• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
সব বিভাগে করোনা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

সব বিভাগে করোনা পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার

  • হাসান শান্তনু
  • প্রকাশিত ০২ এপ্রিল ২০২০

করোনা ভাইরাসের (কোভিড-১৯) পরীক্ষা-নিরীক্ষার আওতা ধীরগতিতে হলেও বাড়ছে। দেশের সব বিভাগে ভাইরাসটির পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে এ পড়া ভাইরাসে দেশের কেউ আক্রান্ত কি না, তা ঢাকায় না এসে নিজের বিভাগে ও কাছের সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে পরীক্ষা করাতে পারবেন। সরকারের এ পরিকল্পনা ও উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও  রাজশাহীতে পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়েছে।

আজ বৃহস্পতিবার থেকে ময়মনসিংহ ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। আগামী সপ্তাহে দেশের আরো মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পরীক্ষা চালু হবে বলে আশাবাদী স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেই পরীক্ষার ব্যবস্থা চালু করা হবে বলে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। রাজধানীসহ সারা দেশে করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে বলেও এ সময় উল্লেখ করে তিনি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (স্বাস্থ্য শিক্ষা শাখা) ডা. হাবিবুর রহমান এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশের খবরকে জানান, ‘আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকায় তিনটি ও এর বাইরে তিনটি এবং ২০ এপ্রিলের মধ্যে ঢাকার ভেতরে চারটি ও ঢাকার বাইরে আরো ছয়টিসহ মোট ২৮টি স্থানে করোনা পরীক্ষার ল্যাব স্থাপন করা হবে। এরই মধ্যে ঢাকায় সাতটি ও ঢাকার বাইরে তিনটি প্রতিষ্ঠানে করোনার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেখানে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের পরীক্ষা করা যাবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীন ‘রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের’ (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গত ১৮ মার্চ গণমাধ্যমকে জানান,  ‘দেশে কোভিড-১৯ আক্রান্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঢাকার বাইরে আইইডিসিআরের তত্ত্বাবধানে কয়েকটি স্থানে নমুনা পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’ ঘোষণা অনুযায়ী ব্যবস্থাও নেয় অধিদপ্তর। তবে অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহ আগেও দেশে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণ কিটের সংকট ছিল। সেই সংকট কিছুটা হলেও কাটতে শুরু করেছে। বিভিন্ন দেশ ও প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশকে কিট দিয়ে সহায়তা করেছে। ঢাকার বাইরে করোনার পরীক্ষার ব্যবস্থা হওয়ায় সেখানে কিটও পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। প্রাণঘাতী করোনায় সন্দেহভাজন রোগীর নমুনা সংগ্রহে বিশেষজ্ঞ ও জনবল আছে।

জানা গেছে, গতকাল থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে করোনার পরীক্ষা চালু হয়েছে। দুপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। এর আগে ঢাকা থেকে টেকনিশয়ানদের দুটি দল পাঁচ দিন কাজ করে ল্যাবটি প্রস্তুত করেন। ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া হয় প্রশিক্ষণ। ল্যাবে এক দিনে অন্তত ৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।

ভাইরাসটি কারো শরীরে আছে কি না, তা পরীক্ষার জন্য এরই মধ্যে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মেডিকেল কলেজটির মাইক্রোবায়োলজি, ভাইরোলজি ও বায়ো-কেমিস্ট্রি বিভাগের ৩০ চিকিৎসক ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট। করোনা পরীক্ষার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা সরঞ্জাম ও ২০০টি কিট ঢাকা থেকে পাঠানো হয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী জানান, ‘সবাইকে বিভাগ ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। ল্যাবে এক দিনে সর্বোচ্চ ৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা যাবে।’ মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের প্রধান ডা. মো. বুলবুল হাসান বলেন, ‘আশা করছি, সবকিছু ঠিকভাবে পেলে আমরা দিনে ৮-১০টি পরীক্ষা করতে পারব। মাইক্রোবায়োলজি ও ভাইরোলজি বিভাগ যৌথভাবে ল্যাবটি পরিচালনা করবে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে আজ বৃহস্পতিবার থেকে করোনা পরীক্ষার সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একই দিন থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালেও ভাইরাসটির পরীক্ষা হবে। মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. চিত্তরঞ্জন দেবনাথ গতকাল সন্ধ্যায় বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ‘পরীক্ষার জন্য ল্যাবরেটরির আসবাব সাজানো-গোছানোর কাজ প্রায় শেষ। করোনা পরীক্ষার জন্য ২২০টি কিট পেয়েছি। আশা করছি, বৃহস্পতিবারের মধ্যে পরীক্ষা শুরু হবে।’ রংপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. নুরুন্নবীও জানান একই কথা। তিনি বলেন, ‘ঢাকা থেকে কর্মকর্তারা এসে প্রশিক্ষণ দিয়ে গেছেন। আশা করা যায়, বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে পরীক্ষা শুরু হবে।’ এই ল্যাবে প্রতি তিন থেকে চার ঘণ্টায় ৯০ থেকে ৯৪ জনের করোনা শনাক্তের পরীক্ষা করা সম্ভব বলে জানায় কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) গত ২৬ মার্চ থেকে করোনা পরীক্ষা শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ প্রসঙ্গে, ‘কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পরীক্ষা খুব কম হচ্ছে। লোকজন এগিয়ে আসছেন না।’ সন্দেহভাজনদের পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার বা ফোন করার আহ্বান জানান তিনি।

তথ্যমতে, দেশে প্রথমদিকে করোনা রোগী শনাক্তে শুধু ঢাকায় আইইডিসিআরে অসুস্থ ব্যক্তিদের নমুনা পরীক্ষা করা হতো। ঢাকার বাইরে কারো পরীক্ষার প্রয়োজন হলে নমুনা সংগ্রহ করে পাঠানো হতো আইইডিসিআরে। এ প্রতিষ্ঠানের সার্ভিলেন্স টিম সারা দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে করোনার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠাত। জেলা সিভিল সার্জনরা তাদের সহযোগিতা করতেন। উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথমবারের মতো করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি ঘোষণা দেওয়া হয়। ১৮ মার্চ দেশে এ ভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দেশে মোট আক্রান্ত হলেন ৫৪ জন। এখন পর্যন্ত দেশে ছয়জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads