• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪২৯
সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে উত্তরাঞ্চলের কৃষক

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

দফায় দফায় বন্যা

সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে উত্তরাঞ্চলের কৃষক

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০

উত্তরাঞ্চলে একের পর এক বন্যার কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কৃষিজমির। বারবার চেষ্টা করেও এ ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারছেন না কৃষকরা। এ নিয়ে চতুর্থ দফায় বন্যার শিকার হলেন তারা। গত আগস্ট মাসে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পর অনেক কৃষক জমিতে, ধান, মাষকলাই, শাকসবজি আবাদ করেছেন। তবে গত ৩-৪ দিন ধরে যমুনা, ধরলা তিস্তাসহ বিভিন্ন নদীতে পানি বাড়তে থাকায় ফের ডুবেছে কৃষকের ফসল। ফসল হারিয়ে চরাঞ্চলের কৃষকরা সর্বস্বান্ত হওয়ার পথে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের এক কৃষক বলেন, গত জুলাই-আগস্টের বন্যায় ২ বিঘা জমির ধান তলিয়ে গেছে। পানি নেমে যাওয়ার পর এক সপ্তাহ হলো ধার করে টাকা এনে ওই জমিতে আবার ধান রোপণ করেছিলাম। এছাড়া অন্য এক বিঘা জমিতে বেগুন গাছ লাগিয়েছিলাম। কিন্তু তিন দিনে পানি বেড়ে জমিতে সদ্য লাগানো ধান গাছ তলিয়ে গেছে।

জানা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও ধুনট উপজেলায় যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শহড়াবাড়ি ঘাট পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নদীর কূল উপচে চরের জমিতে সদ্য রোপণকৃত আমন ধানের ক্ষেত তলিয়ে গেছে। ধুনট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মশিদুল হক বলেন, দফায় দফায় বন্যার কারণে  ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতি পুষিয়ে যেন আবার ঘুরে দাঁড়াতে পারেন সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষককে প্রণোদনার আওতায় মাষকলাই, শাকসবজির বীজ ও আমন চারা প্রদান করা হয়। প্রণোদনা পেয়ে কৃষক পুরোদমে মাঠে নেমেছিলেন। কিন্তু অসময়ে নদীর পানি বাড়ায় কৃষকেরা মহাচিন্তায় পড়েছেন।

বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, উজানের ঢলে যমুনার পানি ব্যাপকহারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই-এক বছর পর পর এ সময়ে যমুনার পানি বেড়ে বন্যা হয়। যে হারে পানি বাড়ছে, তাতে এবারো আশ্বিন মাসে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। জানা গেছে, কুড়িগ্রামে ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার এবং লালমনিরহাটে ১৯ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদ ও তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও প্রবল বৃষ্টিপাত আর উজানের পানিতে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।

লালমনিরহাটের সদর উপজেলার ধরলা নদীপাড়ের কুলাঘাট, মোগলহাট ও বড়বাড়ী ইউনিয়ন; কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী, বড়ভিটা ইউনিয়ন; রাজারহাট উপজেলার ছিনাই ইউনিয়ন; কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা, যাত্রাপুর, মোগলবাসা; এবং উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ৩০টি গ্রামের ১৫ হাজারের বেশি পরিবার বন্যাদুর্গত হয়ে পড়েছে। কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নে সারডোব গ্রামে বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দিয়ে নদীর পানি প্রবেশ করে অন্তত আটটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।  কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত তিন দিনে নদনদীর পানি বৃদ্ধির ফলে ২ হাজার ১০৪ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এর মধ্যে আমন এক হাজার ৮৪০ হেক্টর, মাষকলাই ১২৭ হেক্টর, শাকসবজি ১২৭ হেক্টর ও বাদাম ১০ হেক্টর।

সরেজমিনে দেখাগেছে, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে বন্যার ধকল কেটে উঠতে না উঠতেই তীব্র আকারে দেখা দিয়েছে তিস্তার ভাঙন। বৃষ্টির পানি, উজান থেকে নেমে আসা ঢলে এবং তিস্তার অব্যাহত ভাঙনে উঠতি ফসলসহ বসতবাড়ি বিলীন হচ্ছে নদীগর্ভে। টানা ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে চরাঞ্চলের পরিবারগুলো। ভাঙনে গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের চর চরিতাবাড়ি, মাদারিপাড়া, কাশিম বাজার, লখিয়ারপাড়া শ্রীপুর ইউনিয়নের উত্তর শ্রীপুর, পুটিমারী, লালচামার গ্রামে হাজারও একর ফসলি জমি ও শতাধিক বসত বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ভাঙনের মুখে পড়েছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি ও বসতবাড়ি।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads