• মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪২৯

জাতীয়

ডিম ও মুরগির দাম বাড়ায় কারা?

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশিত ২০ নভেম্বর ২০২০

হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দাম। ফলে সবজি ও মাছের বাজারে অস্থিরতা শুরু হয়েছে। এমন অস্থিরতার জন্য ব্যবসায়ীরা কখনো ‘সরবরাহ কম’, ‘আজ বৃষ্টি বেশি’, ‘আজ বেশি রোদ’ এসব অজুহাত দাঁড় করান। কিন্তু বাস্তবতা হলো দামের চাবিটা নাড়ায় হাতেগোনা কয়েকজন। গুটিকয়েক পোল্ট্র্রি কোম্পানির কারসাজিতেই হুটহাট এমন দাম চড়ে। সরেজমিন ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোটবড় পোল্ট্র্রি শিল্প গড়ে উঠলেও রাজধানীর অদূরে টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুর এলাকাকে ঘিরে দেশের সবচেয়ে বড় পোল্ট্র্রি শিল্প গড়ে উঠেছে। মূলত এখান থেকেই নিয়ন্ত্রিত হয় ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের বাজার। প্রতিদিন সকালে ব্যবসায়ীরা ফোনে একে অপরের সঙ্গে পরামর্শ করে দর নির্ধারণ করেন। যার প্রভাব পড়ে প্রায় সারা দেশে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের পোল্ট্র্রি ব্যবসায়ীরাও প্রতিদিন সকালে টঙ্গী, বোর্ড বাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুরের বাজারের দর দেখে নিজেদের বিক্রয়মূল্য ঠিক করে। একই সঙ্গে এসব শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত পোল্ট্র্রি খাদ্য ও ওষুধ আমদানিকারক তিন-চারটি কোম্পানিও এর সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গেছে।

খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, এসব কোম্পানি যে দামে ফিড ও ওষুধ আমদানি করে তার তুলনায় অনেক বেশি দামে বাজারে ছাড়ে। সারা দেশের চারটি কোম্পানি এসব পণ্য আমদানি করে বলে সিন্ডিকেট করা খুব সহজ। জানা গেছে, গাজীপুর এলাকায় সোনার বাংলা পোল্ট্র্রি খামারের মালিক ইদ্রিস আলী, বোর্ডবাজার এলাকায় সাবিহা-সাহানা পোল্ট্রি খামারের মালিক মকবুল হোসেন ও জয়দেবপুরের আকাশ পোল্ট্রির মালিক গোলাম সরোয়ার; এই তিনজনই মূলত রাজধানীর পোল্ট্রি বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে পাইকারি ব্যবসায়ীদের অভিযোগ। এই তিনজন যোগসাজশ করে প্রতিদিনের ব্রয়লার মুরগি ও ডিমের দর নির্ধারণ করেন। টঙ্গী, বোর্ডবাজার, জয়দেবপুর ও গাজীপুর থেকে পাইকারি ব্যবসায়ীরা মুরগি ও ডিম রাজধানীর গুলিস্তানে জড়ো করে। সেখান থেকে ভোর ৬টার আগেই রাজধানীর বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ছড়িয়ে পড়ে।

গুলিস্তানের পোল্ট্রি ব্যবসায়ী তোশারফ আলী বলেন, গাজীপুর, বোর্ডবাজার ও জয়দেবপুর থেকেই ডিম-মুরগির দর ঠিক করা হয়। দাম বাড়ার জন্য বোর্ডবাজার, গাজীপুর ও জয়দেবপুরের ব্যবসায়ীরা দায়ী। তাদের নির্ধারিত দরের বাইরে কেনার সুযোগ নাই। তাদের কাছ থেকে আমরা যে দামে মাল কিনি, সেই দামের সঙ্গে পরিবহনসহ অন্যসব খরচ বাদ দিয়ে কেজিতে সর্বোচ্চ ৩ টাকা মুনাফা করি। অনেক সময় মুনাফা আরো কম হয়। কারণ অতদূর থেকে আনতে গিয়ে অনেক মুরগি মারা যায়। ডিমও ভেঙে যায়।

সোনার বাংলা পোল্ট্রি খামারের মালিক ইদ্রিস আলী বলেন, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াই এমন অভিযোগ ঠিক নয়। আমরা ব্যবসায়ীরা আলাপ-আলোচনা করে দর ঠিক করি। কারণ, মুরগির বাচ্চা, মুরগির খাবার ও ওষুধের দাম, শ্রমিকের বেতনসহ সব খরচ মিটিয়ে আমাদেরও তো বেঁচে থাকতে হবে। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে মুনাফার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই পরামর্শ করি। এটাকে সিন্ডিকেট বলা ঠিক নয়।

তিনি বলেন, দেশের সর্বত্র এখন পোল্ট্রি শিল্প গড়ে উঠছে। প্রতিযোগিতা করেই টিকে থাকতে হচ্ছে। এমন অবস্থায় তিন-চারজন মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণের সুযোগ নেই। কাজেই এ অভিযোগ মনগড়া। ইদ্রিস আলী আরো বলেন, ‘বিভিন্ন দুর্যোগে খামারে মুরগি মরে যায়, অসুখে মরে, ঠান্ডা বেশি পড়লেও মরে। নানা জটিলতায় মুরগি ঠিক সময়ে ডিম দেয় না। এসব কারণে অনেক খামারি ব্যবসাও গুটিয়ে নিয়েছেন। তাদের খবর কেউ রাখে না।’

এদিকে পোল্ট্রি খামারিদের অভিযোগ, পোল্ট্রি শিল্প বর্তমানে অনিশ্চয়তার বেড়াজালে বন্দি। এর জন্য বাচ্চা ও খাদ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দায়ী। তাদের একচেটিয়া ব্যবসার কারণে ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারিয়ে নিঃস্ব হওয়ার পথে। তাদের অভিযোগ, কাঁচামাল আমদানিকারক ও সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পোল্ট্রি ফিডের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে। এতে পোল্ট্রি পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে বাজার অস্থির হয়।

সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিত সাহা বলেন, আমাদের পোল্ট্রি ফিডের ব্যবসা মুখ্য নয়। পোল্ট্রি ফিডের সঙ্গে সম্পৃক্ত পণ্যগুলো আমদানি নির্ভর। এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজারে আমদানি মূল্য বাড়লে আমাদের তো কিছুই করার থাকে না।

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘দেশের পোল্ট্রি একটি উদীয়মান শিল্প। এ কারণেই সরকার এ শিল্পের প্রসারে নানা সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছে। এ শিল্পে জড়িতরা এসব সুবিধা নিয়ে ভালো মুনাফা করছেন। এ শিল্পের ক্ষতি হয় এমন কিছু কাউকেই করতে দেওয়া হবে না। সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সজাগ।’

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads