• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
রাজাকারদের প্রথম তালিকা প্রকাশ হচ্ছে আজ

ফাইল ছবি

জাতীয়

রাজাকারদের প্রথম তালিকা প্রকাশ হচ্ছে আজ

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ১৫ ডিসেম্বর ২০১৯

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা পাকিস্তানি বাহিনীকে সহযোগিতা করেছিল, সেসব স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের প্রথম তালিকা আজ রোববার প্রকাশ করবে সরকার।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, রাজধানীর আবদুল গণি রোডের সরকারি পরিবহন পুল ভবনে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বেলা সাড়ে ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ তালিকা প্রকাশ করবেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা সুফি আবদুল্লাহিল মারুফ এ তথ্য জানিয়েছেন। এর আগে বলা হয়েছিল, এ তালিকা ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে প্রকাশ করা হবে। এখন এক দিন আগেই রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছে। জানা গেছে, গত ২ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে রাজাকারদের তালিকা প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত ২৬ মে সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশব্যাপী রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের কাজ শুরু করে। সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে মন্ত্রণালয় জানায়, রাজাকার, আলবদর, আলশামস, শান্তি কমিটির সদস্যদের তালিকা সংগ্রহ করে তা রক্ষণাবেক্ষণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আধা সরকারি (ডিও) চিঠি পাঠানো হয়।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ওই বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, রাজাকারের তালিকা হাতে আসা শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, এই ১৬ ডিসেম্বর থেকে যতটুকু আসবে পর্যায়ক্রমে প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে বলে জানান তিনি। এদিকে, গত ২৫ আগস্ট সংসদীয় কমিটির বৈঠকে রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহের কাজ শুরু হয়েছে বলে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় জানায়।

এ ব্যাপারে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে দেশের সব থানা থেকে স্বীকৃত রাজাকারদের তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং এটি চলমান রয়েছে। সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় সে তালিকা জনগণের সামনে প্রকাশ করা হবে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন ১৯৭১ সালে যেসব রাজাকার পাকিস্তানি সরকারি ভাতা গ্রহণ করেছে এবং যাদের নামে সে সময় অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছিল, আপাতত শুধু সেই সব স্বীকৃত রাজাকারের তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে পর্যায়ক্রমে দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী এবং মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন পাকিস্তানিদের পক্ষ নিয়ে মানবতারিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত সব রাজাকারের তালিকা প্রকাশ এবং বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি। 

উল্লেখ্য, স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় কয়েকটি রাজনৈতিক দল পাকিস্তানি বাহিনীর পক্ষ নিয়েছিল। এর মধ্যে জামায়াতে ইসলামী, মুসলিম লীগ ও নেজামে ইসলামী ছিল অন্যতম। তখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীকে সহযোগিতা করতে রাজাকার বাহিনী গঠিত হয়েছিল। আনসার বাহিনীকে এ বাহিনীতে একীভূতও করা হয়েছিল। প্রথমে এটি বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে গঠিত শান্তি কমিটির অধীন থাকলেও পরে একে আধা সামরিক বাহিনীর স্বীকৃতি দিয়েছিল পাকিস্তান সরকার। একই রকম আধা সামরিক বাহিনী ছিল আলবদর ও আলশামস। তবে স্বাধীনতাবিরোধী এ বাহিনীগুলো সাধারণ অর্থে ‘রাজাকার বাহিনী’ হিসেবেই পরিচিত বাংলাদেশে। এ বাহিনীগুলোতে কর্মরত ও বেতনভুক্ত স্বাধীনতাবিরোধী এসব বাঙালিরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পক্ষ নিয়ে এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষ এবং মুক্তিযোদ্ধা, তাদের পরিবারবর্গ এবং সহযোগিতাকারীদের হত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে সরাসরি অংশগ্রহণ করেন। স্বাধীনতার পর থেকেই এসব রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের বিচারের দাবিতে মানুষ ব্যাপকভাবে দাবি তোলে। স্বাধীনতার পর সরকার দালাল আইনে বেশ কিছুসংখ্যক রাজাকারকে আটক করে এবং বিচারের আওতায় আনে এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করেন। কিন্তু  ১৯৭৫ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর  ক্ষমতাসীন তৎকালীন সরকার এ বিচারকার্য বন্ধ করে দেন এবং আটক প্রায় সব রাজাকারকে মুক্ত করে দেয়। পরবর্তীতে প্রায় দুই দশক পর  ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বিচারের মুখোমুখি করার উদ্যোগ নেয়।

এরপর প্রায় এক দশক আগে একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর হওয়ার পর থেকেই দেশে রাজাকারের তালিকা তৈরির জোরালো দাবি ওঠে। ২০১২ সালে বর্তমান সরকারের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, রাজাকারের কোনো তালিকা সরকারের কাছে নেই। তবে তিনি বলেছিলেন, ১৯৭১ সালে খুলনায় আনসার হেডকোয়ার্টার্সে পাওয়া তালিকায় ৩০ হাজারের বেশি রাজাকারের তথ্য মিলেছিল। ওই তালিকাটি মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রয়েছে। এদিকে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির গত ২৬ মের বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অণুবিভাগে সংরক্ষিত রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা ও মুক্তিযুদ্ধের সময় জেলা প্রশাসকদের দপ্তর থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলনকারীদের তালিকা সংরক্ষণের সুপারিশ করা হয়। এছাড়া ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী পাকিস্তান জাতীয় পরিষদ ও পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্যদের আসনগুলো অবৈধভাবে শূন্য ঘোষণা করে তাদের স্থলে যাদের সদস্য বানোনো হয়েছিল তাদের নাম এবং স্বাধীনতাবিরোধী ব্যক্তি ও সংগঠনের নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে কমিটি গঠন করা হয়।  শাজাহান খানের সভাপতিত্বে ওই বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রাজি উদ্দিন আহমেদ, রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম ও এ বি তাজুল ইসলাম অংশ নেন।

ওইদিন বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি শাজাহান খান সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তালিকা হাতে আসা শুরু হয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, ১৬ ডিসেম্বরের মধ্যে যতটুকু আসবে পর্যায়ক্রমে তা প্রকাশ করা হবে। একই সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাও প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads