• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪২৯
বাউফলে 'পানির দরও' নেই কোরবানির পশুর চামড়ায়

প্রতিনিধির পাঠানো ছবি

জাতীয়

বাউফলে 'পানির দরও' নেই কোরবানির পশুর চামড়ায়

  • এমএ বশার, বাউফল
  • প্রকাশিত ০১ আগস্ট ২০২০

মৌসুমী ব্যাবসায়ি নেই। সাড়া নেই পাইকারদেরও। গত বছর পানির দরে বিক্রি হলেও এবার কোরবানির পশুর চামড়ায় পানির দরও নেই। বাধ্য হয়ে পটুয়াখালীর বাউফলের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াতিম খানা ও লিল্লাহ বড়িংয়ে দান কিংবা কেটে ভাগীদারদের মাঝে বন্টন করতে হচ্ছে পশুর চামড়া।

এ বছর কোবানির পশুর চামড়ার দাম ২০ থেকে ২৯ শতাংশ কমিয়ে ঢাকায় লবণযুক্ত গরুর চামড়ার দাম প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা ও ঢাকার বাইরে ২৮-৩২ টাকা, খাসির চামড়া ১৩-১৫ টাকা এবং বকরির চামড়ার দাম ১০ থেকে ১২ টাকা নির্ধারণ করা হলেও উপজেলার কোথাও দেখা মিলছে না চামড়ার মৌসুমি ক্রেতা কিংবা পাইকারের। প্রতিবছর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত মূল্যের হেরফের করে চামড়া কিনলেও এবার যেন সম্পূর্ণই নিরব ভূমিকায় স্থানীয় মৌসুমী ব্যাবসায়ি ও পাইকাররা। তাই কোরবানীর পশুর চামড়া নিয়ে বিপাকে সাধারণ বিক্রেতারা। খুচরা ও মৌসুমী ব্যাবসাীয় না থাকায় কোরবানীর পশুর চামড়া কেটে ভাগীদারদের মাঝে বন্টন করতে দেখা গেছে বিভিন্ন এলাকায়।

ধানদী গ্রামের শহিদুল ইসলাম (চুন্নু) হাওলাদার ভাগিদার নিয়ে কোরবানির গরু কিনেছেন ৮৩ হাজার টাকায়। আগে এমন সাইজের একটি গরুর চামড়া অন্তত ১ হাজার ৫শ’ থেকে ১ হাজার ৮শ’ টাকায় বিক্রি করতে পাড়লেও এবার ক্রেতা না থাকায় ভাগিদার নিয়ে কেটে ভাগ করে নিয়েছেন তিনি। তেমনি একই বাড়ির আজাহার হাওলাদার, আব্দুল মন্নান মাস্টারও বিক্রি করতে না পেরে একই ভাবে খাওয়ার জন্য কাটাকুটি করে নিয়েছেন কোরবানির গরুর চামড়া। ধানদী গ্রামের আলাউদ্দিন মাস্টার, আ. সাত্তার মৃধা, বাচ্চু মাস্টার, জলিল জোমাদ্দার, আনিচুর রহমান মাস্টার, নাজমুল হাসান (রহুল আমিন) মাস্টার, দলিল উদ্দিন, আ. রাজ্জাক মেম্বর, নুরাইনপুর কলেজের অধ্যাপক মাওলানা আব্দুর রহিম, বড়ডালিমা গ্রামের মো. জাহাঙ্গির হোসেন, মমিনপুর গ্রামের আবুল কালাম আযাদ, ভরিপাশা গ্রামের শাহজাহান গাজী, নিমদী গ্রামের শামিম মাস্টার, কালাইয়া কমলা রাণীর দীঘি পাড়ের মিল্টন শরীফ, আকতার ফারুকসহ বিভিন্ন গ্রামের হাজারো জন কোরবানির পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেন নি ক্রেতা না থাকায়। প্রতি বছর কোরবানির ঈদের এ সময় কালাইয়া বন্দরের ল্যাঙড়ামুন্সিরপুল এলাকায় চামড়া বোঝাই টমটম, ভ্যান, অটোগাড়ির ভির লেগে থাকলেও সেখানে এবার জন শূন্য। চামড়া না কিনে হাত গুটিয়ে আছেন ধানদী গ্রামের মৌসুমী ব্যাবসায়ি শানু ফরাজি, ফিরোজ খান, কালাইয়া লঞ্চঘাট এলাকার ধীরেন ঋষি, মানিক সিকদারসহ অনেকেই।  

মেহেন্দিপুর গ্রামের প্রভাষক ফরিদুর রহমান জানান, প্রতিবার পশু জবাই করে কাটকুটির সময়ই মৌসুমি ব্যাবসায়ীরা ছুটে আসতো। এবার চামড়া নিয়ে অপেক্ষা করেও ক্রেতা পাওয়া যাচ্ছে না। চামড়া কেনায় উৎসাহ নেই নতুন ও মৌসুমী ব্যাবসায়ীদের। বাধ্য হয়ে তাদের কোরবানির গরুর চামড়া তিনি পাশের তাহফিজুল কুরআন হাফেজিয়া মাদ্রাসায় দেওয়ার  জন্য রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘চামড়া নিয়ে কখনো বা ব্যাবসায়ীদের বিপাকে পড়তে শুনতাম। এবার পশু কোরবানি করে সাধারন বিক্রেতারা চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। অভিজ্ঞতা না থাকলে কেটে-কুটে ঘরে নিলেও চামড়া রান্না করে খাওয়া কস্ট সাধ্য। এ কারণে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়তে হচ্ছে সাধারনের।’

হাত গুটিয়ে রাখা চামড়ার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ধানদী এলাকার শানু ফরাজি জানান, ‘সরকার মূল্য নির্ধারণ করলেও ট্যানাররি মালিক কিংবা ঢাকার ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে ওই মূল্য পাওয়া যায় না। আগের বছর লোকসান গুনেছেন তিনি। এবার করোনায় পরিস্থিতি আরো খারাপ হতে পারে ভেবেই চামড়া কেনায় হাত গুটিয়ে রেখেছেন।

দীর্ঘদিনের চামড়া ব্যাবসায়ি পৌর সদরের আড়তদার রাধেশ্বামের ভাতিজা উত্তম ঋষি জানান, দাম পাওয়া যায় না বলে কবরির চামড়া কিনছেন না তিনি। প্রতিটি ভাল মানের গরুর চামড়া দুইশ’ টাকা হিসেবে শ’ পাঁচেক চামড়া কিনেছেন। তার বাড়িতে চামড়া আসা শুরু হয়েছে মাত্র। তবে এবার পশুড় চামড়া কিনছেন একই এলাকার লিটন, নিখিল ও মুকন্দ ঋষি। তিনি বলেন, ‘করোনায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ। প্রচন্ড গরম পড়ছে। ধোয়া, মাংশ ছাড়ানো, লবন দেওয়াসহ নানা ঝক্কি-ঝামলো আছে চামড়া কেনায়। এরপর করোনা পরিস্থিতির এ সময় ঢাকায় ট্যানরী মালিক কিংবা ব্যাবসায়ীদের কাছ থেকে ওই দাম পাওয়া যাবে কি না সন্দেহ আছে। কয়েক বছর ধরে চামড়া নিয়ে বিপাকে পড়ছি। আমরা বেশি দামে চামড়া কিনব কোন ভরসায়?’ 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads