• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯
রেল খাতের উন্নয়নে সহায়তা করতে চায় বসুন্ধরা-মাগুরা গ্রুপ

ছবি : সংগৃহীত

জাতীয়

রেল খাতের উন্নয়নে সহায়তা করতে চায় বসুন্ধরা-মাগুরা গ্রুপ

স্বনামধন্য দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে সিসিসিসি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বিপুল বিনিয়োগ সত্ত্বেও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছে না রেলওয়ে। অথচ যোগাযোগমাধ্যম হিসেবে এখনো তুলনামূলকভাবে নিরাপদ ও সাশ্রয়ী হচ্ছে রেলওয়ে। তবে বর্তমান সরকারের টানা ১১ বছরে রেলের উন্নয়নের জন্য নেওয়া হয়েছে ব্যাপক পরিকল্পনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের রেল খাতের উন্নয়ন পরিকল্পনায় সহায়তা করতে চায় দেশের অন্যতম দুই শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ ও মাগুরা গ্রুপ। ব্যবসায়িক গ্রুপ দুটি এরই মধ্যে বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগ করে ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। একইভাবে সরাসরি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এবার হাতে হাত রেখে রেলওয়ের উন্নয়নে সম্পৃক্ত হতে চায় এই দুটি প্রতিষ্ঠান। 

দেশের রেল খাতের উন্নয়নে গ্রুপ দুটি সঙ্গে নিচ্ছে চীনের প্রতিষ্ঠিত চায়না কমিউনিকেশন্স কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (সিসিসিসি)-কে।

বসুন্ধরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ও মাগুরা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড (আইইসিসি) ও সিসিসিসি সম্মিলিতভাবে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে প্রস্তাব তুলে ধরেছে।

গতকাল রেলভবনে প্রস্তাবগুলো নিয়ে বৈঠকের আয়োজন করা হয়। এতে রেলমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন, মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন, মাগুরা গ্রুপের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন, বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান, সিসিসিসির প্রতিনিধি ইয়ান ওয়েজিও, জাং ইয়াংগংসহ ঊর্ধ্বতনরা উপস্থিত ছিলেন।

প্রস্তাবনা তুলে ধরে মোস্তফা কামাল মহীউদ্দীন বলেন, আমরা স্থানীয় দুই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন খাতে সফলভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সঙ্গে সিসিসিসি যুক্ত হয়েছে, যাদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ ও রেলসেবা পরিচালনায় ব্যাপক সক্ষমতা ও দক্ষতা রয়েছে। তিন পক্ষ মিলে হাতে হাত রেখে আমরা দেশের রেল খাতের উন্নয়নে সরকারের পাশে থাকতে চাই। যৌথ বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে আগ্রহী। এটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বসহ যে কোনো প্রক্রিয়ায় হতে পারে।

তিনি বলেন, মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দক্ষতা, আর্থিক সক্ষমতা, যত্নশীল কর্মপরিকল্পনা ও আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে নির্দিষ্ট সময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব আমাদের পক্ষে। 

এ সময় রেলমন্ত্রী বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপ-মাগুরা গ্রুপ স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান দুটি। সিসিসিসিও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে সুনামের সঙ্গে রেল খাতের অবকাঠামো উন্নয়ন ও পরিচালনা করে যাচ্ছে। আমরা আনন্দিত প্রস্তাবগুলোর জন্য। বর্তমানে আমাদের বেশ কয়েকটি অগ্রাধিকার প্রকল্প বাস্তবায়ন বিবেচনায় রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম উচ্চগতির রেল যোগাযোগ। এ ছাড়া রয়েছে ঢাকা-পায়রা বন্দর রেলপথ ও ঢাকার চক্রাকার রেলপথ। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে আপনারা এগিয়ে আসতে পারেন।

তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে আমাদের সরকারি পর্যায়ে চুক্তি রয়েছে। পদ্মা সেতুসহ অনেক বড় প্রকল্প তারা বাস্তবায়ন করছে। চুক্তি মোতাবেক অনেক প্রকল্প চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাচ্ছে।

এ সময় সিনিয়র সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন বলেন, আমরা প্রাথমিক একটি বৈঠক করলাম। আমাদের অগ্রাধিকার প্রকল্পগুলোর কথাও আলোচনা করলাম। আমরা প্রয়োজনে আবারো বসতে পারি। সেখানে আরো সুনির্দিষ্টভাবে আলোচনা হতে পারে। তবে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে কিছু নিয়মনীতি মেনে চলতে হয়। সেগুলো পরিপালন করে এলে প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করা হবে। 

এ সময় একটি পরিকল্পনা উপস্থাপন করে বসুন্ধরা ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অবসরপ্রাপ্ত কমডোর এম খুরশীদ মানিক বলেন, বসুন্ধরা-আইইসিসি যৌথভাবে দেশের অনেক বৃহৎ কাজে সম্পৃক্ত।

নিজেদের কাজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে সিসিসিসির প্রতিনিধিরা বৈঠকে বলেন, তারা চীন, আফ্রিকাসহ অনেক দেশের রেল খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে। বদলে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর যোগাযোগ কাঠামো। বাংলাদেশের ঢাকা-চট্টগ্রাম উচ্চগতির রেলপথ নির্মাণসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলোতে আমরা বিনিয়োগ করতে চাই। নির্মাণ ও পরিচালনায় আমাদের দক্ষতা রয়েছে।        

জানা গেছে, সরকার ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে উচ্চগতির রেলপথ নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এতে এক ঘণ্টায় পৌঁছানো যাবে বন্দরনগরীতে। হয়তো শুনতে অবাক লাগছে; তবে হ্যাঁ, বুলেট ট্রেন বা উচ্চগতির রেলসেবা চালু হলে এমন ঘটনাই ঘটবে। আর বাংলাদেশ প্রবেশ করতে যাচ্ছে সেই যুগে।

দ্রুতগতির রেল যাত্রীসেবা শুরু করলে রাজধানী থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে যাওয়ার সময় কমে ৭৩ মিনিটে দাঁড়াবে। যদি সেটি বিরতিহীনভাবে চলে তাহলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে মাত্র ৫৫ মিনিট সময় লাগবে। এই রেলটি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩০০ কিলোমিটার গতিতে চলবে এবং প্রতিদিন প্রায় ৫০ হাজার যাত্রী পরিবহন করতে পারবে। এজন্য সম্ভাব্য রুটও নির্বাচন করা হয়েছে। প্রায় ৯৭ হাজার কোটি টাকার এই রেল প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের কাজ চলছে। তবে এই অর্থের উৎস নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

জানা গেছে, উচ্চগতির রেলপথটি আগের রেলপথের চেয়ে প্রায় ৯০ কিলোমিটার কম হবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের এই প্রকল্পটির জন্য মোট আনুমানিক ব্যয় হবে প্রায় ১১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ প্রায় ৯৬ হাজার ৭৫২ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads