• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯
’জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতির তথ্য গোপন করা যাবে না’

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

আর্টিকেল নাইনটিনের ওয়েবিনারে বক্তারা

’জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতির তথ্য গোপন করা যাবে না’

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২০

জনস্বাস্থ্যের জরুরি পরিস্থিতির এবং প্রকৃত অবস্থার তথ্য মানুষের কাছে লুকানো যাবে না। জরুরী স্বাস্থ্য তথ্য যত বেশি মানুষকে জানানো যাবে, মানুষ তত বেশি সচেতন হবে, নিজেদের প্রস্তুত করতে পারবে।

আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আয়োজিত এক অনলাইন সেমিনারে (ওয়েবিনার) স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও অধিকারকর্মীরা এ কথা বলেন। 

‘করোনা: মহামারি, জনগণ, সরকার ও তথ্য অধিকার’ শীর্ষক এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার সুরক্ষা বিষয়ে কাজ করা আন্তর্জাতিক সংস্থা আর্টিকেল নাইনটিন।

উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় তথ্য অধিকার দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য- ‘তথ্য অধিকার সংকটে হাতিয়ার’ ও স্লোগান: ‘সংকটকালে তথ্য পেলে জনগণের মুক্তি মেলে’ নিধারণ করা হয়েছে।

ওয়েবিনারে বক্তারা বলেন, করোনা প্রতিরোধে দেশব্যাপী জনগণের সচেতনতা এখন অনেকটা কমে গেছে। এর পেছনে বড় কারন সরকারের পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত তথ্যের প্রবাহ কমে যাওয়া। এজন্য দৈনিক বুলেটিন প্রকাশের পাশাপাশি সপ্তাহে অন্তত একদিন প্রশ্নোত্তরের সুযোগ রেখে সংবাদ সম্মেলন করা প্রয়োজন।

আর্টিকেল নাইনটিন বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে আলোচক হিসেবে বক্তব্য দেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ল্যাবরেটরি মেডিসিন এন্ড রেফারেল সেন্টারের পরিচালক ও মাইক্রোবায়োলজির অধ্যাপক ডা.একেএম শামসুজ্জামান; জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন; বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী; বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা টিএমএসএসের উপ-নির্বাহী পরিচালক ও সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. মো. মতিউর রহমান এবং দ্যা কার্টার সেন্টার বাংলাদেশের দলীয় প্রধান সুমনা এস মাহুমদ।

করোনাকালে তথ্য অধিকারের লঙ্ঘন, তথ্য প্রবাহ বাধাগ্রস্থ করা ও স্বচ্ছতার ঘাটতি বিষয়ক তথ্য তুলে ধরেন ওয়েবিনারের সঞ্চালক ফারুখ ফয়সল। তিনি জানান, ২০২০ এর মার্চ থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে দেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্য অধিকার লঙ্ঘনের ১ হাজার ৯২৯ ঘটনা আর্টিকেল নাইনটিন রেকর্ড করেছে। এসব ঘটনায় ভুক্তভোগীর সংখ্যা ২ হাজার ৬১৩ জন। এসময় শুধুমাত্র মতপ্রকাশজনিত অধিকার লঙ্ঘনের ৭৬৮ টি ঘটনা রেকর্ড করা হয়। 

অনুষ্ঠানে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ‘’স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং অন্যান্য সরকারি অফিসের কিছু কর্মকর্তার একটা ধারণা আছে, যে সব তথ্য সবাইকে জানানো যাবে না। কিন্তু ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়া রোগ সম্পর্কিত তথ্য এবং বৈজ্ঞানিক তথ্য গোপন করার কিছু নাই। করোনার প্রথম দিকে নিজে আক্রান্ত হওয়ার ভয়ে সাধারণ জ্বর, সর্দি, কাশি, ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত রোগীদেরকেও অনেক ডাক্তার চিকিৎসা সেবা দেয়নি।’’

তিনি বলেন, ‘মৃত্যুর সংখ্যা কখনও গোপন করা যায় না এবং এ সংক্রান্ত তথ্য গোপন করাও কাম্য নয়। ঝুঁকির তথ্য  সরবরাহ করে জনগণকে এমনভাবে ক্ষমতায়িত করা দরকার, যাতে নিজেদের সুরক্ষার যথাযথ ব্যবস্থা তারা নিজেরাই নিতে পারে। এজন্য সপ্তাহে একদিন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিলেই হয়। করোনা বিষয়ক জাতীয় পরামর্শক কমিটিও এই মত দিয়েছে ।’’ 

সঞ্চালকের বক্তব্যে ফারুখ ফয়সল বলেন, ‘’করোনার অভিজ্ঞতা সবার জন্যই নতুন। করোনা বিষয়ক রিপোর্টিংয়ের শুরুতে সাংবাদিকদের সচেতনতার ঘাটতি ছিল। নিজেদের সুরক্ষিত রেখে কিভাবে মহামারির সময়ে রিপোর্ট করতে হয় তা অনেকের জানা ছিল না। এসব বিষয়ে সাংবাদিকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন।’’ তিনি বলেন, ’’সরকারের মুখাপেক্ষী না হয়ে করোনা বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে এবং প্রতিরোধ গড়তে জনগণকেও উদ্যোগ নিতে হবে ‘’

তথ্য প্রবাহ আর তথ্যের অবাধ প্রবাহ এক নয় মন্তব্য করে অধ্যাপক ডা.একেএম শামসুজ্জামান বলেন, ‘’ আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি (ইন্টারন্যাশনাল হেলথ রেগুলেশনস) অনুযায়ী মহামারিকালে কোন তথ্য প্রকাশ করা যাবে আর কোনটি করা যাবে না সে বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা রয়েছে।। করোনা বিষয়ে জরুরী তথ্য পাওয়া জনগণের অধিকার এবং সরকারও তা প্রকাশে বাধ্য। একইভাবে প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে সচেতন হওয়া ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাও জনগণের দায়িত্ব।’’

বাসদ বরিশাল জেলা কমিটির সদস্য সচিব ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তী বলেন, ‘’ মহামারি মোকাবেলায় সরকারের যে কৌশল, তাতে শুরু থেকেই তথ্য গোপন করার প্রবণতা সন্দেহাতীতভাবে দেখা গেছে। এই সময়টাতে তথ্য ও স্বাধীন মতের প্রকাশকে জনগনের সচেতনতার হাতিয়ার না করে তা জনগণনের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে । তথ্যের অবাধ প্রবাহ না থাকাতেই এসময় করোনা বিষয়ক একাধিক অমানবিক জালিয়াতি ও দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে ।‘’   

তথ্য অধিকার আইন ব্যবহারের ওপর জোর দিয়ে দ্যা কার্টার সেন্টার বাংলাদেশের দলীয় প্রধান সুমনা এস মাহমুদ বলেন, ‘’ মহামারিকালীন পরিস্থিতিতে তথ্য অধিকার আইনের ব্যবহার ও প্রয়োগ দেখা যায়নি। আমাদের দৈনন্দিন জীবন যাপনে এই আইনের  ব্যবহার বিষয়ে অনুশীলন না থাকা এর অন্যতম কারণ।  অথচ এই আইন ব্যবহার করে সকল শ্রেণি পেশার মানুষ প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশের দাবি করতে পারতেন।’’ তিনি বলেন, ‘’করোনা বিষয়ক সঠিক তথ্য পাওয়ার ক্ষেত্রে দেশের নারী জনগোষ্ঠী; বিশেষ করে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীরা বঞ্চিত হচ্ছেন।’’ তথ্য দেওয়ার দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তারা তাদের মূল দায়িত্বের পাশাপাশি অতিরিক্ত দায় হিসেবে তথ্য প্রদানের কাজটি করেন বলে তথ্য অধিকার আইনের সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে না বলে তিনি মনে করেন।

করোনা মোকাবেলার সাম্প্রতিক অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়ে   টিএমএমএসের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডা. মতিউর রহমান বলেন, ‘’শুরুতে অব্যবস্থাপনা, আতঙ্ক ও ভোগান্তি থাকলেও বর্তমানে আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা করোনার চিকিৎসার ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু একটা জিনিস দৃশ্যমান হচ্ছে যে, সিংহভাগ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। করোনার ঝুঁকি বিষয়ক অনেক বৈজ্ঞানিক তথ্য এখনো অজানা। তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কোন বিকল্প নাই।’’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads