২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আব্দুল মাজেদ।
ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, আজ (মঙ্গলবার) ভোরে গ্রেপ্তারের পর আদালতে তোলার আগে কিছুটা সময় আব্দুল মাজেদের সাথে তার কথা হয়েছে। সেসময় তিনি তাকে জানান যে, গত ২০ থেকে ২২ বছর ধরে তিনি ভারতে আত্মগোপনে ছিলেন। ভারতের কলকাতায় তিনি থাকতেন বলে জানান। তবে সুনির্দিষ্টভাবে তিনি কোন জায়গার নাম উল্লেখ করতে পারেন নি।
গত মাসের ১৫-১৬ তারিখের দিকে মাজেদ বাংলাদেশে প্রবেশ করেন বলেও জানান তিনি।
সোমবার দিবাগত রাত ৩ টা ৪৫ মিনিটের দিকে মিরপুরের গাবতলি এলাকা থেকে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট তাকে গ্রেপ্তার করে।
বাংলাদেশে ফেরার পর তিনি কোথায় থাকতেন বা কী করতেন সে বিষয়েও কিছু জানা যায়নি।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজমের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, গত ১৫ এপ্রিলের দিকে মাজেদ বাংলাদেশে ঢোকার পর পরই ইন্টারপোলের মাধ্যমে তারা সেটি জানতে পারেন।
সেই তথ্য অনুযায়ী, তাকে ট্র্যাক করে গ্রেপ্তারের তৎপরতায় ছিল পুলিশ।
সূত্রগুলো বলছে যে, মি. মাজেদ যে ভারতে ছিলেন প্রেপ্তারের পর তিনি তা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন।
সহকারী পাবলিক প্রসিকিউটর হেমায়েত উদ্দিন খান হিরন বলেন, মাজেদ গাবতলি বাস স্ট্যান্ড থেকে রিকশায় করে যাচ্ছিলেন। পুলিশের সন্দেহ হলে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এক পর্যায়ে তিনি স্বীকার করতে বাধ্য হন যে তিনি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডের মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি।
এদিকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ঢাকার সিএমএম আদালতে হাজির করে মহানগর পুলিশ। আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
এ বিষয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু বলেন, যেহেতু সাজা ঘোষণার অনেক দিন পর তাকে গ্রেপ্তার করা হলো তাই আপিল করার কোনো সুযোগ পাবেন না তিনি। তবে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে পারবেন," মি. আবু বলেন।
প্রাণ ভিক্ষা না চাইলে, বিধি মোতাবেক তার সাজা কার্যকর করা হবে।
মি. মাজেদ গ্রেপ্তার হলেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আরো পাঁচজন পলাতক রয়েছেন। এরা হলেন- মোসলেম উদ্দিন, শরিফুল হক ডালিম, খন্দকার আবদুর রশীদ, এ এম রাশেদ চৌধুরী এবং এস এইচ এম বি নূর চৌধুরী।
স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হবার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের হাতে নিহত হন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান। ঐ একই ঘটনায় তাঁর স্ত্রী, তিন পুত্র এবং দুই পুত্রবধূ সহ তাঁর পরিবারের ২০ জনের মত সদস্য নিহত হন।
হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িতদের বিচারকার্য দীর্ঘদিন বিলম্বিত হবার পর অবশেষে ২০১২ সালের জানুয়ারি মাসে পাঁচজন আসামির ফাঁসি কার্যকর হয়। পলাতক অবস্থায় একজন মারা যান।
সূত্র: বিবিসি বাংলা