• শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪২৮
বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

সংগৃহীত ছবি

জাতীয়

বাড়ছে করোনা ঝুঁকি

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ১৮ নভেম্বর ২০২০

মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে। বিশেষ করে বাইরে বের হলে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতের কথা অনেকটা ভুলেই গেছেন বেশিরভাগ মানুষ। ফলে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার ২৪ ঘণ্টায় ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ২ হাজার ২১২ জন, যা গত দুই মাসের সর্বোচ্চ। তাই সরকারকে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড়া না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে বার বার মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানতে নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে জরিমানাও গুনছেন অনেকে। কিন্তু তা খুব একটা কাজে আসছে না। উল্টো অদ্ভুত সব অজুহাতে অনেকেই মাস্ক পরছেন না। তাই এবার রাজধানীসহ সারা দেশে জোরেশোরে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। চলতি সপ্তাহে মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি মানাতে এই অভিযান চলবে। সোমবার সরকারের এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।

এদিকে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনার ঝুঁকি বাড়ছে। তাই সরকারকে এসব মানাতে কঠোর হতে হবে। একই সঙ্গে সচেতনতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে ন্যূনতম ছাড়া না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

দেশে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ; ইতোমধ্যে তা ৪ লাখ ৩২ হাজার পেরিয়ে গেছে। এ ভাইরাসে এ পর্যন্ত ৬ হাজার ১৯৪ জনের মৃত্যুর তথ্য দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এদিকে বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫ কোটি ৪৩ লাখ ছাড়িয়ে গেছে; মৃতের সংখ্যা পৌঁছে গেছে ১৩ লাখ ১৭ হাজারের ঘরে।

জানা যায়, দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় সাধারণ ছুটি। ধীরে ধীরে বন্ধ করে দেওয়া হয় অফিস-আদালত, আকাশ-নৌ-সড়ক ও রেল চলাচল। দেশজুড়ে শুরু হয় লকডাউন। বেশ কয়েক মাস চলার পর ৩১ মের পর থেকে সীমিত পরিসরে শুরু হয় অফিস-আদালত খুলে দেওয়া। তবে সব ধরনের সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে মাস্ক পরা ও সামাজিক দূরত্ব মেনে নেওয়ার বাধ্যবাধকতার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

শুরুতে অবশ্য এসব নির্দেশনা বেশ কড়াকড়ি পালিত হচ্ছিল। তবে ধীরে ধীরে অনীহা শুরু করেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু সংক্রমণের মাত্রা না কমায় সরকার গত ২১ জুলাই বাসার বাইরে সব জায়গায় সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনা দেয়। তাতে বলা হয়, সব ধরনের কর্মস্থলে, বাজার-বিপণি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, উপাসনালয়, গণপরিবহন, সামাজিক অনুষ্ঠান এবং রাস্তায় পথচারীদেরও মাস্ক পরতে হবে। কারা কীভাবে এই নির্দেশনার বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবেন, সে বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই নির্দেশনায়।

তবে এতেও সচেতনতা আসেনি মানুষের মধ্যে। পরে আবার ১৯ অক্টোবর ঘরের বাইরে সবার মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতে সচেতনামূলক পদক্ষেপের সঙ্গে প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়।

এরপর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক না পরার কারণে অনেককে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। তবে ঢাকার সেইভাবে তেমন তৎপরতা ছিল না। তাই এবার ঢাকায়ও মাস্ক পরা না মানায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নামাতে যাচ্ছে সরকার।

মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোকে নির্দেশ দেওয়ার দেওয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘কোভিড নিয়ে আরেকটু স্ট্রিক্ট ভিউতে যেতে হবে। গতকাল বলে দিয়েছি যাতে ঢাকাতেও বিভিন্ন জায়গায় মোবাইল কোর্ট বা ল-এনফোর্সিং এজেন্সি যাতে আরেকটু স্ট্রং হয়।’

এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে মাস্ক ব্যবহার না করলে জেল-জরিমানা করছে স্থানীয় প্রশাসন। জানা গেছে, গত ৮ নভেম্বর থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে খুলনা জেলায় সোমবার পর্যন্ত অভিযানে ১৭১টি মামলা দায়ের করা হয়। পাশাপাশি ১১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও ৬৯,১৫০ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।

এছাড়া গত বৃহস্পতিবার ঝিনাইদহে মাস্ক ব্যবহার না করায় ৬০ জনকে ৩২ হাজার ৭৫০ টাকা জরিমানা করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। একই দিনে নোয়াখালীতে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় নানা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় জেলা প্রশাসন। ভ্রাম্যমাণ আদালত ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করে, ৬৫টি মামলাও হয়। এদিনে চট্টগ্রাম মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায় ৮৯ জনকে সাড়ে ১৭ হাজার টাকা জরিমানা করে প্রশাসন। এদের মধ্যে ৩০ জনকে ছয় ঘণ্টার আটকাদেশও দেওয়া হয়। গত বুধবার চাঁদপুরে ৮১ জনকে জরিমানা করা হয়।

অন্যদিকে কাজের প্রয়োজনে যারা বাসার বের হচ্ছেন তাদের অনেকেই মাস্ক পরছেন না। মাস্ক নেই কেন এমন প্রশ্ন করতে অনেকেই দিচ্ছেন নানা অজুহাত। তবে কেউ কেউ এসবের কোনো কার্যকারিতা নেই বলে তুচ্ছতাচ্ছিল্যও করছেন।

মূলত মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্য সচেতনতা না মানার কারণে দিন দিন সংক্রমণ বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার গত দুই মাসে সর্বোচ্চ সংক্রমণ আর সর্বোচ্চ মৃতের সংখ্যা ছিল।  এদিন মৃতের সংখ্যা ৩৯ এবং সংক্রমণের সংখ্যা ছিল ২ হাজার ২১২ জনে। আর এ কারণে স্বাস্থ্য বিধি মানার আহ্বান বিশেষজ্ঞদের।

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads