কলমাকান্দায় বিদ্যুৎ বিভ্রাট চরম আকার ধারণ করেছে। এর ফলে জনসাধারণকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। প্রায় দেড় মাস ধরে দিনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা বিদ্যুৎ থাকলেও বাকি সময় বিদ্যুতের আর দেখা মেলে না। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ব্যাহত হচ্ছে ইরি-বোরো চাষাবাদ। তাছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা রোগীরাও পড়েছেন চরম দুর্ভোগে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি কোনো মাইকিং ছাড়াই দিনে ১ থেকে ২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিয়ে বাকি সময় লোডশেডিং এর মাধ্যমে কলমাকান্দাবাসীকে চরম দুর্ভোগে ফেলেছে।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর উপজেলায় ২১ হাজার ২১৩ হেক্টর ইরি-বোরো চাষের লক্ষমাত্রা রয়েছে। আর তা বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ভেস্তে যেতে বসেছে। তাছাড়া উপজেলার আটটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ চালিত ১৫৬টি মটর রয়েছে। লোডশেডিংয়ের ফলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ৩-৪ ঘণ্টা মটরগুলো চালু থাকে। আর বাকি সময় বিদ্যুৎ বিভ্রাটের ফলে মটরগুলো বন্ধ থাকে। এতে করে ইরি-বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশংকা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে লক্ষ্যমাত্রার ২৫ ভাগ জমি অনাবাদি থাকার আশংকা প্রকাশ করেছে উপজেলা কৃষি বিভাগ।
বৃহস্পতিবার সকালে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে স্বাস্থ্যসেবা নিতে আসা অনেকেই লোডশেডিংয়ের কারণে সরকারি প্যাথলজি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে হাসপাতাল সংলগ্ন প্রাইভেট প্যাথলজিতে গিয়ে সেবা নিচ্ছেন। সেখানে রোগীরা জেনারেটরের মাধ্যমে বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থায় অধিক মূল্যে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করাতে বাধ্য হচ্ছেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেবা নিতে আসা পলাশ মিয়া জানান, অতিরিক্ত লোডশেডিংয়ের কারণে ঘরে বাতি জ্বলে না, বোরো জমিতে সেচ দিতে পারি না, তার উপর হাসপাতালে এসে দেখি বিদ্যুৎ নাই। তাই বাধ্য হয়েই বাইরে থেকে অধিক টাকায় টেস্ট করাতে হয়। বিশরপাশা গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, লোডশেডিংয়ের কারণে আবাদ তো দূরের কথা, রোপনকৃত জমিতে পানি দেওয়াই সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে বোরো ফসলের আর কোনো আশা থাকবে না।
রাইস মিলের মালিক আব্দুল মালেক জানান, এই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে না খেয়ে মরতে বসেছি। গত মাসে মিলের ভাড়া ও শ্রমিকদের টাকা দিতে গিয়ে দেনা করতে হয়েছে। বিদ্যুতের লোডশেডিং না কমলে এ মাসেও দেনা করতে হবে। এসএসসি পরীক্ষার্থী শিমুল সাহা জানায়, বিদ্যুতের এই আসা যাওয়ায় পরীক্ষার প্রস্তুতিতে চরম ব্যাঘাত ঘটছে। অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে এই বিদ্যুৎ বিভ্রাট থেকে আমরা পরিত্রান চাই।
কলমাকান্দা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির এজিএম মো. আনিসুল হক বলেন, ঠাকুরাকোনা, রাজুরবাজার, আমবাড়ী মেইন লাইনে কাজ চলছে, তাছাড়া বিভিন্ন গ্রামে বিদ্যুৎ সংযোগের পিলার ও লাইন টানানোর কারণে দিনের বেলা বিদ্যুৎ সরবরাহে একটু বিঘ্ন ঘটছে। আশা করছি মাস দু’য়েকের মধ্যে তা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।