• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
কার্যকারিতা নেই শুদ্ধি অভিযানের

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

কার্যকারিতা নেই শুদ্ধি অভিযানের

  • সাইদ আরমান
  • প্রকাশিত ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০

কার্যত থেমে গেছে সরকারের শুদ্ধি অভিযান। সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে। তবে সূত্রগুলো বলছে, অদৃশ্য কারণে ক্ষমতাসীনদের শুদ্ধি অভিযান আর কার্যকর নেই। আর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অপরিকল্পিতভাবে শুরু হয়েছিল এই অভিযান। কেবল ক্যাসিনোবিরোধী নয়। সরকার ও রাজনৈতিক দলের সব স্তরে অভিযান পরিচালনা না করে যা হয়েছে, তা কেবল লোকদেখানো। সুশাসন নিশ্চিত করতে দীর্ঘমেয়াদি কোনো সুফল আসেনি।

অনেকেরই ধারণা ছিল, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের পর বন্ধ থাকা শুদ্ধি অভিযান হয়তো আবার শুরু হবে। এরপরও প্রায় তিন সপ্তাহ চলে গেছে। এই সময়ে বড় ধরনের কোনো দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত আছে এবং চলবে।

রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, সরকার আর ব্যাপক আকারে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনা করতে চায় না। ব্যাপক আকারে শুদ্ধি অভিযানে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিদের সম্পৃক্তার তথ্য বেরিয়ে আসাটা সরকারের জন্য কিছুটা বিব্রতকর। তা ছাড়া এতে অনেক নেতাকর্মীর সমর্থন নেই। অপরদিকে, শুদ্ধি অভিযানের কারণে তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়। প্রশাসনের সূত্রগুলোও একই কথা বলছে। শুদ্ধি অভিযানের ফলে প্রশাসনসহ রাষ্ট্রযন্ত্রে একধরনের স্থবিরতা তৈরি হয়। ভীতি থেকে অনেকে সঠিকভাবে দায়িত্ব নিয়েও আগ্রহ দেখান না। একই পরিস্থিতি তৈরি হয় পুলিশসহ অন্য গুরুত্বপূর্ণ বিভাগগুলোতেও। 

সূত্র বলছে, এসব কারণে ক্যাসিনো, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া শুদ্ধি অভিযান থমকে গেছে। এই শুদ্ধি অভিযান আর এগোবে কি না, তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরাই সন্দিহান।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বাংলাদেশের খবর-এর প্রতিবেদককে গতকাল টেলিফোনে বলেন, ‘অভিযানটা আর চলছে বলে আমি মনে করি না। এটি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে। তা ছাড়া অভিযান কেবল ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে নয়। সরকার ও রাজনৈতিক দলের ভেতরেও দরকার ছিল। প্রশাসন, পুলিশসহ রাজনৈতিকভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত যারা সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। সেটি হয়নি। কীভাবে এই অভিযান শুরু হয়েছিল সেটি আমরা বলতে পারব না। তবে এখন আমাদের কাছে মনে হচ্ছে অভিযানটি অপরিকল্পিত ছিল।’

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গতকাল রাতে টেলিফোনে বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘দুর্নীতিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সেটি একাধিকবার বলেছেন। আমি

বলতে চাই, অভিযান অব্যাহত আছে এবং চলবে।’ 

দুর্নীতিবিরোধী গবেষণা সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান মনে করেন, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান আদৌ কার্যকর রয়েছে কি না, সাধারণ মানুষের মনে সেই প্রশ্ন আসতে শুরু করেছে। তবে এই ধরনের অভিযান ঘোষণা দিয়ে নির্ধারিত সময়ে শেষ করা কঠিন। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন। এটি ইতিবাচক দিক। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছে।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক আলাপকালে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার মনোভাব জানিয়ে দিয়েছেন। এখন অন্যদের দায়িত্ব এটিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ইচ্ছাকে বাস্তবায়ন করে প্রশাসনকে দেখাতে হবে তাদের দক্ষতা রয়েছে, সাহস আছে। আমি আশা করব, শুদ্ধি অভিযান অব্যাহত থাকবে।’  

গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল শুদ্ধি অভিযান।

অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের তৃতীয় মেয়াদের বছরপূর্তিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে বলেন, ‘দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে চলমান অভিযান অব্যাহত থাকবে। আমি আবারও সবাইকে সতর্ক করে দিতে চাই দুর্নীতিবাজ যে-ই হোক, যত শক্তিশালীই হোক না কেন, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।’

ভাষণে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি আহ্বান থাকবে, যে-ই অবৈধ সম্পদ অর্জনের সঙ্গে জড়িত থাকুক, তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন। সাধারণ মানুষের হক যাতে কেউ কেড়ে নিতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছি। তথ্য যোগাযোগপ্রযুক্তির সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতি নির্মূল করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুর্নীতি বন্ধে জনগণের অংশগ্রহণ জরুরি। মানুষ সচেতন হলে, দুর্নীতি আপনা-আপনি কমে যাবে।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।’

তবে সূত্র বলছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনের এক বছর পেরিয়ে গেছে। বিগত এক বছর সরকার চেষ্টা করেছে সর্বোচ্চ সেবা দিতে। মোটের ওপর দেড় মাস চলে এই অভিযান। এতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী ওরফে সম্রাটসহ বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার হয়েছেন। অনেকেই দেশ ছাড়েন, চলে যান আত্মগোপনে। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক মনে হওয়ায় এরই মধ্যে তারা আবার প্রকাশ্যে আসতে শুরু করেছেন।

এখন নতুন তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। গত এক দশকে ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতিকে পুঁজি করে অনেকেই বিপুল অর্থভিত্তের মালিক হয়েছেন। আর্থিক খাতে দুর্নীতিবাজদের নাম উঠছে পৃথক একটি তালিকায়। তবে এই তালিকার ভিত্তিতে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমকে বলে আসছেন, দুর্নীতিবাজদের কোনো ছাড় নয়। অভিযান থেমে যায়নি। এই অভিযান চলছে। 

পরপর দুটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সমালোচনা আছে। এই সমালোচনার জবাবে ক্ষমতাসীন দল উন্নয়নের বিষয়টি সামনে এনেছে। কিন্তু বিভিন্ন খাতে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অর্থবিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগও ওঠে। ফলে দুর্নীতিগ্রস্ত কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে ভাবমূর্তি ফেরানোর চেষ্টা করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের দুটি অংশের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এমন প্রেক্ষাপটে অভিযান শুরু হলে তা প্রশংসিত হয়। 

অভিযানের সময় অনেকের নাম আলোচনায় এলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। যেমন, যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী, সাবেক দপ্তর সম্পাদক আনিসুর রহমান, যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী ওরফে শাওনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তবে এই সময় দুর্নীতি দমন কমিশন শতাধিক ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব তলব করে। কয়েকজনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়। এরপর আর কোনো অগ্রগতি হয়নি। 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads