• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

অজয় রায়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক একুশে পদকজয়ী পদার্থবিদ অজয় রায়ের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের ব্যবস্থাপনায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১১টায় মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়ার পর এই মুক্তিযোদ্ধার কফিনে রাষ্ট্রীয়ভাবে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এরপর তার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় সর্বসাধারণ। প্রথমে শ্রদ্ধা জানান জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। এরপর একে একে অন্যরা শ্রদ্ধা জানাতে লাইন ধরেন।

এর আগে সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে রাজধানীর বারডেম হাসপাতালের হিমঘর থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় তার বেইলি রোডের বাসায়। সেখানে ছেলে অনুজিৎ রায়, পুত্রবধূ কেয়া বর্মণসহ স্বজন, প্রতিবেশী ও গুণগ্রাহীরা অশ্রুসজল চোখে তাকে শেষবিদায় দেন।

দুপুর ১২টার দিকে শহীদ মিনার থেকে অজয় রায়ের মরদেহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে নেওয়া হয়। সেখান থেকে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য নেওয়া হয় জগন্নাথ হলে। এরপর অজয় রায়ের শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী, তার মরদেহ বারডেম হাসপাতালে দান করার কথা রয়েছে।

অজয় রায়কে নিয়ে জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, অধ্যাপক অজয়ের মতো ভালো মানুষ ও শিক্ষক পাওয়া দুরূহ বিষয়। অজয় রায় এবং আমি সমসাময়িক ছিলাম। আমরা একই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স এবং মাস্টার্স ডিগ্রি নিয়েছি। একই সঙ্গে শিক্ষকতা জীবনও শুরু করেছি। একই বছরে আমরা বিয়েও করেছিলাম।

তিনি আরো বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের শরণার্থী শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ছিলাম আমি। আমার পরে সে এই দায়িত্ব পালন করে। আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চেতনা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে একসঙ্গে কাজ করেছি। তার এই চলে যাওয়া আমার জন্য এক বিশাল শোকের বিষয়। আমি তার স্মৃতির প্রতি আন্তরিক শ্রদ্ধা জানাই।

এদিকে অজয় রায়ের ছেলে অনুজিৎ রায় বলেন, দাদার হত্যাকাণ্ডের (অভিজিৎ রায়) রায় যদি বাবা দেখে যেতে পারতেন তবে হয়তো বা কিছুটা সান্ত্বনা নিয়ে মারা যেতেন। মামলাটি চলছে প্রায় চার বছর হতে চলল। এই সময়ে বাবার শারীরিক অসুস্থতা আরো বেড়েছিল।

অনুজিৎ বলেন, বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করব না, তবে যে কোনো মামলার তো নিজস্ব একটা গতি থাকে। হয়তোবা সেজন্য ধীরগতিতে কাজ হচ্ছে। এগুলো নিয়ে বাবা তেমনটা আক্ষেপ যদিও করতেন না। সবকিছু মিলিয়ে বলতেই হয় যে, বাবা বিচারটা দেখে যেতে পারলেন না। এক অপূর্ণতা নিয়েই তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন। বাবা চাইতেন বাংলাদেশ যেন হয়ে ওঠে একটি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল রাষ্ট্র। মুক্তচিন্তার লেখকদের জন্য গণতান্ত্রিক একটি দেশ হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। এই দেশের স্বাধীনতার জন্যই বাবা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন। দেশকে স্বাধীন করেছিলেন যাতে সব ধরনের ধর্মান্ধতা, অন্ধবিশ্বাস দূর করে এ দেশের মানুষ প্রগতিশীল একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা পায়। তিনি সেই স্বপ্নই দেখতেন।

অনুজিৎ আরো বলেন, প্রকৃতির নিয়মে আমাদের সবাইকেই পৃথিবী ছেড়ে যেতে হবে। তাও আসলে বাবা নেই এটা আমি মানতেই পারছি না। একই বছর বাবা ও মাকে হারালাম। বড় দাদাকেও হারিয়েছি। এই কষ্ট তো আসলে বলে বোঝানো যাবে না। বাবা খুব ধৈর্যশীল এবং সব সময়েই সবকিছুকে পজিটিভভাবেই দেখতেন। তিনি সব সময়েই বলতেন আমি যেন কখনো ভেঙে পড়ি না। দাদার হত্যাকাণ্ডের পরও তিনি ছিলেন আদর্শের প্রতি অবিচল। ওনার নাম যে অজয়, এই ভেঙে না পড়াই ওনার নামের অর্থের যথার্থতা প্রমাণ করে।

উল্লেখ্য, গত সোমবার বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর বারডেম জেনারেল হাসপাতালে মারা যান অজয় রায়। ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে জড়িত মুক্তিযোদ্ধা অজয় রায়ের বয়স হয়েছিল ৮৪ বছর। ২৫ নভেম্বর জ্বর, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়ে বারডেম হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads