• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
ঘরে ঘরে আজ বিজয়ের আনন্দ 

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

ঘরে ঘরে আজ বিজয়ের আনন্দ 

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯

আজ ১৬ ডিসেম্বর। ৪৯তম মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্য ও বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে একটি সমন্বিত ধ্বনি বিজয়ের গৌরবের বাঁধভাঙা আনন্দ ছড়িয়ে দেয় বাঙালির ঘরে ঘরে। বিজয়ের আনন্দ উদযাপন হয় ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’ ধ্বনিতে। তীব্র শোষণের জাল ভেদ করে ৪৮ বছর আগের এ দিনে প্রভাতি সূর্যের আলোয় ঝলমলিয়ে উঠেছিল বাংলার রক্তস্নাত শিশির ভেজা মাটি। অবসান হয়েছিল পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর সাড়ে ২৩ বছরের নির্বিচার শোষণ, বঞ্চনা আর নির্যাতনের কালো অধ্যায়ের। কুয়াশায় জড়ানো হালকা শীতের বিকালে ঢাকার রমনার রেসকোর্স ময়দানে দাম্ভিক পাকিস্তানি সেনারা যে অস্ত্র দিয়ে নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে বাঙালির বুকে, হাতের সেই অস্ত্র পায়ের কাছে নামিয়ে রেখে মাথা নিচু করে তারা সেদিন দাঁড়িয়ে ছিল মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর নেতাদের সামনে। 

আজ বীরের জাতি হিসেবে পৃথিবীর মানচিত্রে বাঙালির প্রতিষ্ঠিত হওয়ার দিন। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামে একটি স্বাধীন ভূখণ্ডের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠার চিরস্মরণীয় দিন। রক্তনদী পেরিয়ে আসা অজস্র আনন্দ ও বেদনায় মিশ্র মহান বিজয় দিবস আজ। একই সঙ্গে লাখো স্বজন হারানোর শোকে ব্যথাতুর ও বিহ্বল হওয়ারও দিন আজ। ৯ মাসের সশস্ত্র রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে এ দিনে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করেছিল।  

স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি ও হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর বিকালে ঢাকার তখনকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বর্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে যৌথ বাহিনীর কাছে। এর মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্যালোকে উদ্ভাসিত হয় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই থেকে ১৬ ডিসেম্বর আমাদের বিজয় দিবস।  

অন্যান্য বছরের মতো এবারো যথাযথ ভাবগাম্ভীর্যে দিবসটি সাড়ম্বরে উদযাপন করা হবে। এবারের বিজয় দিবস এসেছে ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে। আগামী ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী এবং এর পরের বছর ২০২১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের সুবর্ণজয়ন্তী বর্ণাঢ্য আয়োজনে উদযাপন করবে বাংলাদেশ। বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলাদা বাণী দিয়েছেন। আজ কৃতজ্ঞ জাতি শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে দেশের পরাধীনতার গ্লানি মোচনে প্রাণ উৎসর্গ করা বীর সন্তানদের। উৎসবের সমারোহে জাতি শ্রদ্ধাবনত চিত্তে ও অকৃত্রিম ভালোবাসায় স্মরণ করবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের সব শহীদকে।  

ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জনতার ঢল নামবে। শ্রদ্ধার সঙ্গে তারা শহীদদের উদ্দেশে নিবেদন করবেন পুষ্পাঞ্জলি। রাজধানীসহ সারা দেশের সব প্রান্তের মানুষ অংশ নেবে বিজয় দিবসে। বিজয়োল্লাসে ভাসবে দেশ, আনন্দে উদ্বেলিত হবে গোটা জাতি। বঙ্গবন্ধুর বজ্রনিনাদ ভাষণ আর মুক্তিযুদ্ধের সময়ের জাগরণী গানে আকাশ-বাতাস হবে মুখর। 

ভোরের যে রাঙা আলোটি আজ স্পর্শ করেছে ভূমি, স্বদেশের সেই পবিত্র ভূমি ভিজে আছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর রক্তে; আর সেই রক্তস্রোতে মিশে আছে জাতীয় চার নেতার উষ্ণ শোণিত। সবুজ-শ্যামল বাংলার পথে-ঘাটে আজ সকালে পুব আকাশে উদিত নব রবি যে কোমল পরশ বুলিয়ে গেছে, তা বছরের বাকি ৩৬৪ দিনের মতো নয়। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এ সবুজ দেশে ৪৮ বছর আগে আজকের এই দিনে উদয় হয়েছিল হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সূর্য। সেদিনের সেই সূর্যের আলোয় ছিল নতুন দিনের স্বপ্ন। 

’৭১ সালের ৭ মার্চ বিশাল জনসমুদ্র থেকে এক যুগের কবি ও মহাকাব্যের প্রণেতা বঙ্গবন্ধু বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তি সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেব, তবু এদেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ।’ তার একটিমাত্র উচ্চারণে যেন বাঙালি সত্যিকার দিকনির্দেশনা পেয়ে যায়। চূড়ান্ত লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে থাকে বাঙালি। বর্বর পাকিস্তানিরাও পুরো বাঙালি জাতিকে স্তব্ধ করার লক্ষ্যে মারাত্মক মারণাস্ত্র নিয়ে ২৫ মার্চ কালরাতে ঘুমন্ত জাতির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় বাঙালি নিধনযজ্ঞ। বাতাসে লাশের গন্ধ বারুদে বারুদে ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন আকাশ। আকাশে শকুনের উদ্যত থাবা আর নিচে বিপন্ন মানুষের বিলাপ। এ যেন এক জ্বলন্ত শ্মশান! মুক্তিপাগল বাংলার দামাল ছেলেরা স্বাধীনতার রক্তসূর্যকে ছিনিয়ে আনতে অস্ত্র কাঁধে তুলে নেয়। লক্ষ্য স্থির রেখে শত্রু হননে দৃঢ়তায় এগিয়ে যায় বীর বাঙালি। একপর্যায়ে বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতি আন্তর্জাতিক সমর্থন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। প্রতিবেশী ভারতও জড়িয়ে পড়ে বাঙালির ভাগ্যযুদ্ধে। ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যায়ে এসে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে চূড়ান্ত রূপ নেয় মুক্তিযুদ্ধ। ৯ মাসের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটিয়ে বাঙালি জাতির জীবনে আসে নতুন প্রভাত ও হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা।  

যথাযোগ্য মর্যাদায় বিজয় দিবস উদযাপনের লক্ষ্যে এবার জাতীয় পর্যায়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। আজ ঢাকায় প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে উপস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি কূটনীতিক, মুক্তিযুদ্ধে মিত্রবাহিনীর সদস্য হিসেবে অংশ নেওয়া আমন্ত্রিত সদস্যরা এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।  

সকাল ১০টা ৩০ মিনিটে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমভিত্তিক যান্ত্রিক বহর প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। 

বিজয় দিবস সরকারি ছুটির দিন। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। রাজধানীসহ দেশের বড় বড় শহরে প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপ জাতীয় পতাকায় সাজানো হবে। রাতে গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় করা হবে আলোকসজ্জা। হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নত মানের খাবার পরিবেশন করা হবে। সংবাদপত্র বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে, বেতার ও টিভি চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। 

দিবসটি উপলক্ষে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম- মুক্তিযুদ্ধ ’৭১ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘শিখা চিরন্তন’ বেদিসংলগ্ন স্বাধীনতা চত্বরে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। এর আগে সকাল ৮টায় ফোরাম নেতারা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাবেন। 

আওয়ামী লীগের দুদিনের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী সংগঠনের কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে ও বঙ্গবন্ধু ভবনে জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন। 

আজ সকাল ১০টায় গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতার সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন, জিয়ারত, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। কর্মসূচির দ্বিতীয় দিন ১৭ ডিসেম্বর বিকাল ৩টায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আলোচনা সভা হবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।  

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads