• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

আড়াইশ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে এ সপ্তাহে

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

আজ বাঙালির বসন্ত বরণের দিন পহেলা ফাল্গুন। আবার এদিনেই উদযাপন হবে বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। এর এক সপ্তাহ পর রয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। সব মিলিয়ে দিবসগুলোকে ঘিরে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্টদের প্রস্তুতি তুঙ্গে। আর এসব দিবস উদযাপনের প্রধান অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ফুল, তাই সারা দেশের ফুলের দোকানগুলোতেও জমজমাট হয়ে উঠেছে বেচাকেনা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বছরে ফুল উৎপাদন হচ্ছে প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টন। এর বাজারমূল্য ৮০০ কোটি থেকে হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আগামী কদিনেই বিক্রি হবে এক-চতুর্থাংশ। অর্থাৎ সারা দেশে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে এসব দিবসকে কেন্দ্র করে।

বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, বসন্তবরণ, ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবস পাশাপাশি সময়ে হওয়ায় প্রতি বছর এ সময়টা ফুল বিক্রির প্রধান মৌসুম হয়ে উঠেছে। ফুলচাষিরাও প্রতি বছর এ সময়কে কেন্দ্র করে চাষাবাদ করছেন। তিনি বলেন, কৃষক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে সারা দেশে মোট ২০০ থেকে ২৫০ কোটি টাকার বাণিজ্য হবে এ সময়।

এর মধ্যে মাঠপর্যায়ে যশোরের গদখালী ও সাভারের সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে এ দিবসগুলোকে কেন্দ্র করে প্রায় শত কোটি টাকার কাছাকাছি ফুল বাণিজ্য হবে। বাকিটা পূরণ হবে দেশের অন্যান্য স্থানে উৎপাদিত ফুল দিয়ে।

তথ্য বলছে, ১৯৮৩ সালে দেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ শুরু হয়। বর্তমানে খুলনা বিভাগে সবচেয়ে বেশি, সেখানে প্রায় ২ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ হচ্ছে। মোট উৎপাদিত ফুলের ৩১ শতাংশ গ্লাডিওলাস, ২৪ শতাংশ গোলাপ, ১৯ শতাংশ রজনীগন্ধা। প্রতি হেক্টর জমিতে অন্যান্য খাদ্যশস্য ও অর্থকরী ফসলের তুলনায় ফুল চাষ করে বেশি লাভ হয়।

এসব ফুল এখন নগরের বহু এলাকাতেই কমবেশি মেলে। এর মধ্যে রাজধানীতে শাহবাগ মোড়, আগারগাঁও, গুলশান ১ ও ২ নম্বর, বনানী, উত্তরায় বেশি পাওয়া যায়। গতকাল বুধবার এসব বাজার ঘুরে দেখা গেল, উৎসবের আমেজের কারণে এখন ফুল কিনতে খরচ একটু বেশিই গুনতে হচ্ছে। অন্যান্য উৎসবের মৌসুমেও ফুলের দাম এমনিতেই বেশি থাকে, তবে এবার ফুলের বাজার আরো চড়া কারণ কয়েকটি উপলক্ষ একসঙ্গে।

ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম। তাই ফুলের দাম এ সময় অন্যান্য বছরের তুলনায় বেশি, কিছু ফুলের ক্ষেত্রে প্রায় দ্বিগুণ।

বাজার ঘুরে দেখা গেল, বেশির ভাগ দোকানে প্রতিটি গোলাপ ২০ থেকে ৫০ টাকা, রজনীগন্ধার স্টিক ১০ থেকে ২০ টাকা, প্রতিটি গাঁদার মালা ৩০ থেকে ৫০ টাকা, জারবেরা ফুল ২০ থেকে ৩৫ টাকা, অর্কিড স্টিক ৩৫ থেকে ৫০ টাকা, লিলি ১২০ থেকে ১৫০ টাকা, গ্লাডিওলাস রংভেদে ১৫ থেকে ২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফুল ব্যবসায়ীরা বলেন, বছরের এ সময় গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাঁদার চাহিদা বেশি থেকে। গত বছর এ সময় গোলাপ ও রজনীগন্ধার দাম কম ছিল। তবে গাঁদার দাম কম-বেশি এমনই ছিল।

আগারগাঁও বাজারে ফুল বিক্রেতা জালাল মিয়ার কথায়, গাঁদা ও গ্লাডিওলাস ছাড়া অন্য সব ফুলের জোগান কম। গোলাপ আগের থেকে প্রতি একশর দাম প্রায় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা বেশি। দোকানদারদের কিনতে হয় বেশি দামে। ফলে ক্রেতাদের একটু বেশি খরচ গুনতেই হবে।

বাংলাদেশ ফুল মালিক সমিতির সভাপতি আবদুর রহিম বলেন, গত বছর উৎসবের এই মৌসুমে রাজধানীর বাজারগুলোতে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ গোলাপ এসেছিল। এবার সেটা ২৫ লাখ ছাড়াবে না। রজনীগন্ধার স্টিক ছিল কম-বেশি ২০ লাখ, তা এবার ১৫ লাখের নিচে। এ জন্য দাম বাড়তি।

এ আগারগাঁওয়ে ফুল বেচাকেনার বড় আড়তে প্রায় ২০০ দোকান রয়েছে। আড়তদার রিয়াজুদ্দিন বলেন, এখন গোলাপ, রজনীগন্ধা ও গাঁদার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে জোগান কম থাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।

অন্যদিকে রাজধানীর বাজারে ৭০ শতাংশ ফুল আসে যশোর থেকে। সেখানকার চাষি মনিরুদ্দিন বলেন, এ বছর গোলাপ উৎপাদন কম হওয়ার কারণ হচ্ছে হঠাৎ গোলাপের গাছে ভাইরাসের আক্রমণ। ভাইরাসের কারণে গোলাপের গাছের পাতা ঝরে পড়ে গেছে, গাছগুলোও শুকিয়ে গেছে। এসব গাছে হওয়া গোলাপগুলোর পাপড়ি ঝরে পড়ে গেছে। এ কারণে গোলাপের উৎপাদন খুবই কম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads