• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ করা উচিত: রাষ্ট্রপতি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ০৯ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ (ঢাবি) দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় অংকের টাকার বিনিময়ে যে সান্ধ্যকালীন (ইভিনিং) শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে আসছে, তা বন্ধ করা উচিত বলে মনে করেন রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য মো. আবদুল হামিদ।  

তিনি বলেন, টাকার বিনিময়ে এই সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রম ভালো লাগে না। অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখন দিনে সরকারি আর রাতে বেসরকারি চরিত্র ধারণ করেছে। বিশ্বদ্যিালয়গুলো সন্ধ্যায় মেলায় পরিণত হয়। এটা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না বলেও জানান রাষ্ট্রপতি। 

আজ সোমবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তব্যদানকালে তিনি এসব কথা বলেন। 

আবদুল হামিদ বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কিছু শিক্ষক নিয়মিত কোর্সের ব্যাপারে অনেকটা উদাসীন। কিন্তু ইভিনিং কোর্স, ডিপ্লোমা কোর্স, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নেয়ার ব্যাপারে তারা খুবই সিরিয়াস। কারণ, এগুলোতে নগদ প্রাপ্তি থাকে।’

সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের অনিয়ম তুলে ধরে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আমি শুনেছি, তাদের একটা বিষয় ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস। এতে তাদের ২২টা কোর্স। প্রতি কোর্সে সাড়ে ১০ হাজার টাকা। এতে দুই লাখ ৩০ হাজার টাকার ওপরে হয়। এর অর্ধেক শিক্ষকরা পায়, আর অর্ধেক বিভাগ পায়। বিভাগের টাকা কী হয় জানি না, কিন্তু শিক্ষকরা পাচ্ছে। আমি এটাও জানি, যাদের শুধু পিএইচডি আছে, শুধু তারাই ক্লাস নেয়।’

সান্ধ্যকালীন শিক্ষা কার্যক্রমের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, ‘মনে রাখবেন, বিশ্ববিদ্যালয় চলে জনগণের টাকায়। সুতরাং, এর জবাবদিহিও জনগণের কাছে।’

অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দায় এড়াতে পারেনা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নিলে এসব অপ্রত্যাশিত ঘটনা অনেকাংশে রোধ করা সম্ভব।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সম্প্রতি দেশের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অমানবিক ও অনভিপ্রেত ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার্থীদের সুনাম ক্ষুণ্ণ হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে জ্ঞান অর্জনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়, লাশ হয়ে বা বহিষ্কৃত হয়ে বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য নয়। আমি আশা করব, ভবিষ্যতে কর্তৃপক্ষ সময়মতো সঠিক পদক্ষেপ নেবে।’

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবদুল হামিদ বলেন, ‘তোমাদের মা-বাবা অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করান। এমন অনেক পরিবার আছেন যারা সর্বস্ব দিয়ে তাদের ছেলেমেয়েদের মানুষ করার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠান। তোমাদের মূল দায়িত্ব হলো লেখাপড়া করা এবং দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে নিজেদের গড়ে তোলা। তোমরা এমন কোনো কাজ করবে না যাতে তোমাদের পরিবার ও প্রতিষ্ঠানের সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সমাবর্তনে বক্তা ছিলেন, জাপানের টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কসমিক রে রিসার্চ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. তাকাকি কাজিতা। অনুষ্ঠানে তাকে সম্মানসূচক ‘ডক্টর অব সাইন্স’ ডিগ্রি দেওয়া হয়।

এর আগে বেলা ১১টা ৫৫ মিনিটে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল প্রাঙ্গণ থেকে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হয়। এরপর দুপুর ১২টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে শুরু হয় সমাবর্তনের মূল আনুষ্ঠানিকতা। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিতব্য এ সমাবর্তনে মোট ২০ হাজার ৭৯৬ জন গ্রাজুয়েট অংশগ্রহণের রেজিষ্ট্রেশন করেছিলেন। এদের মধ্যে মোট ১০ হাজার ৬৭৩ জন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রাজুয়েট এবং ১০ হাজার ৪৪ জন অধিভুক্ত সাত কলেজের গ্রাজুয়েট। রাজধানীর অধিভুক্ত সাতটি কলেজের জন্য কেন্দ্রীয় খেলার মাঠের বাইরে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু করা হয়।

সমাবর্তনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী শহিদুল্লাহ, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, সিনেট, সিন্ডিকেট, হল প্রভোস্টসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads