• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
ঢাকায় চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

ঢাকায় চূড়ান্ত আক্রমণের প্রস্তুতি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১০ ডিসেম্বর ২০১৯

১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। লাল-সবুজ পতাকার ঢেউ দেশের আনাচে-কানাচে। একের পর এক হানাদারমুক্ত হচ্ছে দেশের নানা জেলা। ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের অনেক জেলা হানাদারমুক্ত হয়। লাখো প্রাণ আর মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে একটি নতুন রাষ্ট্রের আলো ছড়াতে শুরু করে। স্বাধীন হয়ে উঠতে শুরু করে বাংলার অবারিত প্রান্তর। পূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদে মরিয়া মুক্তিপাগল বাংলার দামাল ছেলেরা। দিশেহারা পাক হানাদাররা আকাশ-নৌ ও স্থল আক্রমণে। সুশিক্ষিত

ও আধুনিক সমরসজ্জায় সজ্জিত হানাদাররা বাংলার কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা মুক্তিবাহিনীর কাছে পর্যুদস্ত। পাক হানাদার ও তাদের দোসররা আত্মসমর্পণের পথ খুঁজছে। জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে হানাদারদের সহযোগী রাজাকার, আলবদর ও আলশামসরা।

গবেষকদের মতে, ১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বরে রণাঙ্গনে ‘মুক্তি’ শব্দটি আতঙ্ক হয়ে দেখা দেয় নিজেদের ‘প্রবল প্রতাপশালী’ মনে করা পাকিস্তানি সৈন্যদের কাছে। এ সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী যুদ্ধের মাঠে দ্রুত নিয়ন্ত্রণ হারাতে থাকে। ফলে সৈন্যদের মনোবল ভেঙে পড়ে। তবে তারা পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না। পরাজয়ের আশঙ্কায় লে. জেনারেল নিয়াজি পালানোর পাঁয়তারা করেন। তার গোপন অভিসন্ধি বিবিসি ফাঁস করে দেয়। একাত্তরের এদিনে ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে দম্ভ ভরে তিনি বলেন, ‘কোথায় বিদেশি সাংবাদিকরা। আমি তাদের জানাতে চাই, আমি কখনো আমার সেনাবাহিনীকে ছেড়ে যাব না।’

ঢাকায় পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে শত্রুদের আত্মসমর্পণে বাধ্য করার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনী। একের পর এক জেলা হানাদার মুক্ত করে বিজয় কেতন উড়িয়ে চারদিক থেকে ঢাকায় আক্রমণ করার প্রস্তুতি চলতে থাকে অকুতোভয় মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর। এদিন কিছু আক্রমণ শুরু হয়েছে। পালাবার পথ না পেয়ে নানা ধরনের ফন্দিফিকিরে ব্যস্ত পাকিস্তানিরা।

১০ ডিসেম্বর খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে দায়িত্ব পালন করছিলেন বীরশ্রেষ্ঠ মোহাম্মদ রুহুল আমীন। পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণের মুখে মৃত্যুকে তোয়াক্কা না করে প্রতিরোধ গড়ে তিনি শহীদ হন। বাংলার দামাল মুক্তিযোদ্ধা এবং ভারতীয় বাহিনী কয়েক দিন ধরে সম্মিলিতভাবে যুদ্ধ চালায়। এদিন মিত্রবাহিনীর জঙ্গি বিমানগুলো ঢাকা বেতার কেন্দ্রের ওপর আক্রমণ করে এবং কুর্মিটোলার ওপর বারবার রকেট হামলা করে। মিত্রবাহিনীর বিমান আক্রমণে চট্টগ্রাম ও চালনা বন্দর অচল হয়ে পড়ে। কয়েকটি জাহাজ ভর্তি পাকিস্তানি বাহিনী বঙ্গোপসাগর দিয়ে পালানোর সময় ধরা পড়ে। একটি জাহাজে নিরপেক্ষ দেশের পতাকা উড়িয়ে পাকিস্তানি বাহিনী সিঙ্গাপুর পালানোর পথে মিত্র নৌবাহিনীর হাতে ধরা পড়ে।

সম্মিলিত বাহিনী উত্তরাঞ্চলের যুদ্ধে সর্বাত্মক সাফল্য অর্জন করে। মিত্র বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী যৌথ অভিযান চালিয়ে দিনাজপুর, রংপুর ও সৈয়দপুরের শত্রু বাহিনীকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এদিন রংপুর ও দিনাজপুর জেলা সম্পূর্ণ শত্রুমুক্ত করা হয়। রাতে পাকিস্তানি বাহিনী জামালপুর গ্যারিসন ছেড়ে ঢাকার দিকে পালানোর সময় শহরের অদূরে যৌথ বাহিনীর মুখোমুখি হয়। এ যুদ্ধে প্রায় ১ হাজার ৫০০ পাকিস্তানি সেনা হতাহত হয়। বাকিরা আত্মসমর্পণ করে।

জাতিসংঘের মহাসচিব উ থান্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহারের দাবি জানান পাকিস্তানের স্থায়ী প্রতিনিধি আগা শাহী। চীনের অস্থায়ী পররাষ্ট্রমন্ত্রী চিপো ফেই বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদীরা নির্লজ্জের মতো ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের ত্রাণকর্তার ভূমিকা গ্রহণ করে বর্বরোচিত কাজ করেছে।’

এদিন নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, ‘যুদ্ধবিরতি সংক্রান্ত জাতিসংঘের আহ্বান ভারত প্রত্যাখ্যান করেনি বা গ্রহণও করেনি। প্রস্তাবটি সরকারের বিবেচনাধীন রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বিজয় শুধু তখনই সম্ভব হবে, যখন বাংলাদেশ সরকার কায়েম হবে এবং ভারতে অবস্থানরত এক কোটি শরণার্থী তাদের বাস্তুভিটায় ফিরে যেতে পারবেন।’ এক কোটি শরণার্থী ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের প্রবাসী সরকারের সঙ্গে ভারত সরকারের এদিন সমঝোতা চুক্তি হয়।

আন্তর্জাতিক পর্যায়েও পাকিস্তান ও তাদের দোসর রাষ্ট্রগুলো যুদ্ধ বন্ধের আলোচনা চালাচ্ছিল। এত দিনে তারা বুঝে গেছে এ যুদ্ধে জেতার সম্ভাবনা একদমই নেই। এ সময় তারা দেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করার এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা করে। সপ্তাহখানেকের বেশি সময় ধরে চলছিল এ তালিকা তৈরির কাজ। দেশের শিক্ষিত শ্রেণি অর্থাৎ শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, চিকিৎসক ও আইনজীবীদের রাখা হচ্ছিল এ তালিকায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads