• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

খুঁড়িয়ে চলছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ!

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০

প্রতিষ্ঠার চার বছর পেরিয়ে গেলেও দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকাণ্ডে। কক্সবাজারকে পর্যটন নগরীতে উন্নীত করার লক্ষ্যে আইনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি এখনো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। তবে কর্তৃপক্ষের দাবি, কার্যক্রম শুরুর পর বেশকিছু উদ্যোগ হাতে নিয়ে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প হাতে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।

সূত্রগুলো বলছে, সমুদ্র দূষণে দায়ী কক্সবাজারের হ্যাচারি ও হোটেল-মোটেল চিহ্নিত হয়েছে অনেক আগে। বিষয়গুলো নিয়ে একাধিক ফোরামে আলোচনাও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংসদীয় কমিটির একাধিক বৈঠকে এই বিষয়গুলো উঠেছে। তবে অদ্যাবধি কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে পারেনি কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। সূত্র জানায়, কক্সবাজারের হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউস ও কটেজগুলোকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টসহ তিন চেম্বারবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক স্থাপনের জন্য ২০১৭ সালে নোটিশ দেওয়া হয়। হ্যাচারিগুলোকে পাইপের মাধ্যমে বিষাক্ত পানি সমুদ্রে না ফেলার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। তবে তারা কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। গত বছরের জুনে ২১৬টি হোটেল-মোটেল ও ২৪টি হ্যাচারিকে এক মাসের মধ্যে এসটিপি ও তিন স্তরবিশিষ্ট সেপটিক ট্যাংক স্থাপনের কাজ শুরু করে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। কিন্তু দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সর্বশেষ বৈঠকে একটি বিশেষ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কক্সবাজার বিচের উন্নয়ন, কীভাবে এর সৌন্দর্য আরো বৃদ্ধি করা যায় তার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে সুপারিশ দেবে এ কমিটি। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আসলামুল হককে প্রধান করা হয়েছে। কমিটি সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক ও সৈয়দা রুবিনা আক্তার। ওই সাব-কমিটিকে আগামী এক মাসের মধ্যে মূল কমিটিকে সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।

পর্যটননগরী কক্সবাজারে ছোটবড় মিলিয়ে সাড়ে ৪০০ হোটেল-মোটেল, কটেজ ও গেস্ট হাউস রয়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০০ হোটেলের পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। এসব হোটেল থেকে ফেলা বর্জ্য যাচ্ছে সমুদ্রসৈকতের পানিতে। এতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এর ওপর কেন্দ্রীয়ভাবে একটি স্যুয়ারেজ শোধনাগার প্রকল্প বা এসটিপি নিয়ে সংকটে রয়েছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

কর্তৃপক্ষের একজন উধ্বর্তন কর্মকর্তা আলাপকালে বলেন, সংস্থাটির দায়িত্ব ও দেখভালের এলাকা দীর্ঘদিন সুনির্দিষ্ট করা যায়নি। এসব ছোট ছোট অনেক দাপ্তরিক বিষয় ঠিক করতেই বড় সময় চলে গেছে। এখন হয়তো সামনে এগিয়ে যাবে সংস্থাটি, দৃশ্যমান হবে এর বড় কাজগুলো।

জানা গেছে, কক্সবাজারকে একটি আধুনিক ও পরিকল্পিত পর্যটননগরী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য জাতীয় সংসদ কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিল-২০১৫ পাস করেন। ওই বছরের ৬ জুলাই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিলটি সংসদে পাশ হয়। এতে বলা হয়, সুপারিশকৃত আইনটি মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন এবং চলমান অবকাঠামোগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করে কক্সবাজারকে পযর্টননগরী হিসেবে গড়ে তুলবে। পরের বছর ১৩ মার্চ জাতীয় সংসদে পাসকৃত বিলটির গেজেট প্রকাশিত হয়। একই বছরের ১১ আগস্ট কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কউক)-এর প্রথম চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ। তিনি ১৪ আগস্ট ওই পদে যোগ দেন।

যেহেতু শহরটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে, সেজন্যই কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে একটি নিয়ামক প্রতিষ্ঠান হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছে। যাতে কক্সবাজার শহর এবং সংবিধিতে উল্লেখিত সংলগ্ন এলাকাসহ সমুদ্রসৈকতকে একটি মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে কক্সবাজার শহরটিকে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ার একটি আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা যায়।

তবে সূত্রগুলো বলছে, বর্তমানে যেভাবে উন্নয়ন কর্মকা্ল চলছে, তাতে অল্প সময়ের মধ্যে কক্সবাজার নিয়ে সরকার তার বিশেষ চিন্তার বাস্তবায়ন করতে পারবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে বিশ্বের অন্যতম টেকসই উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে কক্সবাজার ও সন্নিহিত এলাকা সমন্বয়ে একটি আধুনিক ও আকর্ষণীয় পর্যটননগরী প্রতিষ্ঠার জন্য ওই অঞ্চলের সুপরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করা দরকার।

এসব বিষয়ে জানতে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদকে ফোন করলে তিনি টেলিফোনে মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পরিবেশগত ছাড়পত্র ও সুয়ারেজ প্ল্যান্ট ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস ও অপসারণ প্রশ্নে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। বিদায়ী বছরের ৯ ডিসেম্বর এক রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ পৃথক রুল জারি করেন। রুলে পরিবেশগত ছাড়পত্র ও সুয়ারেজ প্ল্যান্ট ছাড়া কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা ধ্বংস ও অপসারণের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না সে বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পরিবেশ সচিব, বিমান ও পর্যটন সচিব, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব, জনপ্রশাসন সচিব, পানিসম্পদ সচিবসহ ২২ জনকে আগামী তিন মাসের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) রিটটি দায়ের করে।

একইসঙ্গে ১২০ কিলোমিটার সমুদ্র সৈকতের অবৈধ দখল, নির্মাণ, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দূষণ, পৌর বর্জ্য ও ওয়ান টাইম ইউজ প্লাস্টিক যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads