি জীবনধর্মী স্পর্শ রয়েছে, যার থেকে অনেক কিছু জানা যায়, শেখা যায়, অনেক কিছু বোঝা যায়। কাজেই আমি সেদিক থেকে বলব, আমাদেরগুলো সব থেকে শ্রেষ্ঠ।

বাংলাদেশের অভিনয় শিল্পীদের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের মানুষের মেধার কোনো কমতি নেই। তাদের মেধা কিন্তু অনেক বেশি। পৃথিবীর অনেক দেশ থেকে আমাদের দেশের মানুষ অনেক মেধাবী। আমরা তো দেখি আমাদের এখানকার অনেক চিত্রশিল্পী পাশের দেশে গেলে আরো ভালো কাজ করে এবং সেখানে তাদের একটা স্থান করে নিতে পারে। তাহলে আমরা নিজের দেশেও কেন পারব না আরো উন্নত মানের ছবি করে অন্য দেশের মানুষকে আকর্ষণ করতে? আমাদের নিজস্ব যে মেধা, যে শক্তি, যে মনন সেগুলো দিয়ে আমরা আমাদের মতো করে তৈরি করে আমরা বিশ্ব দরবারে নিজেদের একটা অবস্থান তৈরি করে নিতে পারি। সেদিকে আমাদের আরো বেশি দৃষ্টি দেওয়া দরকার বলে আমি মনে করি।

সমাজ বিনির্মাণে চলচ্চিত্রের গুরুত্বের কথা তুলে ধরে এই মাধ্যম ব্যবহার করে মানুষের চিন্তা, চেতনা, মননে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। 

তিনি বলেন, সমাজ সংস্কার বা সমাজের ভালো দিকগুলো তুলে ধরা এবং মানুষের মাঝে গভীর দাগ কাটতে পারে, মানুষকে আরো সুন্দর পথে চলার প্রেরণা দিতে পারে এই চলচ্চিত্র। কাজেই আমি মনে করি, জীবনঘনিষ্ঠ চলচ্চিত্র যত বেশি নির্মাণ করা যাবে আমাদের সমাজের জন্য সেটা তত বেশি মঙ্গলজনক হবে।

মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সঙ্গে এসব বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে চলচ্চিত্রেরও ভূমিকা রাখার সুযোগ থাকার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, বর্তমান যুগে এই যে মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি আমাদের সমাজকে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে এর বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে। শুধু আইনগত অভিযান দিয়েই কিন্তু সমাজকে এর থেকে রক্ষা করা যাবে না। এর জন্য দরকার মানুষের ভেতরের চেতনাটাকে আরো উদ্ভাসিত করা। এর খারাপ দিকটা তুলে ধরা আর ভালো থাকলে সেই ভালো দিকটা মানুষের সামনে উপস্থাপন করা। চলচ্চিত্র এখানে বিরাট একটা ভূমিকা রাখতে পারে। কাজেই সেদিকে আপনারা আরো বেশি নজর দেবেন, সেটাই আমরা চাই। কারণ প্রত্যেকটা ঘটনা বা কাহিনী যখন তৈরি হবে সেটা যেন জীবনভিত্তিক হয়। জীবনের বৈচিত্র্য যেন তুলে ধরে। মানুষের ভেতরের ভালো মননগুলো যেন বিকশিত হতে পারে, সেদিকে বিশেষভাবে আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে।

শোষিত-বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন সংগ্রামের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের উন্নয়নে জাতির জনকের ভূমিকার কথা স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, জাতির পিতাকে হত্যার পর আমরা শুধু আর্থসামাজিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি তা না; আমাদের ইতিহাস যেমন বিকৃত করা হয়েছিল আবার আমাদের সাংস্কৃতিক জগতেও অপসংস্কৃতির প্রচলনটা খুব বেশি দেখতে পেলাম। এমনকি এমন এক জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল যে পরিবার-পরিজন, ছেলেমেয়ে নিয়ে সিনেমা হলে গিয়ে সিনেমা দেখার পরিবেশটা ছিল না। যা সমাজের ওপর একটা বিরাট আঘাত হয়ে এসেছিল। ধীরে ধীরে সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য চলচ্চিত্র শিল্পী, কলাকুশলীদের ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হল চালু করতে হল মালিকদের সঙ্গে আলোচনার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আসলে আমাদের যেটা করতে হবে এখন সমস্ত জেলা, উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত মানুষের কিন্তু আস্তে আস্তে ক্রয়ক্ষমতা বাড়ছে। আর্থিক সচ্ছলতা বাড়ছে। কিন্তু একটা বিনোদনের ব্যবস্থা যাতে ভালোভাবে হয় সেদিকে আমাদের বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। আমাদের মফস্বলের সিনেমা হলগুলো যেন ভালোভাবে চলতে পারে এবং ডিজিটালাইজড যাতে হয়, সেদিকেও আমাদের দৃষ্টি দিতে হবে অর্থাৎ আধুনিক যুগের সঙ্গে যেন তাল মিলিয়ে তারা চলতে পারে। এই ক্ষেত্রে যা যা সহযোগিতা দরকার সেটা আমরা করতে পারব।

গতকাল ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ২০১৭ ও ২০১৮’ অনুষ্ঠানে চলচ্চিত্রশিল্পে গৌরবোজ্জ্বল অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ বিজয়ী শিল্পীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. মুরাদ হাসান এবং তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হাসানুল হক ইনু। স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য সচিব আবদুল মালেক।

এর আগে গত ৭ নভেম্বর ২০১৭ ও ২০১৮ সালের যথাক্রমে ২৭ এবং ২৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছিল।

বিশিষ্ট চলচ্চিত্র অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান এবং অভিনেত্রী সালমা বেগম সুজাতা যৌথভাবে চলচ্চিত্র জগতে তাদের অবদানের জন্য ২০১৭ সালের আজীবন কৃতিত্বের পুরস্কার অর্জন করেছেন। অভিনেতা, প্রযোজক ও পরিচালক এমএ আলমগীর এবং অভিনেতা প্রবীর মিত্র ২০১৮ সালের আজীবন পুরস্কার অর্জন করেছেন।

২০১৭ সালের সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার জিতেছে ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এবং ২০১৮ সালের পুরস্কার জিতেছে ‘পুত্র’।

বদরুল আনাম সৌদকে তার চলচ্চিত্র ‘গহীন বালুচর’ ২০১৭ সালের জন্য সেরা পরিচালক এবং মুস্তাফিজুর রহমান মানিক তার ‘জান্নাত’ চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৮ সালের জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন।

শাকিব খান এবং মাহবুবুল আরেফিন শুভ যৌথভাবে ২০১৭ সালে ‘সত্তা’ এবং ‘ঢাকা অ্যাটাক’ ছবিতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন।

ফেরদৌস আহমেদ এবং সাদিক মো. সাইমন (সাইমন সাদিক) ২০১৮ সালের জন্য যথাক্রমে ‘পুত্র’ এবং ‘জান্নাত’ চলচ্চিত্রের জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন।

‘হালদা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য নুসরাত ইমরোজ তিশা ২০১৭ সালের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন এবং ২০১৮ সালের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার ‘দেবী’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য পেয়েছেন জয়া আহসান।

‘গহীন বালুচর’-এ অভিনয়ের জন্য ২০১৭ সালের সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন মো. শাহাদাত হোসেন এবং ‘জান্নাত’-এ অভিনয়ের জন্য ২০১৮ সালের সেরা সহ-অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন আলী রাজ।

‘গহীন বালুচর’ ও ‘হালদা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১৭ সালের সেরা সহ-অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে সুবর্ণা মুস্তাফা ও রুনা খান এবং ‘মেঘকন্যা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য ২০১৮ সালের পুরস্কার পেয়েছেন সুচরিতা।

২০১৭ সালের ‘হালদা’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা খলনায়কের পুরস্কার পেয়েছেন জাহিদ হাসান এবং ২০১৮ সালের ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য সেরা খলনায়কের পুরস্কার পেয়েছেন সাদেক বাচ্চু।

‘তুমি রবে নীরবে’ চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৭ সালের সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন এম ফরিদ আহমেদ হাজরা এবং ‘জান্নাত’ চলচ্চিত্রের জন্য ২০১৭ সালের সেরা সংগীত পরিচালকের পুরস্কার পেয়েছেন ইমন সাহা।

‘সত্তা’ ছবিতে ‘তোর প্রেমেতে অন্ধ’ গানটির জন্য ২০১৭ সালের সেরা পুরুষ সংগীত শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন মাহফুজ আনাম জেমস এবং ‘পুত্র’ ছবিতে ‘যদি দুঃখ ছুঁয়ে’ গানটির জন্য ২০১৮ সালের সেরা পুরুষ সংগীত শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন নাইমুল ইসলাম রাতুল।

‘সত্তা’ ছবিতে ‘না জানি কোন অপরাধে’ গানটির জন্য ২০১৭ সালের সেরা নারী সংগীত শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন মমতাজ বেগম এবং ‘পুত্র’ ছবিতে ‘ভুলে মন অভিমান’ গানের জন্য সাবিনা ইয়াসমিন ও ‘একটি সিনেমার গল্প’ ছবিতে ‘গল্প কথার ওই’ গানের জন্য আঁখি আলমগীর যৌথভাবে ২০১৮ সালের সেরা নারী সংগীত শিল্পীর পুরস্কার পেয়েছেন।

সেরা ডকুমেন্টারি বিভাগে ২০১৭ সালের জন্য বাংলাদেশ টেলিভিশনকে ‘বিশ্ব আঙিনায় অমর একুশে’ সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে এবং ২০১৮ সালের জন্য ফরিদুর রেজা সাগরকে ‘রাজাধিরাজ রাজ্জাক’ সেরা চলচ্চিত্রের জন্য পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads