• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ব্যাপক পরিবর্তন আসছে প্রশাসনের শীর্ষ পদে

প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কে হচ্ছেন তা নিয়ে গুঞ্জন

  • মো. রেজাউর রহিম
  • প্রকাশিত ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯

দেশের সিভিল প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ে শিগগির ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। প্রশাসনের বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে বিশেষ করে সচিব পর্যায়ের অনেক কর্মকর্তার এ মাসের শেষে এবং আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ অবসরে বা অবসরোত্তর ছুটিতে যাওয়ার কথা রয়েছে। ফলে শীর্ষ পর্যায়ে কারা নতুন সচিব হিসেবে দায়িত্বে আসছেন, সে বিষয়ে সচিবালয়সহ বিভিন্ন দপ্তরে আলোচনা ও গুঞ্জন চলছে বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, চলতি মাসেই প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ে দায়িত্বে থাকা বেশ কয়েকজন সচিব অবসরে যাচ্ছেন। জানা গেছে, মুখ্য সচিব পদে নতুন মুখ অর্থাৎ অন্য দপ্তরে কাজ করছেন এমন কয়েকজন সচিবকে পদায়নের প্রক্রিয়া চলছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান ৩০ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন। এই পদে তার মেয়াদ বাড়ছে না বলে। ৮২ ব্যাচের কর্মকর্তা বর্তমান মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমানকে চুক্তিভিত্তিতে কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত করা হবে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ছাড়া খাদ্য সচিব শাহাবুদ্দিন আহমদ, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সোহরাব হোসাইন এবং সমাজকল্যাণ সচিব জুয়েনা আজিজের চলতি মাসেই পিআরএলে যাওয়ার কথা। এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রশাসনের শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে যোগ্যদের নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। উচ্চপদে নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রী কর্মদক্ষতা ও সততার ওপর জোর দেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন দপ্তরে যথাযথ কাজে লাগাতে চান। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বা বিভাগে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং কোনো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজ অসমাপ্ত থাকলে দক্ষতা বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে উচ্চপদে নিয়োগের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ারভুক্ত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অন্যদিকে, আগামী ১০ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব সাজ্জাদুল হাসানের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তাকে চলতি সপ্তাহে সিনিয়র সচিব পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ বেশ কয়েকজন সচিবের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে কারা নিয়োগ পাচ্ছেন তা নিয়ে প্রশাসনে বেশ কৌতূহল এবং এসব পদে কারা স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন তা নিয়েও রয়েছে জোর আলোচনা। আবার এসব পদে কেউ চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পাবেন কি না-তা নিয়েও চলছে নানা জল্পনা-কল্পনা।

প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব পদে বিদ্যুৎ বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. আহমদ কায়কাউসকে নিয়োগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনিছুর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দিন, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন, শ্রম সচিব কে এম আলী আজমের দপ্তর পরিবর্তন হতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে। 

অন্যদিকে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিষয়ে কর্মরত অতিরিক্ত সচিবদের মধ্যেও চাপা অসন্তোষ লক্ষ করা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সচিবালয়ে কর্মরত একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, প্রশাসনে কর্মরত যোগ্য কর্মকর্তাদের কাজে লাগানোর জন্য সরকার দক্ষতা ও সততার সঙ্গে যারা কাজ করেন তাদের উচ্চপদে নিয়োগের সুযোগ দিয়ে থাকে। এক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরিবর্তে নতুনদের সুযোগ দেওয়া হলে তারা আরো বেশি দক্ষতা অর্জন এবং সেবা দিতে পারেন। এ জন্য বিশেষ কিছু ক্ষেত্র ছাড়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অনুৎসাহিত করা উচিত বলে উল্লেখ করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ১৫ ডিসেম্বর চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামকে এই পদে এক বছরের জন্য চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়। এ ছাড়া চলতি সপ্তাহে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়েরর সচিব ফয়েজ আহম্মদ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রইছউল আলম মণ্ডল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আনোয়ার হোসেন, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সচিব) শাহিন আহমেদ চৌধুরী এবং রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেনকে তাদের বর্তমান মেয়াদ শেষ হওয়ার পর সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেওয়া হয়।

কর্মকর্তারা জানান, ইতিপূর্বে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি) পদে চুক্তিতে নিয়োগ করা সাবেক মুখ্য সচিব আবুল কালাম আজাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তার চুক্তির মেয়াদ বাড়ানো হয়নি। তাদের ধারণা, গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরগুলোতে হয়তো আর চুক্তিতে কাউকে নিয়োগ দেবে না সরকার। অবশ্য দক্ষতা বিবেচনায় দু’একজন নিয়োগ পেতেও পারেন।

তবে অধিকাংশ কর্মকর্তা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পক্ষে নন। তাদের মতে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ফলে তারা সচিব হতে পারছেন না। এ জন্য তাদের মধ্যে হতাশাও দেখা দিচ্ছে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ এবং সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জনকারী কর্মকর্তাদের এসব পদে পদোন্নতি দেওয়া হলে প্রশাসনে কাজের গতি ও স্বচ্ছতা বাড়বে বলে মনে করেন তারা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads