• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
লকডাউনের আওতা বাড়ছে

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

লকডাউনের আওতা বাড়ছে

মিরপুরে একটি ভবন ও ফরিদপুরে দুটি যৌনপল্লি

  • এ এইচ এম ফারুক
  • প্রকাশিত ২২ মার্চ ২০২০

করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে লকডাউনের (বন্ধ) আওতা বাড়ছে। গতকাল রাজধানীর মিরপুরে একটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে। একই দিন ফরিদপুর জেলা শহরের দুটি যৌনপল্লিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে সেখানকার স্থানীয় প্রশাসন। গত বৃহস্পতিবার দেশে প্রথম লকডাউন করা হয় মাদারীপুরের শিবচর উপজেলা। এর পরদিন শুক্রবার লকডাউন করা হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)। এ ছাড়া জাতীয় প্রেস ক্লাবও লকডাউনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ও সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করতে এবং করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এসব উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এবং মাঠপর্যায়ে স্থানীয় প্রশাসন এসব লকডাউনের সিদ্ধান্ত দিচ্ছে।

এর আগে ১৯ মার্চ স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘চীন করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করেছে লকডাউনের মাধ্যমে। অন্য দেশও চীনকে ফলো করছে। যদি আমাদের এখানে পরিস্থিতি অবনতি ঘটে এবং যদি কোনো এলাকা বেশি আক্রান্ত হয় অবশ্যই সে এলাকা লকডাউন করা হবে। যেখানে যেখানে প্রয়োজন হবে সেখানে সেখানে লকডাউনে চলে যাব।’

মন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাস থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে হবে। লকডাউন করাটাই আক্রান্ত এলাকার জন্য একমাত্র উপায়। এর মাধ্যমে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে যাবে সেটা নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার একমাত্র উপায় হলো লকডাউন করে দেওয়া।

 

রাজধানীতে ভবন লকডাউন

গতকাল শনিবার রাজধানীর মিরপুরে একটি ভবন লকডাউন করা হয়েছে। ওই ভবনে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত ও সংস্পর্শে আসাদের কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশনা পেয়ে ভবনটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ। মিরপুর-১-এর উত্তর টোলারবাগ দারুসসালাম এলাকার দারুল আমান নামের ওই ভবনে ও আশপাশে চলাচলও সীমিত করা হয়েছে।

শনিবার বিকালে বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন পুলিশের মিরপুর বিভাগের ডিসি মোস্তাক আহমেদ।

তিনি বলেন, ওই ভবনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত এক রোগীর পরিবার রয়েছে উল্লেখ করে আইইডিসিআর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ভবনটি থেকে যেন কেউ বের হতে না পারে। ফলে ওই ভবনের একটি পরিবারকে হোম কোয়ারান্টাইন বাধ্যতামূলক পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সে জন্য ভবনটি নজরদারিতে রাখা হয়েছে। ওই ভবন থেকে যেন কেউ বের হতে না পারেন। ওই ভবনে প্রবেশ সংরক্ষিত ও এলাকায় চলাচল সীমিত করা হয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধিরা প্রয়োজনে রাজধানীর কিছু এলাকা লকডাউনের পরামর্শ দেওয়ার পর ভবনটি লকডাউনের খবর এলো।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও আইইডিসিআর জানায়, ওই ভবনে করোনা ভাইরাস পজিটিভ একজন ব্যক্তি ছিলেন। সতর্কতার জন্য আক্রান্ত ওই রোগীর সঙ্গে সম্ভাব্য চলাফেরা ও মেলামেশা বন্ধের পাশাপাশি অন্যদের হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ওই ভবনে করোনায় আক্রান্ত একটি সরকারি কলেজের অবসরপ্রাপ্ত একজন প্রফেসর শনিবার ভোরে মারা যান। কিছুদিন আগে তার মেয়ের জামাই বিদেশ থেকে এসেছেন, বাকি সদস্যরাও শংকটাপন্ন। স্থানীয়রা জানান, ওই ভবনে অন্তত ৩০টি পরিবার বসবাস করে। ওই ৩০টি পরিবারকেই পুলিশ পাহারায় কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে।

 

দুটি যৌনপল্লি লকডাউন

অপরদিকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে ফরিদপুর জেলা শহরের দুটি যৌনপল্লিকে অনির্দিষ্টকালের জন্য লকডাউন ঘোষণা করেছে সেখানকার জেলা প্রশাসন। শনিবার দুপুরে শহরের রথখোলা যৌনপল্লি ও সিঅ্যান্ডবি ঘাটে (নৌবন্দর) অবস্থিত যৌনপল্লি লকডাউনের ঘোষণা দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাসুম রেজা।

নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম রেজা বলেন, শহরের এই দুই যৌনপল্লিতে জায়গা কম। ঘিঞ্জি পরিবেশ এবং বিভিন্ন জেলা থেকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ যাতায়াত করে। এতে করোনা সংক্রমণ ঝুঁকি থাকায় জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের পরামর্শে লকডাউন করে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মানবিক কারণে এ সময় যৌনকর্মীদের খাদ্য সহায়তা হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে দুই-এক দিনের মধ্যে প্রত্যেক পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ ছাড়া এ সময়ে যৌনকর্মীদের কাছ থেকে বাড়িভাড়া আদায় নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাড়িভাড়া না নেওয়ার জন্য বাড়িওয়ালাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার পাশের জেলা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলাকে লকডাউন করা হয়।

এদিকে গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে দেশে করোনা আক্রান্তে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুজনে। গত ২৪ ঘণ্টায় যাদের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে, তাতে আরো চারজনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ফলে দেশে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৪ জনে। সারা দেশে ১৪ হাজার ব্যক্তি আছেন হোম কোয়ারেন্টাইনে। প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫০ জন।

করোনার বিস্তার রোধে এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে সভা-সমাবেশ ও গণজমায়েতের ওপর।

উল্লেখ্য, গত ডিসেম্বরের শেষদিকে চীনের উহানে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনা ভাইরাস এখন বৈশ্বিক মহামারী। এতে সারা বিশ্বে এখন পর্যন্ত ২ লাখ ৭৬ হাজার ৪৬২ জন আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন ১১ হাজার ৪১৭ জন। এ ছাড়াও চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৯১ হাজার ৯৫৪ জন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads