• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪২৯
চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানির সুযোগে রুই কাতলারা আড়ালেই থেকে যায়: টিআইবি

ফাইল ছবি

জাতীয়

চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানির সুযোগে রুই কাতলারা আড়ালেই থেকে যায়: টিআইবি

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১৬ জুলাই ২০২০

রিজেন্ট ও জেকেজি কেলেঙ্কারি দিয়ে দুর্নীতির অন্যসব অভিযোগ থেকে জনগণের মনোযোগ সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা হচ্ছে কি না- এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানির সুযোগে বড় বড় রুই কাতলারা আড়ালেই থেকে যায়, আর  দুর্নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়।’

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন একটি সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে যে, দুর্নীতির অভিযোগে হাতেগোনা দুই একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং তদন্তকারী সংস্থাগুলো তৎপর হয়। অথচ দুর্নীতির মহাসমুদ্রে এইসব চুনোপুঁটিরা ডুবে থাকা হিমশৈলের চূড়ামাত্র, দৃশ্যপট থেকে যাদের সরিয়ে দেয়ায় দুর্নীতির পেছনের মূল সংঘবদ্ধ চক্রটির কোনো ক্ষতি  হয় না, বরং তাদের হাতেই দুর্নীতির প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ হয়।

‘চুনোপুঁটি নিয়ে টানাটানির সুযোগে বড় বড় রুই কাতলারা আড়ালেই থেকে যায়, আর  দুর্নীতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখা হয়। তাই শুধু দুই তিনজন অভিযুক্তকে আটকেই এই ঘটনার সমাপ্তি না টেনে বরং তাদের ক্ষমতাশালী হয়ে ওঠার পেছনের প্রভাবশালী কুশীলব, সুরক্ষাদাতা, সমর্থনদাতা এবং সুবিধাভোগীদেরও অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে অবস্থান ও পরিচয় নির্বিশেষে কঠোর বিচারের মুখোমুখি করা হবে, এমনটাই প্রত্যাশা করে দেশবাসী। এটা না হলে দুর্নীতির মূলোৎপাটন কখনোই সম্ভব হবে না,’ যোগ করেন তিনি।

রিজেন্ট ও জেকেজির হাতে করোনা শনাক্তের পরীক্ষা ও চিকিৎসাকে ঘিরে যে ন্যক্কারজনক জালিয়াতির ঘটনা উন্মোচিত হয়েছে তাকে স্বাস্থ্যখাতে লাগামছাড়া দুর্নীতির খুবই ছোট  উদাহরণ বলে মনে করে টিআইবি।

তাই এই দুই ঘটনার দৃশ্যমান অভিযুক্তদের আটক বা তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাকেই যথেষ্ট ভেবে নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে, মূল সমস্যার কোনো সমাধান হবে না বলে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে।

এরই মধ্যে এন-৯৫ মাস্ক কেলেঙ্কারি, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে অ্যাপ তৈরির প্রস্তাবনার মতো জালিয়াতির ঘটনা প্রায় ধামাচাপা পড়ে গেছে আর অভিযুক্তরাও বহাল তবিয়তে আছে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হলো, তদন্ত হলো। কিন্তু কী ব্যবস্থা নেয়া হলো? পদোন্নতি দিয়ে আরও দায়িত্বশীল পদে বদলি করাটা কী শাস্তি? নাকি শুধু কালো তালিকাভুক্ত করাটাই যথেষ্ট? এদের জন্য যে বহু চিকিৎসক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলেন তার জবাব কে দেবে? মানুষ স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত হচ্ছেন সে জন্য কে জবাবদিহি করবে? বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য বহির্বিশ্বের দরজা যে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, অনুদানের টাকা, ঋণের টাকা, জনগণের করের টাকা এভাবে যথেচ্ছ লুটপাটের সুযোগ কাদের দেয়া হচ্ছে, কারা সুযোগ নিচ্ছে ও দিচ্ছে এবং কিসের বিনিময়ে সেটা জানার অধিকার দেশের জনগণের আছে।

স্বাস্থ্যখাতের এই যথেচ্ছ দুর্নীতির দায়দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে এবং টিআইবি মনে করে এখানে কাউকে ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই।

যেসব প্রভাবশালী ও ক্ষমতাবানদের যোগসাজশে মানুষের জীবন মৃত্যু নিয়ে এমন ভয়াবহ দুর্নীতি হয়েছে, তাদের গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক কঠোর সাজা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি। 

রিজেন্ট ও জেকেজি কাণ্ডের মূল হোতাদের গ্রেপ্তারের ঘটনাকে এসব দুর্নীতির তদন্তের প্রথম পদক্ষেপ আখ্যায়িত করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দেশে কোভিড-১৯ মহামারি ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে একের পর এক দুর্নীতি, জালিয়াতি, প্রতারণা ও সাগরচুরির অভিযোগ উঠেছে স্বাস্থ্য খাত নিয়ে। তার মধ্যে মাত্র দুটি ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পেলাম যে, প্রত্যক্ষ কর্ণধারদের আটক করা হয়েছে এবং তাকেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিরাট অর্জন হিসেবে প্রচার করা হচ্ছে।

‘আমরা অবশ্যই এই অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চলমান আইনি প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানাই। কিন্তু এখনই একে বিরাট সাফল্য বলে মানতে পারছি না। যে প্রক্রিয়ায় আলোচ্য দুটি প্রতিষ্ঠান এই জালিয়াতি করার সুযোগ পেয়েছে তাতে রাজনৈতিক ও প্রশাসনিকভাবে ক্ষমতাবানদের একাংশের যোগসাজশের বিষয়টি একরকম নিশ্চিত করেই বলা যায়। অভিযুক্তদের শুধু প্রতারক হিসেবে প্রচার করে পেছনে থাকা প্রভাবশালী, যারা তাদের এই সুযোগ করে দিয়েছে, তাদের আড়াল করার চেষ্টা হচ্ছে কিনা সে প্রশ্ন একেবারে অবান্তর বলা যাচ্ছে না,’ যোগ করেন তিনি। 

এই দুই আলোচিত ঘটনা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং মন্ত্রণালয়ের পাল্টাপাল্টি দোষারোপ এবং একে অন্যের ঘাড়ে দোষ চাপানোর চেষ্টায় এই শংকা আরও প্রবল হচ্ছে- এমন মন্তব্য করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বেশ কদিন হলো এই অভিযোগের বিষয় দুটি সামনে এসেছে। এতোদিনে তো উচিত ছিল কি প্রক্রিয়ায়, কিভাবে, কোন যোগ্যতার ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানকে নির্বাচিত করা হয়েছিল তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা দেয়া, কোন কর্তৃপক্ষের কতোটুকু দায়িত্বে অবহেলা ছিল তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু তা না করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয় একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন ও অবিবেচনাপ্রসূত মন্তব্য করে দায় এড়ানোর চেষ্টা করে চলেছে।

‘গণমাধ্যমে সংবাদ হয়েছে, কর্মকর্তারা মন্ত্রীর অনুরোধে চুক্তি স্বাক্ষরের সময় উপস্থিত ছিলেন, অধিদপ্তর বলছে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার মৌখিক নির্দেশনায় তারা চুক্তি করেছে। আর মন্ত্রী জানিয়েছেন তিনি অনেক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন, সব পড়ে দেখেন না। এই যদি হয় জনস্বার্থে সরাসরি সংশ্লিষ্ট সরকারের অন্যতম প্রধান একটি বিভাগের চালচিত্র তাহলে আমাদের আতঙ্কিত না হয়ে উপায় থাকে না। মহামারির এই ভয়াবহ সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এমন লাগামছাড়া, ছন্নছাড়া অবস্থা রীতিমতো অপরাধমূলক, কারণ এতো শুধু দুর্নীতির মহোৎসব নয়, মানুষের জীবন-মৃত্যু এর সাথে সরাসরি জড়িত,’ বলেন তিনি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads