• বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪২৯
টিউশন ফির জন্য চাপ, উদ্বেগে অভিভাবকরা

প্রতীকী ছবি

জাতীয়

টিউশন ফির জন্য চাপ, উদ্বেগে অভিভাবকরা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০

করোনা মহামারীর মধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও উচ্চতর ক্লাসে প্রমোশনের বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত আসার আগে শিক্ষার্থীদের বকেয়া টিউশন ফি আদায়ে অভিভাবকদের ওপর চাপ সৃষ্টির অভিযোগ এসেছে ঢাকার বেশ কিছু নামি বেসরকারি স্কুলের বিরুদ্ধে। এতে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।

তাদের আশঙ্কা, বছরের শেষ দিকে এসে টিউশনসহ বিভিন্ন নামে অন্যান্য ফি সম্পূর্ণ পরিশোধ না করতে পারলে বিদ্যালয়গুলো হয়তো তাদের সন্তানদের পরবর্তী ক্লাসে তুলবে না। তবে বিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষের দাবি, টিউশন ফির জন্য কোনো চাপ দেওয়া হচ্ছে না। বিদ্যালয় চালানো এবং শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধের জন্য অভিভাবকদের বুঝিয়ে টিউশন ফি সংগ্রহ করা হচ্ছে। সরকারি সিদ্ধান্ত এলে সেই অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের উচ্চতর ক্লাসে উত্তীর্ণের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তারা। 

মহামারীকালে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও অনলাইনে ক্লাস নিয়ে যাওয়ার কথাও বলেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষ। যদিও অনেক অভিভাবক বলছেন, ভার্চুয়ালি ক্লাস নেওয়া হচ্ছে নামেই, তাতে লাভ হচ্ছে না। দেশে করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে গত ১৭ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়। কবে নাগাদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলবে, তা এখনো অনিশ্চিত।

ছুটির মধ্যেও স্কুল থেকে বার বার ফোন করে ও এসএমএস পাঠিয়ে টিউশন ফি পরিশোধ করতে বলা হচ্ছে অভিভাবকরা জানান। প্রমোশনের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্ত আসার আগে বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরো বাড়ছে।  সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মনিপুর হাই স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটসহ আরো বেশ কিছু স্কুল থেকে টিউশনসহ অন্যান্য ফি পরিশোধে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক অভিভাবক বলেন, মহামারীর কারণে বহু অভিভাবক চাকরি হারিয়েছেন। কারো চাকরি থাকলেও প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন-ভাতা আটকে আছে। আবার অনেকের ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দার কারণে সংসারে টানাপোড়েনের অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল বন্ধ থাকাকালীন ছেলেমেয়ের টিউশন ফি সম্পূর্ণ আদায় করলে আমাদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়বে। এক অভিভাবক বলেন, মাস শেষ হলেই এসএমএম এবং দায়িত্বরত শিক্ষকদের দিয়ে ফোন করে টিউশন ফি পরিশোধের জন্য বলা হয়। এভাবেই প্রতি মাসের ফি ব্যাংকে লাইন ধরে জমা দিয়ে আসছি।

অনলাইন ক্লাসের বিষয়ে অভিভাবকরা বলেন, আসলে এভাবে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার নামে তাদের অন্যতম উদ্দেশ্যে হচ্ছে টিউশন ফি আদায় করা। স্কুলে ছেলের এক মাসের টিউশন ফি বকেয়া পড়ার কথা জানিয়ে আরেক অভিভাবক বলেন, কোনো মাসের বেতন পরিশোধ দেরিতে করলে ফোন ও এসএমএস আসতেই থাকে। তাদের এমন আচরণে সন্দেহ হয়, যদি ফি পরিশোধ করা না যায়, তাহলে তারা পরবর্তী ক্লাসে প্রমোশন দেবে কি না। এ কারণে টিউশন ফি অর্ধেক মওকুফের দাবিও জানিয়েছেন  অভিভাবকরা।

সাউথপয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ হামিদা আলীর দাবি, টিউশন ফিয়ের জন্য কাউকে চাপ দেওয়া হয় না। যেহেতু অনেকে এখনো বাসা থেকে বের হচ্ছেন না, তাই তাদের সুবিধার্থে ব্যাংকের পাশাপাশি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ফি পরিশোধের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, সেটাই জানানো হচ্ছে। পরীক্ষা নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে সরকারি সিদ্ধান্ত পালন করা হবে। এক্ষেত্রে যদি শিক্ষার্থীদের যে কোনোভাবে মূল্যায়ন করা বা অটো প্রমোশনেরও সিদ্ধান্ত আসে, তখন তাই করা হবে।

আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ শাহান আরা বেগম বলেন, সাধারণ সময়েও কোনো কোনো অভিভাবক নিয়মিত তার সন্তানের বেতন পরিশোধ করতে পারে না। এটা তো আমরা সবসময় মেনে নিয়েছি। এখন করোনার কাল চলছে, এই জাতীয় দুর্যোগ সময়ে অভিভাবকদের চাপ দেওয়ার প্রশ্নই আসে না।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ফওজিয়া রেজওয়ান বলেন, কোনো অভিভাবককে চাপ দিয়ে টিউশন ফি আদায় করা হয় না। আমাদের এখানে জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছাত্রীদের বেতন পেন্ডিং আছে। শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধের বিষয়েও সরকারি কোনো সিদ্ধান্ত এলে তা মানা হবে। পরীক্ষা কিংবা অটো প্রমোশনের বিষয়েও সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কাজ করা হবে। ছুটির মধ্যেও ভিকারুননিসার শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।  বলেন, জুম লাইভের মাধ্যমে, ফেসবুক লাইভ এবং ইউটিউবে ক্লাস লেকচার আপলোড করা হয়। সেগুলো শিক্ষার্থীরা দেখছেন। পাশাপাশি প্রতিনিয়ত অনলাইনে ছোট ছোট পরীক্ষাও নেওয়া হয়ে থাকে। অন্য স্কুলগুলোর শিক্ষকরা অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। এনিয়ে অভিভাবকরা বলছেন, সংক্ষিপ্ত সময়ের দায়সারা অনলাইন ক্লাসে কোনো শিক্ষার্থী বুঝতে পারল কি না, তা দেখে না শিক্ষকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, শিক্ষকরা হোয়াটঅ্যাপে কিছু বিষয় সম্পর্কে ক্লাস নিয়ে থাকেন। তারা কিছু বিষয় লিখে পাঠিয়ে দেন। আর আমার ছেলেকে এগুলো বাসায় পড়ানো হয়। একই মাধ্যমে তারা প্রশ্নপত্র পাঠিয়ে থাকে, উত্তর লিখে উল্টো শিক্ষকদের মোবাইলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এভাবেই চলছে ক্লাস-পরীক্ষা। আরেক অভিভাবক বলেন, অনলাইনে ক্লাসে শিক্ষার্থীকেও মনোযোগী হতে দেখি না। কারণ হলো, তাড়াহুড়ো করে ক্লাস শেষ করে দেওয়া হয়, সাউন্ড ও ছবিও ভালো আসে না। ভিন্ন সমস্যায় পড়ার কথা জানিয়েছেন কোনো কোনো অভিভাবক। বলেন, অনলাইনে ক্লাস থেকে মোবাইল ডিভাইসের প্রতি আসক্তি বেড়ে যাচ্ছে। ক্লাস শেষে বাচ্চা মোবাইল ফোন নিয়ে খেলতে চায়।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads