• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
৮৮ শতাংশ শিশুই সহিংস আচরণের শিকার : জরিপ

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

৮৮ শতাংশ শিশুই সহিংস আচরণের শিকার : জরিপ

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বাংলাদেশে শিশুর প্রতি সহিংস আচরণের প্রবণতা বাড়ছে বলে সরকারি এক জরিপে উঠে এসেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’ শীর্ষক জরিপ অনুযায়ী, দেশে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশ সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছে। ২০১৩ সালে বিবিএস পরিচালিত জরিপে এই হার ছিল ৮২ দশমিক ৩ শতাংশ।

গতকাল সোমবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে বিবিএস সম্মেলন কক্ষে জরিপের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। জাতিসংঘ শিশু তহবিলের (ইউনিসেফ) সহযোগিতায় এই জরিপ চালানো হয়। ৬৪টি জেলার ৬১ হাজার ২৪১টি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে জরিপের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। আর এসব তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে।

জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, লালনপালনকারীদের মাধ্যমেই শিশুরা সহিংস আচরণের শিকার হচ্ছে বেশি। জরিপে এসেছে দেশে ১৫ বছরের নিচে প্রতি ১০ জনের নয়জন শিশুই তাদের অভিভাবক বা সেবা প্রদানকারীদের দ্বারা কোনো না কোনোভাবে সহিংসতার শিকার হয়।

বিবিএস মহাপরিচালক মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে জরিপে পাওয়া তথ্য তুলে ধরেন পরিচালক মো. মাসুদ আলম।

মাসুদ জানান, সারা দেশে ২৪ হাজার ৬০০ শিশুর অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে সহিংসতার এই তথ্য পেয়েছেন তারা। তবে কোনো শিশুর সঙ্গে কথা বলেননি। সহিংস আচরণের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, শুধু মারধর নয়, হালকা বকাবকি কিংবা ধমককেও আমলে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একটি সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান ধরে রাখার জন্য আরো দ্রুত অগ্রগতি প্রয়োজন। শিক্ষা ও খাবার পানির গুণগতমান, শিশু বিয়ের বিরুদ্ধে লড়াই এবং শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার মতো বিষয়গুলো ব্যাপকভাবে বিস্তৃত সুরক্ষামূলক বিষয় হিসেবে রয়ে গেছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শিশু অপুষ্টির হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। কিন্তু বেড়েছে শিশুদের প্রতি সহিংস শাসন। ৩৬ থেকে ৫৯ মাস বয়সী শিশুদের মধ্যে শৈশবকালীন শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ তুলনামূলক কম। এ সংখ্যা গড়ে ১৮ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১২-১৩ সালে যা ছিল ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ। এ সময়ে স্কুলে উপস্থিতির হার কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। যদিও এখনো ১৩ শতাংশ কিশোর-কিশোরী নিম্ন মাধ্যমিক শিক্ষার বাইরে রয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাঁচ থেকে ১৭ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে ছয় দশমিক আট শতাংশ শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িত। স্কুলে যাওয়া শিশুদের তুলনায় এ হার বেশি। শিক্ষা শেষ না করে ঝড়ে পড়ার হারে প্রতি পাঁচজনের একজনই ছেলে। একইসঙ্গে গ্রামে শিশুদের বিয়ে এখনো ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য। দারিদ্র্য নিরসনে অগ্রগতি হলেও শিশুদের পুষ্টির হার ভালো নয়।

প্রতিবেদনে দেখানো হয়েছে, ৯৮ দশমিক পাঁচ শতাংশ শিশু একবার হলেও মায়ের দুধ পান করেছে। জন্মের এক ঘণ্টার মধ্যে বুকের দুধ খাওয়ানো হয় এমন শিশুর সংখ্যা ৪৬ দশমিক ছয় শতাংশ।

‘মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে ২০১৯’র পরিচালক মাসুদ আলম জানান, ২০১৯ সালের ১৯ জানুয়ারি থেকে ১ জুনের মধ্যবর্তী সময়ে ৬১ হাজার ২৪২টি পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে নানা তথ্য সংগ্রহ করেন তারা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে গত ছয় বছরে নারীদের ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে ৩৭ দশমিক ৬ শতাংশ। দেশের শতকরা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ বাসায় রয়েছে কম্পিউটার।

দেশের শতকরা ৭১ দশমিক ৪ শতাংশ নারী মোবাইল ফোন ব্যবহার করছে। এ ছাড়া শতকরা ৯৫ দশমিক ৯ শতাংশ বাড়িতে মোবাইল ফোন রয়েছে। বর্তমানে দেশে নারীদের শিক্ষার হার বেড়ে ৮৮ দশমিক ৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে বলে জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়। ছয় বছর আগের জপিপে এ হার ছিল ৮২ শতাংশ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ইউনিসেফের কর্মকর্তা অ্যালেইন বালানডি ডমসাম।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads