• বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪২৮

জাতীয়

করোনা রোধে মাস্ক ব্যবহারের বিকল্প নেই

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২৯ অক্টোবর ২০২০

করোনাভাইরাসের এখনো কোনো ওষুধ বা প্রতিষেধক নেই। মহামারী শুরু হওয়ার পর প্রায় বছর হতে চললেও এখনো বিজ্ঞানীরা কোনো টিকা আবিষ্কার করতে পারেনি। কবে টিকা আসবে সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট কোনো কিছু কেউ জানাতে পারেনি। করোনার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে একটি বিষয়ের ওপর সব দেশ গুরুত্ব দিয়ে আসেছে- সেটা হলো মাস্ক ব্যবহার। অথচ করোনা সংক্রমণের মারাত্মক ঝুঁকি থাকার পরেও দেশের মানুষের মধ্যে মাস্ক ব্যবহারে চরম অনীহা দেখা যাচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাস্ক ছাড়া সেবা দেওয়া বন্ধের আদেশ দিয়েছে সরকার। এ ছাড়া গণপরিবহন ও জনসমাগম হয় এমন স্থানেও মাস্কের ব্যবহারের বিষয়ে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

করোনা প্রতিরোধে সরকারের এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে দ্রুত এর বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রয়োজনে কঠোর হওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। তদের মতে, মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে সরকার এত দিন চেষ্টা করেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এর দায় জনগণের নয়, সরকারেরও। তাই কঠোরভাবে আইন প্রয়োগের বিকল্প নেই। জনগণকে বোঝাতে হবে,  মহামারী থেকে বাঁচতে মাস্ক মাস্ট। করোনা নিয়ন্ত্রণে মাস্ক ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই।

করোনা সংক্রমণ রোধে মাস্ক পরা, নিয়মিত হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার কথা শুরু থেকে জানিয়ে আসছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। বাংলাদেশেও জনস্বাস্থ্যবিদ থেকে শুরু করে সরকারও এ কথা বলে আসছেন। দেশে করোনা রোগী শনাক্তের পর থেকে তবে গত আট মাসের মধ্যে জুন থেকে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত এসব স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেও তারপর থেকেই এতে অনাগ্রহ দেখা দিয়েছে সর্বসাধারণের মধ্যে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রতিটি মানুষ সুরক্ষিত নয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ সুরক্ষিত নয়। অথচ রাস্তায় বের হলে খুব কম মানুষ পাওয়া যাবে, যারা নিয়ম করে সঠিক নিয়মে মাস্ক পরছেন।

রাজধানীর বাইরের চিত্র আরো ভয়াবহ। কেউই স্বাস্থ্যবিধির তোয়াক্কা করছেন না। সবাই করোনার আগের সময়ের মতো জীবনযাপন করছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সভা, সেমিনার, বাজার, খেলার মাঠ কিংবা সামাজিক অনুষ্ঠান-কোথাও সচেতনতামূলক মাস্কের ব্যবহার নেই। অথচ করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় মারা গেছেন ৪২ জন। জেলা প্রশাসন বলছে, গত সাত মাসে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে এক হাজার ৮২২টি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এক কোটি ৪২ হাজার ৩২০ টাকা জরিমানা আদায় করা হলেও মানুষের মধ্যে কোনো সচেতনতা দেখি না। চারপাশে যাদেরই দেখা যায় কারো মুখেই মাস্ক নেই।

পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা ইউনিয়নের বাসিন্দা এক রিকশাচালক জানান, তিনি মাস্ক কিনেছেন, কিন্তু ব্যবহার করছেন না। বলেন, এখানকার ৯০ ভাগ লোকই মাস্ক ব্যবহার করছেন না। মোরা যেমন-তেমন, অনেক ভদ্দর লোক, মাস্ক ব্যবহার করেন না। পিরোজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বশির আহমেদ জানান, করোনা পরিস্থিতি অনেক দিন বিরাজ করার কারণে মাস্ক ব্যবহারের বিষয়ে মানুষের উদাসীনতা দেখা দিয়েছে।

দিনাজপুর শহরেও মাস্কের ব্যবহার নেই বললেই চলে। আবার কারো মুখে থাকলেও তা রয়েছে থুতনির নিচে। গত দুই মাস আগেও যেখানে মাস্ক পরা না থাকলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হতো, এখন এসবের কিছুই নেই। গোপালগঞ্জে মাস্ক পরলে লোকজন তার দিকে একটু অন্য দৃষ্টিতে তাকায়। সামাজিক দূরত্ব মানা হচ্ছে না কোথাও। মাস্ক পরছে না ১০ ভাগ মানুষও।

কোভিড-১৯-বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, করোনা প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য দেখা যাচ্ছে। মানুষকে সচেতন এবং জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, করোনার সংক্রমণ থেকে রেহাই পেতে চাইলে সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। যার লক্ষণ ও উপসর্গ নেই, তাকে আক্রান্ত বলে ধরছি না। তাই কে আক্রান্ত আর কে আক্রান্ত নন, সেটা না ধরে প্রত্যেকের মাস্ক পরা উচিত এবং সঠিকভাবে পরা উচিত। যদি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কার্যক্রম নিশ্চিত করতে না পারলে  করোনা নিয়ন্ত্রণ আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হবে।  

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা. বেনজির আহমেদ বলেন, সরকারে নো মাস্ক, নো সার্ভিস  সিদ্ধান্ত ভালো। কিন্তু এটা বাস্তবায়িত করতে হবে। মানুষ আতঙ্কে থাকলেই কেবল নিয়ম মানবে। তাই এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগের তৎপরতা বাড়াতে হবে, মনিটরিং-সুপারভিশন করতে হবে। জনসম্পৃক্ততা এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করতে হবে। ঢাকা সিটিতে কেউ মাস্ক ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না- এ ঘোষণা দেওয়া দরকার দুই মেয়রের। এ ছাড়া এর সঙ্গে স্বাস্থ্য ও পুলিশ বিভাগ, রাজনীতিক ও সাংবাদিকদের সম্পৃক্ত করতে হবে। এলাকার কাউন্সিলরদের কাজে লাগতে হবে। আর দুই মেয়রের এমন ঘোষণার পর ঢাকাবাসীর সাধ্য হবে না মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে।

রাজধানীর বাইরে ইউনিয়ন কাউন্সিল, ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও স্থানীয় রাজনীতিকদের কাজে লাগিয়ে পুরো দেশের প্রতিটি গ্রামে এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি পৌরসভা এবং সিটি করপোরেশনের মেয়রকে কাজে লাগাতে হবে শহরের মানুষকে বাধ্য করতে। পাশাপাশি সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ, নির্মূল ও প্রতিরোধ আইন বাস্তবায়নে পুলিশকে ব্যবহার করতে হবে, তাহলেই মানুষ মাস্ক পরবে।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads