• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

মর্ত্যলোকে দেবী দুর্গা

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২২ অক্টোবর ২০২০

দশভুজা দুর্গা দেবী মর্ত্যলোকে নেমেছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বোধনের মধ্য দিয়ে দক্ষিণায়নে নিদ্রিত দেবী দুর্গার নিদ্রা ভাঙাতে বন্দনাপূজা করা হয়। দুর্গাপূজার অন্যতম আচার বোধনের সায়ংকালে মণ্ডপে-মন্দিরে শুরু হয় এই বন্দনাপূজা।

আজ বৃহস্পতিবার ষষ্ঠীতে দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে পূজার আনুষ্ঠানিকতা।

আগামীকাল ২৩ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ২৪ অক্টোবর মহাষ্টমী এবং ২৫ অক্টোবর মহানবমী শেষে ২৬ অক্টোবর বিজয়া দশমী ও প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে শেষ হবে পাঁচ দিনের দুর্গাপূজা।

করোনার এ সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সীমিত পরিসরে ‘আড়ম্বরহীন’ দুর্গাপূজা উদযাপন করবেন দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষরা। করোনার কারণে জনসমাগম এড়াতে এবার মহাষ্টমীতে ঢাকাসহ প্রায় সব জায়গায়ই কুমারীপূজার আয়োজন থাকছে না। থাকছে না আলোকসজ্জা বা বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনও। বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনও হবে শোভাযাত্রা বা মিছিল-সমাবেশ ছাড়াই।

সরকার নির্দেশিত ২৬ দফা ও ৭ দফা নির্দেশনা মেনে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি মিলন কান্তি দত্ত ও সাধারণ সম্পাদক নির্মল কুমার চ্যাটার্জি। তারা জানান, করোনার কারণে এবার দুর্গাপূজায় উৎসবমুখরতা পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ রাখা হবে। তাই এবারের দুর্গোৎসবকে কেবল দুর্গাপূজা হিসেবে উদযাপিত হতে যাচ্ছে।

সনাতন বিশ্বাস ও পঞ্জিকামতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার দোলায় চড়ে স্বর্গালোক থেকে মর্ত্যলোকে আসছেন। যার ফলে মড়ক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগ ও মহামারীর প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাবে। মহামারীর প্রাদুর্ভাবের প্রেক্ষাপটে এবার তাই বিশ্ববাসীর করোনামুক্ত হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে সপ্তমী তিথিতে প্রার্থনা করা হবে। ওইদিন দুপুর ১২টা ১ মিনিটে সব মন্দিরে-মণ্ডপে করোনামুক্তি ও সবার আরোগ্য কামনা করে এই বিশেষ প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হবে।

দেবী মর্ত্যলোক থেকে বিদায় নেবেন গজে বা হাতিতে চড়ে। যার ফল হিসেবে বসুন্ধরা শস্যপূর্ণা হয়ে উঠবে।

গত ১৭ সেপ্টেম্বর দেবী দুর্গার আবাহন বা মহালয়ার মধ্য দিয়ে সূচনা হয়েছিল দেবীপক্ষের। তবে প্রতি বছর দেবীপক্ষ শুরুর সাত দিন পর পাঁচ দিনের দুর্গোৎসবের আনুষ্ঠানিক সূচনা ঘটলেও এবার তা হয়নি। এ বছরের দুর্গাপূজার মাস আশ্বিন বিবেচিত হচ্ছে ‘মল মাস’ বা ‘অশুভ মাস’ হিসেবে। ফলে পূজা শুরু হচ্ছে মহালয়ার ৩৫ দিন পার করে হেমন্ত ঋতুর কার্তিক মাসে। মল মাসে পূজা-অর্চনা কিংবা ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের আয়োজন হয় না বলে জানিয়েছেন হিন্দু শাস্ত্রবিদরা।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ জানিয়েছে, করোনাকালে রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে মন্দির-মণ্ডপের সংখ্যাও কমেছে। এ বছর সারা দেশে ৩০ হাজার ২৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩১ হাজার ৩৯১টি মণ্ডপে। করোনার কারণে এবার এক হাজার ১৮৫টি পূজামণ্ডপ কম হচ্ছে। ঢাকা মহানগরীতে গতবারের ২৩৭টি থেকে ছয়টি কমে ২৩১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন থাকছে।

সন্ধ্যা আরতির পর পূজা মণ্ডপ বন্ধ : করোনাভাইরাস মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণের বাধ্যবাধকতায় শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রতিমা দর্শনের সময় বেঁধে দিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

ষষ্ঠী থেকে দশমী পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরের মধ্যে দুর্গা পূজার মূল আচার-অনুষ্ঠান শেষে সন্ধ্যা আরতির পর পূজা মণ্ডপ বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে দেশের সব মণ্ডপের আয়োজকদের।

আগে জানানো হয়েছিল, সন্ধ্যা আরতির পর রাত ৯টা পর্যন্ত মণ্ডপে দর্শনার্থী প্রবেশের সুযোগ থাকবে। এখন সেই সময় আরো কমিয়ে আনা হলো।

বাংলাদেশের পূজার রীতি অনুযায়ী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীসহ দর্শনার্থীরা রাতেই প্রতিমা দেখতে বের হন। নতুন এ ঘোষণায় এবার সেই উৎসবে ভাটা পড়বে।

এ বছর সারা দেশে ত্রিশ হাজার ২১৩টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা হবে, যা গতবারের তুলনায় এক হাজার ১৮৫টি কম। এছাড়া ঢাকা মহানগরে এবার মণ্ডপের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৩২টি, যা গত বছর ছিল ২৩৮টি।

মহামারীর মধ্যে এ বছর সবাই যেন যার যার অবস্থানে থেকে ঘরে বসেই পূজা অর্চনা ও আরাধনা করতে পারেন, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

ঢাকার মহানগর কেন্দ্রীয় পূজামণ্ডপ থেকে সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী পূজার দিন সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে অঞ্জলির অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেল।

এ ছাড়া মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের ফেসবুক পেইজ থেকেও অঞ্জলির অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচার করবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads